ঠাকুরগাঁয়ের অরেঞ্জ ভ্যালি দেখতে দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভীড়! ৩০ লাখ বিক্রির আশা
ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলার মালঞ্চা গ্রামের অরেঞ্জ ভ্যালিতে দার্জিলিং জাতের কমলাগাছের ডালে ডালে এবারও থোকায় থোকায় ঝুলছে বড় বড় কমলা। কমলার ভারে হেলে পড়েছে গাছের ডালপালা। নয়নাভিরাম এ কমলা বাগান দেখতে প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ আসতে শুরু করেছে বাগানে।
গত বৃহস্পতিবার (১ ডিসেম্বর) সকাল থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কমলা তোলা শুরু করেছেন বাগান মালিক। মিষ্টি এবং রসালো এ কমলা বাগানেই বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকা কেজি দরে। বাগান থেকে এবার ৩০ লাখ টাকার কমলা বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা বাগান মালিকের।
উপজেলার ২নং কোষারানীগঞ্জ ইউনিয়নের মালঞ্চা গ্রামের আড়াই বিঘা জমির ওপর ভারতীয় দার্জিলিং জাতের কমলার বাগান করেছেন উপজেলার বীরহলি গ্রামের কৃষি উদ্যোক্তা আবু জাহিদ ইবনুল ইকরাম জুয়েল। বাগানটিতে আড়াই শর মতো কমলাগাছ রয়েছে।
অষ্টমবারের মতো তাঁর এ বাগানের গাছে এবারও প্রচুর কমলা ধরেছে। কমলার রংও এসেছে দারুণ। ১১ বছর আগে জেলা হর্টিকালচার থেকে প্রতি চারা পাঁচ টাকা করে ক্রয় করে রোপণ করেন জুয়েল। যদিও তার এ বাগান করার ইচ্ছা ছিল না। শুধু হর্টিকালচার সেন্টারের কর্মকর্তাদের অনুরোধে তিনি কমলার চারাগুলো কিনেছিলেন। এখন সেই আড়াই শত গাছ থেকে বার্ষিক ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকার কমলা বিক্রি করছেন কৃষি উদ্যোক্তা জুয়েল।
গত বছর এ বাগান থেকে প্রায় ২০ লাখ টাকার কমলা বিক্রি করেছিলেন তিনি। স্থানীয় বাজারের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি সরবরাহ করেছেন রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়। বাগানে প্রচুর দর্শনার্থী আসেন দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে। দর্শনার্থীদের চাপ সামলাতে শেষ পর্যন্ত ২০ টাকা প্রবেশ মূল্য নির্ধারণ করেন বাগান মালিক। তার পরেও ভিড় সামাল দিতে মালিকসহ আটজনকে হিমশিম খেতে হয়েছে।
এবার ৩০ লাখ টাকার কমলা বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা করছেন বাগান মালিক। দর্শনার্থীদের ভিড় সামলাতে এবার আগের ভাগেই বাড়তি ব্যবস্থা নিয়েছেন। কড়া নিরাপত্তাসহ বাগানে প্রবেশের জন্য ৩০ টাকা মূল্যের টিকিটের ব্যবস্থা করেছেন। বাগানের ভেতরে কিছু গরম কাপড় বিক্রিরও ব্যবস্থা রয়েছে। দর্শনার্থীরা কমলা বাগান দেখতে এসে বাগানের সৌন্দর্য অবলোকন করার পাশাপশি স্বল্পমূল্যে পরিবারের জন্য গরম কাপড়ও কিনতে পারবেন।
উদ্যোক্তা জুয়েল জানান, তাঁর বাগানে দার্জিলিং জাতের কমলার চাষ হয়। এ বাগানের কমলা স্বাদে দার্জিলিংয়ের কমলার মতো। অর্গানিক পদ্ধতিতে তিনি এ বাগান করেছেন। কোনো কীটনাশক ব্যবহার করা হয় না। বাগানের আড়াই শ গাছ থেকে এবার ৩০০ মণ কমলা হতে পারে বলে আশা তাঁর। আড়াই বিঘার এ বাগানে তাঁর খরচ হয় চার লাখ টাকা। ভারতীয় দার্জিলিং জাতের কমলাগাছ ৫০ বছর পর্যন্ত ফল দেয়। এটি একটি অর্থকরী ফসল, যা খুব সহজে ও স্বল্প খরচে উৎপাদন করা যায় বলে জানান তিনি। কেউ যদি এমন বাগান করতে চায়, তাহলে তার পক্ষ থেকে কমলা চাষ বিষয়ে সব ধরনের সহযোগিতা করবেন বলেও জানান সফল এ উদ্যোক্তা।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম জানান, এ বাগানের কমলা খুবই সুস্বাদু ও ভালো। তাই এ বাগানের কমলা দেশের বিভিন্ন এলাকায় যায় এবং সব জায়গায় আমাদের দেশে উৎপাদিত কমলা হিসেবে প্রশংসিত হয়েছে। তা ছাড়া এটা একটা পর্যটনশিল্প হিসেবেও কাজ করছে। কৃষি বিভাগ থেকে লেবুজাতীয় ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি, সম্প্রসারণ ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের মাধ্যমে তাঁকে সহযোগিতা করা হচ্ছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহরিয়ার নজির জানান, জুয়েলের কমলা বাগান একটি পরিচিত নাম ও ব্র্যান্ড। জুয়েলের মতো কেউ এমন কমলা বাগান করতে চাইলে তাদের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন