টেলিযোগাযোগ খাতে সর্বোচ্চ কর বাংলাদেশে
ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রয়াসের প্রতিবন্ধকতার বিবেচনায় সরকারকে টেলিযোগাযোগ খাতে প্রস্তাবিত বাজেট পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়েছে অ্যাসোসিয়েশন অব মোবাইল টেলিকমিউনিকেশন অপারেটরস অব বাংলাদেশ (অ্যামটব)। অপারেটরদের সংগঠনটি বলছে, প্রস্তাবিত নতুন শুল্ক নীতিমালা বর্তমান ও নতুন গ্রাহকদের ওপর নতুন করে অতিরিক্ত খরচের বোঝা চাপাবে। এতে ‘রাজহাঁসের’ মরণদশা হবে।
এ বিষয়ে অ্যামটব মহাসচিব এসএম ফরহাদ বলেন, প্রস্তাবিত নতুন শুল্ক নীতিমালা বর্তমান ও নতুন গ্রাহকদের ওপর নতুন করে অতিরিক্ত খরচের বোঝা বাড়াবে।
তিনি বলেন, ‘মোবাইল ইন্ডাস্ট্রি সরকারের জন্য রাজহাঁস, এটি সোনার ডিম দেয়। বাজেট বক্তৃতায় রাজহাঁস থেকে পালক তোলার কথা বলা হয়েছে, রাজহাঁস যেন ব্যথা না পায়। এ খাত ৬ দশমিক ২ শতাংশ জিডিপিতে অবদান রাখছে। সরকার যে ঘোষণা দিয়েছে পালক তুলে শুধু ব্যথা দেওয়া নয়, মরণদশা হয়েছে। এই রাজহাঁসকে সরকার যেন কোলে করে রাখে, যেন বেশি রেভিনিউ দিতে পারে।’ অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বাজেট বক্তৃতায় কর আদায়ের প্রসঙ্গে ফ্রান্সের রাজা চতুর্দশ লুইয়ের অর্থমন্ত্রী জ্যঁ ব্যাপতিস্তা কোলবার্টের একটি উক্তির কথা স্মরণ করিয়ে বলেছিলেন,‘রাজহাঁস থেকে পালক ওঠাও যতটা সম্ভব ততটা। তবে সাবধান! রাজহাঁসটি যেন কোনোভাবেই ব্যথা না পায়।’
সংসদে ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবের চার দিন পর গতকাল মঙ্গলবার সোনারগাঁও হোটেলে বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলন করে অ্যামটব।
যে বাজেট তিনি প্রস্তাব করেছেন, তাতে মোবাইল সিম বা রিম কার্ড ব্যবহারের মাধ্যমে সেবার বিপরীতে সম্পূরক শুল্ক ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে।
এ ছাড়া সিমের ওপর কর দ্বিগুণ বাড়িয়ে ২০০ টাকা এবং মোবাইল কোম্পানির আয়ের ওপর সর্বনিম্ন শুল্ক ০.৭৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া স্মার্টফোনের আমদানি শুল্কও বাড়ানোর প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী।
ফরহাদ বলেন, ‘দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি, মোট আয়ের ওপর ন্যূনতম কর ২ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। অবিবেচনাপ্রসূত হারে কর হার বৃদ্ধি ও নতুন করে সম্পূরক শুল্ক আরোপ ফোর-জি নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ ও ফাইভ-জি নেটওয়ার্ক স্থাপনের পুরো প্রক্রিয়াটিকেই হুমকির মুখে ফেলবে।
আয়ের সঞ্চিতির ওপর আরোপিত ১৫ শতাংশ হারে করারোপ করায় তা পুঁজিবাজারে নিবন্ধিত বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান ও স্থানীয় করপোরেট ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে মনে করেন অ্যামটব মহাসচিব।
তিনি বলেন, নতুন করে আরোপিত এই করের বোঝা কমিয়ে আনতে প্রতিষ্ঠানগুলো ন্যূনতম রিজার্ভে অতিরিক্ত লভ্যাংশ প্রদানে বাধ্য করবে, যা ভবিষ্যত বিনিয়োগ কমিয়ে আনবে।
‘আয়ের সঞ্চিতির ওপর করারোপ মূলত প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর দ্বৈত করারোপ করবে। যেহেতু ইতোমধ্যেই নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানগুলো ৪২ দশমিক ৫ শতাংশ হারে করপোরেট কর দিয়ে আসছে, নতুন করে আরোপিত করের ফলে প্রতিষ্ঠানসমূহকে অতিরিক্ত ১৫ শতাংশ কর প্রদান করতে হবে।’
সরকার দেশের অর্থনীতি ও ডিজিটাল বাংলাদেশের অবকাঠামোর মেরুদণ্ড হিসেবে বিবেচিত টেলিযোগাযোগ খাতকে সহায়তা করার স্থলে বরং প্রস্তাবিত কর ও শুল্ক কাঠামো আরোপের মাধ্যমে ‘পঙ্গু’ করে দেবে বলে মন্তব্য করেন ফরহাদ।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) টেলিযোগাযোগ খাতের অবদান ৬ দশমিক ২ শতাংশের অধিক হলেও এ বিষয়টি সম্পূর্ণ রূপে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে প্রস্তাবিত বাজেটে। বর্তমানে টেলিযোগাযোগ খাতে পুরো বিশ্বের মধ্যে বাংলাদেশে সর্বোচ্চ কর-ভারের বিষয়টি এখন সর্বজনবিদিত।
মোবাইল সেবা খাতে ৫ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপের ফলে তা ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণকেই বাধাগ্রস্ত করবে। এ ছাড়াও নতুন সিম কার্ড ও প্রতিস্থাপনের ওপর আরোপিত শুল্ক ১০০ টাকা থেকে ২০০ টাকা বৃদ্ধি করায় নতুন গ্রাহকদের খরচের বোঝা দ্বিগুণ হবে।
দেশের টেলিযোগাযোগ খাতকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সরকার প্রস্তাবিত বাজেট পুনর্বিবেচনা করবে বলে আশাবাদী মোবাইল অপারেটরদের সংগঠন অ্যামটব।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে রবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মাহতাব উদ্দিন আহমেদ বলেন, আমাদের কোনো দাবি মানা হয় না। আরো বেশি ট্যাক্স ইমপোজ করা হয়েছে। অনেকে বলে, প্রফিট করি, কিন্তু দেখাই না। তবে কোনো অডিটে বের হয়নি যে আমরা টাকা পাচার করছি। আমাদের পাশে কেউ নেই কথা বলার, একমাত্র প্রেস ছাড়া।
মাহতাব বলেন, রবির মার্জারের পর অনেক লস দিতে হয়েছে, এবার বছরের শুরুতে প্রফিট করা শুরু হয়েছিল, এভাবে চলতে থাকলে রবি আর প্রফিটে যেতে পারবে না, লসে ঠেলে দেব। মোবাইল কোম্পানির আয়ের ওপর সর্বনিম্ন শুল্ক শূন্য দশমিক ৭৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২ শতাংশ করার প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, লস করার পর আমার ২ শতাংশ দিলে ক্যাপিটাল থেকে দিতে হবে। এটি খুব আনফেয়ার কাজ হচ্ছে। যারা প্রফিট করছে না তাদের ওপর প্রভাব বেশি পড়বে । বাংলালিংকের চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স অফিসার তাইমুর রহমান বলেন, যে ট্যাক্স এসেছে, ছোট অপারেটর আরো বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে, সিমের ওপর যে অতিরিক্ত ট্যাক্স বসানো হয়েছে বড় প্রভাব ফেলবে।’
গ্রামীণফোনের হেড অব রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স সাদাত হোসেন, টেলিটকের উপ-মহাব্যবস্থাক সাইফুল আলমও সংবাদ সম্মেলনে ছিলেন।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন