ট্রাম্পের শুভেচ্ছা, কে এই মোহাম্মদ?

সৌদি আরবের রাজতন্ত্রের নতুন উত্তরাধিকার নির্বাচিত হওয়ায় মোহাম্মদ বিন সালমানকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশের প্রেসিডেন্ট ফোন করে বুধবার মোহাম্মদ বিন সালমানকে শুভেচ্ছা জানান।

পরে হোয়াইট হাউস এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান নিরাপত্তা, স্থিতিশীলতা ও মধ্যপ্রাচ্যের অগ্রগতির বিষয়ে পরস্পরকে সহায়তার বিষয়ে অঙ্গিকারাবদ্ধ।

এতে বলা হয়, দুই নেতার আলাপনে সন্ত্রাসী ও জঙ্গিদের সব ধরনের সহায়তা বন্ধ এবং কাতার ইস্যু ওঠে এসেছে।

এছাড়া ফিলিস্তিন ও ইসরাইলের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার বিষয়েও ট্রাম্প ও মোহাম্মদ বিন সালমান আলোচনা করেছেন।

এর আগে বুধবার সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ এক ডিক্রির মাধ্যমে ভাতিজা মোহাম্মেদ বিন নায়েফকে সরিয়ে নিজের উত্তরাধিকার হিসেবে ছেলে মোহাম্মদ বিন সালমানকে নতুন ক্রাউন প্রিন্স ঘোষণা করেন।

দ্য সৌদি প্রেস এজেন্সি জানায়, সৌদি আরবের সাকসেশন কমিটির ৪৩ সদস্যের মধ্যে ৩১ জন মোহাম্মদ বিন সালমানকে ক্রাউন প্রিন্স করার পক্ষে সমর্থন দিয়েছেন। মঙ্গলবার মধ্যরাতে মক্কার আল সাফা প্রাসাদে সাকসেশন কমিটির ওই বৈঠক হয়।

কে এই মোহাম্মদ বিন সালমান
২০১৫ সালে সালমান বিন আবদুল আজিজ সৌদি বাদশাহর সিংহাসনে বসেন। এর আগে দেশটির বাইরে খুব কম লোকই যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের নাম শুনেছিল। তবে খুব দ্রুত ৩১ বছর বয়সী প্রিন্স বিন সালমান বিশ্বের শীর্ষ তেল রপ্তানিকারক দেশটির সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তিতে পরিণত হয়েছেন।

মোহাম্মদ বিন সালমানের জন্ম ১৯৮৫ সালের ৩১ আগস্ট। তার মা ফাহদাহ বিনতে ফালাহ বিন সুলতান তৎকালীন প্রিন্স সালমান বিন আবদুল আজিজ আল সৌদের তৃতীয় স্ত্রী।

মোহাম্মদ বিন সালমানের একজন স্ত্রী রয়েছেন। তিনি দুই কন্যা ও দুই পুত্রের জনক।

রাজধানী রিয়াদের কিং সৌদ ইউনিভার্সিটি থেকে আইন বিষয়ে স্নাতক হওয়ার পর বিন সালমান সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন। তার বাবা যখন রিয়াদের গভর্নর ছিলেন, তখন বিন সালমান গভর্নরের বিশেষ পরামর্শক নিযুক্ত হন।

২০১৩ সালে তিনি মন্ত্রিপদমর্যাদায় একটি দায়িত্ব পান। ২০১৫ সালে বাদশাহ আবদুল্লাহ বিন আবদুল আজিজ শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন এবং সালমান ৭৯ বছর বয়সে সিংহাসনে বসেন।

তিনি তাৎক্ষণিক মোহাম্মদ বিন সালমানকে প্রতিরক্ষামন্ত্রী নিয়োগ দিয়ে পর্যবেক্ষকদের চমকে দেন। প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে মোহাম্মদ প্রথম যে কাজটি করেছিলেন, সেটা ছিল ২০১৫ সালের মার্চে ইয়েমেনে সামরিক অভিযানের সূচনা।

হুথি বিদ্রোহীদের উত্থানে ইয়েমেনি প্রেসিডেন্ট মনসুর হাদি নির্বাসনে যেতে বাধ্য হলে আরব দেশগুলো সৌদি নেতৃত্বে ইয়েমেনে অভিযানের প্রতি সমর্থন দেয়।

তবে এ অভিযানে গত দুই বছরে অগ্রগতি সীমিত। সৌদি ও তার মিত্ররা ইয়েমেনে মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে বলেও অভিযোগ আছে। পাশাপাশি আরব বিশ্বের দরিদ্রতম দেশ ইয়েমেন এ যুদ্ধের কারণেই মানবিক সংকটে পড়েছে।

এরপর ২০১৫ সালের এপ্রিলে বাদশাহ সালমান নিজ পুত্রকে ডেপুটি ক্রাউন প্রিন্স বানিয়ে দেন। পাশাপাশি কাউন্সিল অব ইকোনমিক অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অ্যাফেয়ার্সের প্রধান এবং দ্বিতীয় উপপ্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বও বিন সালমান পেয়ে যান।

তখন থেকে তিনি তেলনির্ভর দেশটিতে ব্যাপক আর্থ-সামাজিক পরিবর্তনের পরিকল্পনা (ভিশন ২০৩০) বাস্তবায়নে তৎপরতা শুরু করেন। তিনি ঘোষণা করেন, ‘আমরা তেল ছাড়াই চলতে পারব, ২০২০ সালের মধ্যেই এমনটা নিশ্চিত হবে।’

প্রতাপ ক্ষমতাধর মোহাম্মদ বিন সালমান প্রতিদ্বন্দ্বী ইরানের সঙ্গে কোনো ধরনের আলোচনার সম্ভাবনা গত মাসেই বাতিল করে দেন। সিরিয়া ও ইয়েমেনে যে লড়াই চলছে, তাতে দু’দেশ দু’পক্ষে অবস্থান নিয়েছে।

সৌদি আরবে এক শিয়া নেতার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হবার পর দু’দেশের সম্পর্ক আরো অবনতি হয়েছে।

ইরানের রাষ্ট্রীয় মাধ্যম ওই শিয়া নেতার মৃত্যুদণ্ডের ঘটনাকে ‘এক অভ্যুত্থান’ হিসেবে বর্ণনা করে বলেছিল সৌদি আরবকে এ ঘটনার জন্য কড়া মূল্য দিতে হবে।

সবমিলে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল রপ্তানিকারক দেশ সৌদি আরবের রাজনীতিতে মোহাম্মদ বিন সালমানের দ্রুত উত্থান বেশ চমক সৃষ্টি করেছে।

তাকে ক্রাউন প্রিন্স ঘোষণা করার পর সৌদি বাদশাহ নতুন যুবরাজের প্রতি আনুগত্য প্রকাশের জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানান।

মোহাম্মদ বিন নায়েফ পদ হারানোর পরেও নতুন যুবরাজের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেছেন বলে দাবি করছে রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম।

বাদশাহর প্রতিনিধি হিসেবে মোহাম্মদ বিন সালমান বিদেশ সফরও করেছেন। ইতোমধ্যে বেইজিং, মস্কো এবং ওয়াশিংটনে গেছেন। সর্বশেষ যুক্তরাষ্ট্র সফরে তিনি গত মার্চে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।

তথ্য সূত্র: আল আরাবিয়্যা, আল জাজিরা, বিবিসি, রয়টার্স