ডাকাতির ‘সুযোগ করে দেয়’ শ্যামলী পরিবহন!
আন্তর্জাতিক রুটের বাসে কোনো লোকাল যাত্রী নেয়ার নিয়ম না থাকলেও পাসপোর্ট ও পরিচয়পত্র ছাড়া পাঁচজনকে বুড়িমারী সীমান্ত থেকে ঢাকায় আনার জন্য বাসে তোলে শ্যামলী পরিবহন। পরবর্তীতে ওই পাঁচযাত্রীই বাকি যাত্রীদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে সর্বস্ব লুটে নেয়। ঘটনাটি ঘটে গত বছরের সেপ্টেম্বরে।
এ বিষয়ে সম্প্রতি ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরে অভিযোগ করেন ওই বাসের ছয় যাত্রী। যাত্রীর নিরাপত্তা বিঘ্নিত করা ও প্রতিশ্রুত সেবা না দেয়ার এই অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় শ্যামলী পরিবহনকে সাড়ে ৪ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
যাত্রীদের অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, ‘ভারত সফর শেষে ২০১৭ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর তারা ভারতের শিলিগুড়ি থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন। সীমান্তবর্তী বুড়িমারী থেকে পাসপোর্ট দেখিয়ে শ্যামলী পরিবহনের দায়িত্বপ্রাপ্তদের মালামাল ও ব্যাগ বুঝিয়ে দিয়ে বাসে (বাস নং মেট্রো ব-১৫-১২৮৫) উঠেন তারা। বাসটির চালক ছিলেন মোহাম্মদ সেলিম আর সুপারভাইজার ছিলেন মোহাম্মদ রেজা। বাসটি বুড়িমারী শ্যামলী পরিবহনের অফিস থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে দেশি-বিদেশি মোট ৩০ যাত্রী নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেয়।’
‘তবে ৩০ যাত্রীর মধ্যে ২৫ জন পাসপোর্টধারী থাকলেও বাকি পাঁচজন ছিলেন পাসপোর্টবিহীন, যারা মূলত ‘ডাকাত’। তারা যাত্রীবেশে বুড়িমারী শ্যামলী কাউন্টার থেকে বাসে উঠেন। ওইদিন রাত দেড়টার দিকে পরিকল্পিতভাবে পাঁচ ডাকাতের একজন চালকের গলায় ছুরি ধরে বাসটি নিয়ন্ত্রণে নেয় এবং অস্ত্রের মুখে যাত্রীদের জিম্মি করে নগদ টাকা, মোবাইল, স্বর্ণালঙ্কারসহ মূল্যবান জিনিসপত্র ছিনিয়ে নেন। ৪০ মিনিট যাত্রীদের ওপর তাণ্ডব চালায় ডাকাতরা। পরে বাসটি থামিয়ে বগুড়ার শেরপুরের একটি ইটভাটার সামনে নেমে যায় তারা। তখন পুরো বাসে যাত্রীদের জিনিসপত্র এলোমেলোভাবে পড়ে ছিল। ওই মুহূর্তে আশ্চর্যজনকভাবে ওই বাসের যাত্রী চালানের কপিটি পাওয়া যায়। সেই চালানে ২৫ যাত্রীর পাসপোর্ট ও টিকিট নম্বর থাকলেও ৫ যাত্রীর কোনো শনাক্তকারী তথ্য ছিল না। ওই ৫ যাত্রীই ডাকাতিতে অংশ নেন।’
অভিযোগে আরও বলা হয়, ‘এ ঘটনার পর শ্যামলী পরিবহন কোনো সুস্পষ্ট বক্তব্য দিতে পারেনি। ডাকাতিতে ক্ষতিগ্রস্ত যাত্রীদের ক্ষতিপূরণের বিষয়ে কোনো ব্যবস্থাও গ্রহণ করেনি।’
ডাকাতির এই ঘটনায় পুলিশ এবং শ্যামলী পরিবহন কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় গত বছরের ডিসেম্বরে ওই বাসের ৬ যাত্রী পৃথকভাবে অধিদফতরে লিখিত অভিযোগ করেন। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক (এডি) রজবী নাহার রজনী তাদের অভিযোগের শুনানি করেন। শুনানিতে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ২০০৯ সালের ভোক্তা আইনের ৪৫ এবং ৫২ ধারায় শ্যামলী পরিবহনকে জরিমানা করা হলো।
এ বিষয়ে রজবী নাহার রজনী বলেন, ভোক্তা আইনের ৪৫ ধারায় ভোক্তাকে যথাযথভাবে প্রতিশ্রুত সেবা না দেয়া এবং ৫২ ধারায় সেবাগ্রহীতার জীবন বা নিরাপত্তা বিপন্নকারী কাজ করার অভিযোগে তাদের এই জরিমানা করা হয়েছে। আইন অনুযায়ী শ্যামলী পরিবহনকে জরিমানার অর্থ দিতে পাঁচ কার্যদিবস সময় দেয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) নির্ধারিত সময় শেষ হবে। এ সময়ে জরিমানার অর্থ পরিশোধ না করলে আইন অনুযায়ী পরবর্তীতে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
শ্যামলী পরিবহনের পক্ষে প্রতিষ্ঠানটির প্রোপ্রাইটর রমেশ চন্দ্র ঘোষ লিখিত বক্তব্যে বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, শ্যামলী পরিবহনের নামে অভিযোগটি অপ্রত্যাশিত ও অনাকাঙ্ক্ষিত। এ ধরনের ঘটনার জন্য আন্তরিক দুঃখ প্রকাশ করছি এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা যেন না ঘটে সে ব্যাপারে আরও সক্রিয় চেষ্টা চালিয়ে যাব।
তবে শ্যামলী পরিবহনের অ্যাকাউন্ট অফিসার জুথিষ্টির রায় বলেন, রাস্তায় কোনো দুর্ঘটনা হলে এ দায়িত্ব মালিকপক্ষ কেন নেবে? তাই ভোক্তা অধিদফতরের এ রায়ের বিরুদ্ধে আমরা আদালতে আপিল করবো। তিনি জানান, ভোক্তা অধিদফতর থেকে একটি চিঠি দিয়েছে। সেখানে জরিমানার বিষয়টি উল্লেখ করা আছে।সূত্র : জাগোনিউজ
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন