ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জের ইউএনও গেলেন পরিদর্শনে, নথির এতিমরা মিলল না বাস্তবে!

রোববারের রাত। সাধারণত এমন রাতে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা পরিবার নিয়ে সময় কাটান, বিশ্রাম নেন। কিন্তু সে রাতে ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রকিবুল হাসান এবং উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা এসএম রফিকুল ইসলাম বেরিয়েছিলেন ‘অসাধারণ কিছু’ দেখতে।
গন্তব্য পীরগঞ্জ উপজেলার হাজীপুর ইউনিয়নের গোগর পাটুয়াপাড়া হাফিজিয়া এতিমখানা। যেই না তারা পৌঁছালেন, এরপর এতিমখানার চারপাশ ঘুরে দেখা গেল সেখানে নিবাসী হিসেবে আছেন মাত্র ২৬ জন শিশু।
অথচ দাপ্তরিক নথি বলছে, এতিমখানাটির নিবন্ধিত সংখ্যা ১৭০! আর ৬২ জন শিশুর নামে নিয়মিত উত্তোলন করা হচ্ছে সরকারি ভাতা মাসে প্রায় ১ লাখ ২৪ হাজার টাকা। প্রশ্ন জাগে বাকি এতিমরা কোথায়? অথবা আদৌ কি তাদের অস্তিত্ব আছে?
সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, একজন এতিম বা অসহায় শিশু ক্যাপিটেশন সুবিধা পেতে হলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে। দ্বিগুণসংখ্যক নিবাসী থাকতে হয়। অর্থাৎ ৬২ জনকে ভাতা দিলে কমপক্ষে ১২৪ জনের উপস্থিতি থাকতে হবে। কিন্তু পীরগঞ্জের সেই এতিমখানায় বাস্তবতা ছিল পুরোই উল্টো।
আরও ভয়াবহ সত্য হলো উপস্থিত ২৬ জনের মধ্যেও অনেকে এতিম নন! শুধু নামের জন্যই তাদের ‘ভুয়া এতিম’ বানানো হয়েছে।
সমাজসেবা কর্মকর্তা এসএম রফিকুল ইসলাম বললেন, “আমাদের কাছে আগেই অভিযোগ ছিল, সরেজমিনে এসে তার সত্যতা পেয়েছি। ইউএনও স্যার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলেছেন।”
এতিমখানার পেছনে যার ছায়া সবচেয়ে বেশি তিনি কর্নেল (অব.) সোহেল রানা। এলাকায় তিনি খুব একটা থাকেন না। ঢাকায়-চট্টগ্রামে তার যাতায়াত। রাজনীতিক প্রভাবশালী নেতাদের সঙ্গে রয়েছে তার সখ্যতা।প্রশাসনের অভিযান নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে বিষয়টিকে ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ আখ্যা দেন সোহেল রানা।
পরে অবশ্য বিতর্কের মুখে পোস্টটি সরিয়ে ফেলেন। ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “মাদ্রাসায় কিছু অনিয়ম আছে, তা সংশোধনের চেষ্টা করছি।”
এতিমখানার মুহতামিম রবিউল ইসলামের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে সাংবাদিক পরিচয় শুনেই তিনি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেন, পরে মোবাইলও বন্ধ করে দেন। প্রতিষ্ঠানটির সভাপতি মঈনুল হোসেন সোহাগ বলেন, “কিছু সমস্যা আছে, তবে একটু সহানুভূতির দৃষ্টিতে দেখলে ভালো হয়।”
কিন্তু প্রশ্ন হলো সহানুভূতি কার জন্য? ভুয়া এতিমদের জন্য, না সত্যিকারের সেই অসহায় শিশুদের জন্য, যারা সরকারি সুবিধা থেকে বঞ্চিত? রোববার রাতের সেই পরিদর্শন শুধু একটি অনিয়মকে উন্মোচিত করেনি, সামনে এনেছে গোটা ব্যবস্থার গলদকে।
একটি এতিমখানায় যদি এত বড় অনিয়ম হয়, তাহলে আরও কোথায় কোথায় চলছে এমন দুর্নীতি—তা অনুমান করাই কষ্টকর। এখন দেখার বিষয়, প্রশাসনের এই পদক্ষেপ আদৌ কতটা প্রভাব ফেলবে, আর সেই প্রভাব কতটা পৌঁছাবে ‘সত্যিকারের’ এতিমদের কাছে।

এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন