ঠাকুরগাঁওয়ে হাসপাতালের পুরাতন ভবনের ছাদে ঔষুধী বাগান, উপকৃত হচ্ছেন রোগীরা
ঠাকুরগাঁওয়ে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ছাদ কৃষি বাগান। দেশের অন্যান্য জেলার মতো এখন ঠাকুরগাঁওয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে ছাদ কৃষি ও বাগান। তেমনিভাবে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট ঠাকুরগাঁও জেনারেল হাসপাতালের ছাদে শোভা পেয়েছে বিভিন্ন প্রকার ফলজ ও ভেষজের শতাধিক গাছ। আর এসব গাছ সম্পর্কে জানতে ও দেখতে ভীড় করছেন চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও স্বজনরা। এতে ঔষুধি গাছ সম্পর্কে জেনে উপকৃত হচ্ছেন তারা।
সরজমিনে দেখা যায়, হাসপাতালটির পুরাতন ভবনে আনুমানিক আড়াই হাজার ফিটের ছাদ জুড়ে অ্যালোভেরা, পাথরকুচি, উলটকম্বল, অন্তমূল, মিল্কবুশ, নিশিন্দা সহ প্রায় ৪০ প্রজাতির ভেষজ ও আপেল, কমলা, মাল্টা, পেয়ারা, আম, জাম, আমরাসহ ফলজ মিলে মোট শতাধিক গাছ লাগানো হয়েছে। ফলের গাছ গুলো রোপনের বছর হতে না হতেই কিছু কিছু গাছে ফলও ধরেছে।
বর্হি বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও স্বজনরা বলছেন, এই বাগান থেকে ঔষুধি গাছ সম্পর্কে জেনে ও চিকিৎসা নিয়ে অনেকে সুস্থ্যও হয়েছেন। এতে ফলজ ও ভেষজ বাগান করতে উদ্ভুদ্ধও হচ্ছেন তারা।
বেবি নামে ত্বকের চিকিৎসা নিতে আসা এক রোগী বলেন, ‘আমার মুখের ত্বকে অনেক দাগ ও ব্রণ ছিল। তাই ঠাকুরগাঁও জেনারেল হাসপাতালে আসলে এখানকার চিকিৎসক আমাকে ছাদে করা প্রদর্শনী বাগানটি দেখান ও অ্যালোভেরা গাছের রস ব্যবহার করতে বলেন। অ্যালোভেরার রস ব্যবহার করার ফলে এখন আমার মুখের ত্বকের দাগ চলে গেছে।
পীরগঞ্জ উপজেলার কালিগঞ্জ বাজার এলাকার যুবক দীলিপ কুমার রায় বলেন, ‘আমি দীর্ঘদিন ধরে প্রস্রাবের জ্বালাপোড়ার সমস্যায় ভুগছি। তাই হাসপাতালে এলাম। এখানকার চিকিৎসক আমাকে ঔষুধ দিয়েছে। পাশাপাশি ছাদ বাগানে পরিদর্শন করিয়ে পাথরকুচি গাছ দেখিয়ে দেয় ও ওই গাছের রস খেতে বলেন।
একই উপজেলার রাহুল রায় চিকিৎসা নিতে এসে ও বাগান দেখে বলেন, ‘আমার প্রচুর সর্দিকাশি ছিল। এখানকার চিকিৎসক আমাকে ঔষুধ দিয়েছিল পাশাপাশি বাশকপাতার রস খেতে বলেছিল। এই গাছের রস ও ঔষুধ খেয়ে আমি এখন সুস্থ। তবে এই বাগানটি দেখে আমি অনুপ্রাণিত হয়েছি। সম্ভব হলে আমিও বাড়িতে এমন ঔষুধের গাছ রোপন করবো।
শহরের পুলিশলাইনস এলাকার শরিফুল ইসলামের মেয়ের সন্তান প্রসব করেছে তাই তিনি হাসপাতালে আসেন। তিনি বলেন, ‘হাসপাতালের ছাদে দেখলাম বিভিন্ন ঔষুধের ও ফলের গাছ। বাগানটি দেখে খুব ভালো লাগলো। আমার মতো অনেক রোগীর স্বজনদেরও দেখলাম এই বাগান পরিদর্শন করতে। এখানে যে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ রোপন করা হয়েছে। এগুলোর ঔষুধিগুণ সম্পর্কে জানতে পারছে অনেকে। এভাবে অন্যান্যরাও যদি বাগান করে তাহলে গাছ থেকে একদিকে ঔষুধ পাওয়া যাবে অন্যদিকে ফলের গাছ রোপনের করলে ভিটামিনের চাহিদাও পূরণ হবে।
সদর উপজেলার রুহিয়ার অরুপ কুমার সেন বলেন, ‘হাসপাতালের ছাদে এমন বাগান করায় আমি কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানাই। কারণ ঔষুধি গাছ সম্পর্কে আমাদের সকলের জানা উচিত। ভবিষ্যতে আমিও বাড়িতে ফলজ ও ভেষজ গাছ রোপন করার চেষ্টা করবো।
হাসপাতালের ন্যাচারাল মেডিসিন বিভাগের মেডিকেল অফিসার ডা: জি.পি সাহা বলেন, ‘সরকারের নিদের্শনায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বরাদ্ধকৃত অর্থায়নে করা হয়েছে এই বাগান। সরকার যদি আর অন্যান্য জায়গায় বড় পরিসরে এমন ঔষুধি বাগান করে তাহলে একদিকে ঔষুধের চাহিদা পুরণের পাশাপাশি মানুষও উপকৃত হবেন বলে মনে করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, বাগানটি মূলত প্রদর্শনীর জন্য করা হয়েছে। যাতে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও স্বজনরা এখান থেকে কোন রোগের জন্য কোন গাছের উপকরণ ঔষুধ হিসেবে ব্যবহার জানতে ও খেতে পারেন এবং তারাও যেন নিজ নিজ বাড়িতে ফলজ ভেষজের গাছ রোপন করেন। এজন্য আমরা এখানে বাগান মালি রেখেছি। তিনি ঔষুধি গাছ গুলো চিহ্নিত ও গুণাগুন সম্পর্কে রোগী এবং স্বজনদের জানান।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘ছাদ বাগানের সংখ্যা ও চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাসা বাড়িতে তো বাগান করা হচ্ছেই তার পরেও এখন হাসপাতালসহ বিভিন্ন দপ্তরের ভবনের ছাদে বাগান করা হচ্ছে। যারা ছাদ বাগান করছেন তাদের তেমন কোন প্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ নেই। তারা মূলত বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া, ইউটিউব ফেসবুকে ভিডিও দেখে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন। যখন তাদের বাগানের কোন সমস্যা হয় তখন তারা আমাদের কাছে আসেন ও আমরা তাদের সঠিক পরামর্শ প্রদান করি।
তবে তিনি ছাদ বাগান করার আগে ছাদের ধারণ ক্ষমতা সম্পর্কে জেনে বুঝে বাগান করার পরামর্শ দেন। কারণ ছাদে অতিরিক্ত ওজন বা ভারির কারণে দুর্ঘটনাও ঘটতে পারে। এছাড়াও ছাদ পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা রাখার বিষয়েও তিনি বলেন, ‘মূলত ছাদে বিভিন্ন ড্রাম টবে গাছ লাগানো হয়। এসব গাছের পাতা ও ড্রামের বা টবের মাটি পরে ছাদ অপরিষ্কার হয়ে যায় ও বৃষ্টি হলে সেগুলো ভিজে ছাদের ক্ষতি করে। এই দিক ও গাছের প্রজাতি নির্বাচনের দিকও খেয়াল রাখতে হবে। যে গুলো গাছ খুব উঁচু হয় ও খুব সহজেই ঝড় বাতাসে ঝরে পরে সেই ধরণের গাছ ছাদে রোপন না করাই উত্তম। ছাদে রোপনকৃত গাছের দৈর্ঘ্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। এই বিষয়গুলো যদি বাগানিদের সুনির্দিষ্টভাবে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয় তাহলে ছাদ বাগান আরও কার্যকর ভুমিকা রাখবে। আগে ছাদ বাগান করার উপকরণ গুলো সহজলভ্য না হলেও এখন চাহিদার প্রেক্ষিতে এগুলো সহজলভ্য হচ্ছে। আশা করি খুব শীঘ্রই এবিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ থেকে প্রকল্প প্রনোয়ন এবং বাস্তবায়ন শুরু হবে। সেটি হলে আমরা আরও বেশি করে বাগানিদের সহায়তা করতে পারবো।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন