ডাক্তার সংকটে তেঁতুলিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স
পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালে চিকিৎসক সংকটে চিকিৎসাসেবা নিতে রোগীদের দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
হাসপাতালটিতে প্রয়োজনীয় চিকিৎসক না থাকায় বহির্বিভাগে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন ফার্মাসিস্ট। এখানে নেই কোনো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এবং মেডিকেল অফিসার তাই ফার্মাসিস্ট দিয়েই চলছে বহির্বিভাগ।
হাসপাতালে জরুরি বিভাগে রোগী আসলেই তাদের পাঠিয়ে দেয়া হয় জেলা সদরসহ অন্য হাসপাতালে।
জানা যায়, বহির্বিভাগে প্রতিদিন গড়ে ৩০০ থেকে ৩৫০ জন রোগী এবং জরুরি বিভাগে ৫০ থেকে ১০০ জন রোগী চিকিৎসাসেবা নিতে আসেন এর মধ্যে ইনডোরে রোগী ভর্তি হোন ৭০ থেকে ৮০ জন।
চিকিৎসক সংকটের কারনে বেশির ভাগ রোগীকে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে অন্যত্র পাঠানো হয়। শুধু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অভাবে উপজেলায় ১লাখ ৬০ হাজার ৯০ জন মানুষের চিকিৎসার একমাত্র ভরসাস্থল এই হাসপাতালটির স্বাস্থ্যসেবা মুখ থুবড়ে পড়েছে।
রোগীদের অভিযোগ, এতো বড় হাসপাতালে মাত্র ৬ জন চিকিৎসক থাকলে চিকিৎসা পাব কিভাবে? হাসপাতালে চিকিৎসক সংকট থাকার কারণে তারা চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
বাধ্য হয়ে বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক ও ক্লিনিকে ডাক্তার দেখাতে হচ্ছে। এতে নিম্ন আয়ের মানুষদের চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। ক্লিনিকে ডাক্তার দেখানোর মতো সামথ্যও নেই তাদের।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ২০০৫ সালে ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয় উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিকে। এ হাসপাতালে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা, মেডিকেল অফিসার, জুনিয়র কনসালটেন্ট ও সহকারী সার্জনসহ ২৮ জনের পদ রয়েছে।
কিন্তু ২৮ জনের স্থলে রয়েছে ৬জন। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাসহ জুনিয়র কনসালটেন্ট (গাইনি) হিসেবে রয়েছেন ডাক্তার আফিফা জিন্নাত আফি ও ডেন্টাল সার্জন ডা.আনোয়ার হোসেন এবং মেডিকেল অফিসার ৩জন এরমধ্যে আবাসিক মেডিকেল অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) পদে একজন নিয়োজিত।
বর্তমানে আবাসিক মেডিকেল অফিসারসহ মোট ২২ জন চিকিৎসকের পদ শূন্য। এর মধ্যে জুনিয়র কনসালটেন্ট (ইএনটি), জুনিয়র কনসালটেন্ট (সার্জারি), জুনিয়র কনসালটেন্ট (চক্ষু), জুনিয়র কনসালটেন্ট (মেডিসিন), জুনিয়র কনসালটেন্ট (অর্থোপেডিক), জুনিয়র কনসালটেন্ট (কার্ডিও), জুনিয়র কনসালটেন্ট (এনেসথেসিয়া), জুনিয়র কনসালটেন্ট (শিশু), জুনিয়র কনসালটেন্ট (যৌন ও চর্ম) এবং সহকারী সার্জন (ইএমও), সহকারী সার্জন (প্যাথলজি), সহকারী সার্জন (এনেসথেসিয়া), এমও (হোমিও/আয়ুর্বেদিক) চিকিৎসকের পদ কয়েক বছর ধরে শূন্য রয়েছে।
ফলে ২ জন উপ—সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসারের পাশাপাশি ফার্মাসিস্ট দিয়ে জরুরি বিভাগ ও আন্তঃবিভাগে চিকিৎসাসেবা প্রদান করতে হচ্ছে। জরুরি বিভাগে আসা রোগীদের মধ্যে ২০ থেকে ২৫ জন আন্তঃবিভাগে ভর্তি থাকেন। কিন্তু রোগীদের পর্যাপ্ত বেড না থাকায় অনেক ভর্তি রোগীকে বারান্দার ফ্লোরে থেকে চিকিৎসাসেবা নিতে হয়।
অনেক মা ও শিশু রোগীর চিকিৎসাসেবা নিতে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। হাসপাতালটিতে আধুনিক অপারেশন থিয়েটার (ওটি) থাকলেও গাইনি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, এনেসথেশিয়া চিকিৎসক, সার্জারি চিকিৎসক না থাকায় অনেক অন্তঃসত্ত্বা মাকে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসাসেবা প্রদান করা সম্ভব হচ্ছে না।
তবে বর্তমানে সিভিল সার্জন ডাক্তার মোস্তফা জামান চৌধুরী পঞ্চগড়ে যোগদানের পর থেকেই এ উপজেলার গর্ভবতী প্রসূতি মাসহ সার্জারি রোগীর মাঝে আশার আলো জ্বালিয়েছে। গত নভেম্বর মাস থেকে তেঁতুলিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এখন পর্যন্ত প্রতি মাসে অপারেশন কার্যক্রম পরিচালনা করছেন এ সিভিল সার্জন।
হাসপাতালটির বর্তমান চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা হলে তারা বলেন, প্রান্তিক এ উপজেলায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে চিকিৎসক সংকটের কারণে আমাদেরকে চিকিৎসাসেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। তারপরেও চেষ্টা করে যাচ্ছি রোগীদের নিরলসভাবে চিকিৎসা সেবা দিতে। এর মধ্যে একজন চিকিৎসক যোগদান করেছেন। আশা করছি আগামীতে এ সমস্যা থাকবে না।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. এএসএম রুহুল আমিন বলেন, আমি কয়েকদিন আগে যোগদান করেছি।
আমাদের ৫০ শয্যার এ হাসপাতালটিতে বেশিভাগ মেডিকেল অফিসারে পদ সহ গুরুত্বপূর্ণ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পদ শূন্য থাকায় জরুরি ও বহির্বিভাগে মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট এবং উপ—সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার দিয়ে যথাসাধ্য চিকিৎসা সেবা প্রদানে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
তবে হাসপাতালে মেডিকেল অফিসারের পদায়ন চেয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে পত্র দেওয়া হয়েছে। তথাপিও সংকটের মধ্যেই আমাদের যা জনবল রয়েছে তা দিয়েই আন্তরিকতার সঙ্গে চিকিৎসাসেবা দিয়ে যাচ্ছি। ইতিমধ্যে মেডিকেল অফিসার হিসেবে ডা. ফারহান হোসেন হাসপাতালে যোগদান করেছেন।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন