ডিজিটাল নজরদারির প্রযুক্তি আনছে বাংলাদেশ
নিরাপত্তার স্বার্থে বাংলাদেশে ফেসবুক, ইউটিউব বা গুগলের মতো ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের ওপর নজর রাখতে সরকার নানা ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহারের পরিকল্পনা করছে।
সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বিবিসি বাংলাকে বলেন, “আমাদের নিরাপদ থাকার জন্য যেসব ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার, সেসব ব্যবস্থা আমরা নেব।” তবে এ বিষয়টিকে তিনি সামাজিক মাধ্যমের ওপর ‘নজরদারি’ বলতে অস্বীকৃতি জানান।
ঠিক কী ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণের কথা আপনারা ভাবছেন? বিবিসি বাংলার পুলক গুপ্তের এ প্রশ্নের উত্তরে মোস্তাফা জব্বার বলেন, “যেসব ক্ষতিকর বিষয় আছে, সেসব যেন আমরা সনাক্ত করতে পারি। আমি তো আর ফেসবুক বন্ধ করে দিতে পারবো না । তবে যেখানে যেখানে প্রয়োজন, নিজের ভূখন্ডকে নিরাপদ রাখতে প্রযুক্তি ব্যবহার করার যতটুকু সুযোগ আছে, ততটুকু প্রযুক্তি ব্যবহার করবো।”
এ ধরনের ‘মনিটরিং প্রযুক্তি’ ব্যবহারের কথা মোস্তাফা জব্বার প্রথম উল্লেখ করেন গত শনিবার ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে। ‘নির্বাচনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ভূমিকা’ বিষয়ে ঐ আলোচনার আয়োজন করেছিল একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি।
সরকার কি ফেসবুক, গুগল বা ইউটিউবের মতো ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপের লক্ষ্যেই এই প্রযুক্তি আনার কথা বলছে?
বিবিসি বাংলার এ প্রশ্নের উত্তরে মোস্তাফা জব্বার বলেন, “নিয়ন্ত্রণ শব্দটি নিয়েই আমার আপত্তি আছে। ফেসবুক, গুগল, ইউটিউব, এগুলো আমেরিকান প্রতিষ্ঠান। সেদেশের আইনে প্রতিষ্ঠিত। সেদেশের কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ড দ্বারা পরিচালিত। অন্যান্য দেশে তারা যেরকম সংকট তৈরি করে, আমাদের দেশে সংকটটা একটু বেশি তৈরি হয়। কারণ আমাদের জীবন-যাপনের মান আমেরিকানদের মতো নয়। আমাদের স্ট্যান্ডার্ড ভিন্ন। আমাদের ধর্মীয় মূল্যবোধ থেকে শুরু করে সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ সবই ভিন্ন মাত্রার। ”
তিনি আরও বলেন, “কাজেই আমাদের এখানে যখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহৃত হয়, তখন অপব্যবহারের মাত্রাটাও থাকে। আমাদের এখানে এমন কিছু রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ আছে, যে চ্যালেঞ্জ হয়তো বিশ্বের অনেক দেশ মোকাবেলাই করে না। আমাদের এখানে জঙ্গীবাদ আছে, সন্ত্রাস আছে। গুজব প্রচার করা হয়। এই বিষয়গুলোও আছে।”
মোস্তাফা জব্বার বলেন, “আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশের কথা বলছি। বাংলাদেশের ডিজিটাল রূপান্তরের কথা বলছি। এই ডিজিটাল বাংলাদেশকে নিরাপদ করার জন্য যা যা করার দরকার, আমরা তাই করবো। কাজেই সেখানে আমার জন্য, আমার দেশের নাগরিকদের জন্য ক্ষতিকর যা থাকে, সেই ক্ষতিকর ময়লা-আবর্জনা ফেলে দেয়ার দায়িত্ব তো নিশ্চয়ই আমাকেই করতে হবে।”
এই কাজের জন্য সরকার যে প্রযুক্তি ব্যবহারের কথা বলছে, সেটি তাহলে কী ধরনের হবে?
মোস্তাফা জব্বার বলেন, “এটি মনিটরিং করা থেকে শুরু করে যেখানে যেখানে ক্ষতিকর উপাদান থাকবে, সেটা থেকে বেঁচে থাকার চেষ্টা। ডিজিটাল প্রযুক্তি কেবল মাত্র কোন একটা শব্দ, বা ছবি বা কোন একটা সুনির্দিষ্ট বিষয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। এখনকার প্রযুক্তি এবং ভবিষ্যতের প্রযুক্তির সক্ষমতা অনেক বেশি। সুতরাং সেই সক্ষমতা অনুযায়ী আমার দেশকে নিরাপদ রাখা, দেশের মানুষকে নিরাপদ রাখা, ডিজিটাল অপরাধ থেকে নিরাপদ রাখা। এটাই আমাদের লক্ষ্য।”
তিনি বলেন, এজন্যে হার্ডওয়্যার এবং সফ্টওয়্যার দুটিই লাগবে। এক্ষেত্রে যা দরকার হবে, সরকার তাই ব্যবহার করবে।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ সরকার এই উদ্যোগের কথা জানাচ্ছে এমন এক সময়, যখন সরকারের নতুন একটি আইন “ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন” নিয়ে সাংবাদিক এবং মানবাধিকার কর্মীদের মধ্যে উদ্বেগ বাড়ছে। নির্বাচন সামনে রেখে সরকার এধরণের পদক্ষেপ নিচ্ছে বলে আশংকা করছেন সরকারের সমালোচকরা।
সরকারের এই পদক্ষেপ কি অনেকটা নজরদারি, নিয়ন্ত্রণ বা বিধিনিষেধ আরোপের মতো ব্যাপার তাহলে?
এ প্রশ্নের উত্তরে মোস্তাফা জব্বার বলেন, “কোন রাষ্ট্র কি এমন একটা ব্যবস্থা নেবে না যে তার নাগরিকদের নিরাপদ রাখা দরকার? এখানে নজরদারির কি আছে! যখন একটি জনসভা হয়, তখন সেখানে যদি আমি সিসিটিভি টাওয়ার বসিয়ে সেই জনসভার দিকে লক্ষ্য রাখি, সেখানে কোন অপরাধমূলক কাজ হচ্ছে কীনা, এই নজরদারি তো থাকেই। আমার দেশের বিরুদ্ধে কেউ কাজ করছে কিনা, সেই নজরদারি তো আমি করবোই। আমার নাগরিকের বিরুদ্ধে কেউ কোন অপরাধ করছে কিনা, সেই নজরদারি তো আমাকে করতেই হবে।”
মোস্তাফা জব্বার বলেন, সরকারের এই উদ্যোগ নিয়ে কোন আশংকার যৌক্তিক কারণ নেই।
তিনি বলেন, “অপরাধ না করলে তো আতংকিত হওয়ার কোন কারণ দেখি না।”
-বিবিসি বাংলা
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন