ট্রাম্প-পুতিনের বৈঠকের দিকে তাকিয়ে বিশ্ব
বিশ্বের চির বৈরী দুই দেশ রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট প্রথমবারের মতো পূর্ণাঙ্গ বৈঠকে বসছেন আজ। ফিনল্যান্ডের রাজধানী হেলসিঙ্কিতে হাইপ্রোফাইল এই বৈঠক উপলক্ষে নেয়া হয়েছে কড়া নিরাপত্তা। দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ও দুই নেতার আলোচনার সম্ভাব্য বিষয়গুলো নিয়ে চলছে জল্পনা কল্পনা।
যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকজন শীর্ষ রাজনীতিকের বৈঠক বাতিলের দাবি উপেক্ষা করে এ বৈঠকে বসার সিদ্ধান্তে অটল রয়েছেন ট্রাম্প। সম্প্রতি সাবেক এফবিআই পরিচালক রবার্ট মুলারের তদন্ত রিপোর্টে গত মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করার দায়ে ১২ রুশ গোয়েন্দার নাম আসায় এই বৈঠক বাতিলের আহ্বান জানান ওই রাজনীতিকরা। তবে বৈঠক হবে বলে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন ট্রাম্প।
আর মার্কিন ওই শীর্ষ রাজনীতিকদের এমন দাবির বিয়ষে রাশিয়া বলছে, শীর্ষ বৈঠকের আগে পরিবেশ বিষিয়ে তুলতেই ষড়যন্ত্র-তত্ব সামনে আনা হচ্ছে। খবর বিবিসির।
তবে সব বাধা পেরিয়ে বৈঠকে বসলেও তা কতটা সফল হবে সেটি এখনও বলা যাচ্ছে না। এছাড়া এ বৈঠকে খুব বড় কিছু নাও হতে পারে। দুই নেতা তাদের প্রধান বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করতে পারেন। যেসব বিষয় তাদের আলোচনায় থাকতে পারে তার মধ্যে কয়েকটি হলো-
বর্তমান দুই দেশের মধ্যে অস্ত্র উৎপাদন ও রপ্তানির যে প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে এবং এ বিষয়ে দুই দেশের দ্বন্দ্ব আবারও বাড়ছে সে বিষয়ে নিয়ে কথা হতে পারে দুই প্রেসিডেন্টের। কারণ, অস্ত্রের বিষয়ে পুতিন বলেছিলেন, পশ্চিমা দেশগুলোকে নতুন বাস্তবতা বিবেচনায় নিতে হবে।
ইউক্রেনের কাছ থেকে ২০১৪ সালে ক্রিমিয়া দখল করে রাশিয়া। এ নিয়ে রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র। দুই দেশের এমন টানাপোড়েনের বিষয়টিও থাকতে পারে আলোচনার টেবিলে।
রাশিয়া যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বিতর্কিত এবং সাম্প্রতিক আলোচনার প্রধান ইস্যু হলো ২০১৬ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রুশ হস্তক্ষেপের অভিযোগ। যুক্তরাষ্ট্রের সর্বশেষ তদন্তে রুশ গোয়েন্দাদের নাম এসেছে। তবে এ বিষয়টি বরাবরই অস্বীকার করে আসছে রাশিয়া। এ বিষয়টি যে আজকের আলোচনায় থাকবে সে বিষয়টি জানিয়ে ট্রাম্প বলেছেন, মার্কিন নির্বাচনে নাক গলানো নিয়ে তিনি সরাসরি পুতিনকে প্রশ্ন করবেন। তার কথা, এটি নিয়ে যা হচ্ছে তা ইতিহাসের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক ‘উইচ হান্ট’।
সিরিয়ার ইরানের উপস্থিতি নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে মার্কিন মিত্র ইসরায়েল। রাশিয়ার কাছে সম্প্রতি এ আপত্তির কথাও জানিয়েছে ইসরায়েল। সেখানে রাশিয়া ও আসাদের উপস্থিতিতে সম্মতি দিলেও ইরানকে সিরিয়া থেকে ভাগাতে তৎপর নেতানিয়াহু। তাই বিষয়টি নিয়ে হয়ত পুতিনের সঙ্গে আলোচনা হতে পারে ট্রাম্পের।
এই আলোচনার টেবিলে যে বিষয়গুলো গুরুত্ব পেতে পারে তার মধ্যে অন্যতম হলো দুই দেশের কূটনৈতিক নিষেধাজ্ঞা। মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রুশ হস্তক্ষেপ এবং ব্রিটেনে সাবেক রুশ গুপ্তচর সের্গেই স্ক্রিপাল ও তার কন্যাকে নার্ভ এজেন্ট গ্যাস প্রয়োগের অভিযোগে একাধিক রুশ কূটনীতিককে বহিষ্কার করার বিষয়টি গুরুত্ব পেতে পারে।
এ ছাড়াও অস্ত্রনিরোধ, ন্যাটো বিষয়ক আলোচনা, ইরানের পারমাণবিক ইস্যু, উত্তর কোরিয়া ইস্যু ও ট্রাম্প প্রশাসনের সাম্প্রতিক শুল্কারোপের প্রভাবে সৃষ্ট বাণিজ্য যুদ্ধ নিয়েও আলোচনা হতে পারে দুই বিশ্বনেতার।
বিশ্বের বর্তমান পরিস্থিতিতে ট্রাম্প-পুতিনের বৈঠক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ঐতিহাসিক এ বৈঠককে সামনে রেখে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থাসহ কাজে যোগ দেয়ার জন্য ছুটিতে থাকা পুলিশ সদস্য ও কর্মকর্তাদের দায়িত্ব পালনের জন্য ডেকেছে ফিনল্যান্ড।
এর আগে ১৯৯৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট বরিস ইয়েলিৎসিনের মধ্যে এ ধরনের বৈঠক হয়েছিল।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন