ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন আবার উঠছে মন্ত্রিসভায়
সংসদে পাস হওয়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পর্যালোচনার জন্য আবার মন্ত্রিসভায় তোলা হবে বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু আশা করছেন এই আইন নিয়ে যে উদ্বেগ আছে, সেটি আলোচনায় সমাধান হবে।
সাংবাদিক-সম্পাদকদের উদ্বেগের মধ্যেই গত ১৯ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদে পাস হয় ডিজিটাল নিরাপত্তা বিল। এই আইনটির খসড়া মন্ত্রিসভায় পাস হওয়ার পরই গণমাধ্যমকর্মীদের পক্ষ থেকে আপত্তি এসেছিল। এই আইনের কিছু ধারার কারণে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা করা কঠিন হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা তাদের।
সে সময় সরকারের পক্ষ থেকে আশ্বাস দেয়া হয়েছিল, এসব উদ্বেগের সমাধান হবে। তবে আইন পাসের পরও সেই উদ্বেগের সমাধান হয়নি। আর এর প্রতিক্রিয়ায় ২৯ সেপ্টেম্বর মানববন্ধন ডাকে জাতীয় দৈনিকের সম্পাদকদের সংগঠন সম্পাদক পরিষদ।
তথ্য মন্ত্রণালয় এই কর্মসূচি স্থগিত করে আলোচনার আহ্বান জানায়। আর রবিবার দুপুরে সচিবালয়ে যান পরিষদের সদস্যরা।
বেলা সাড়ে ১২টা থেকে বেলা সাড়ে তিনটা পর্যন্ত হয় দীর্ঘ বৈঠক। সম্পাদকরা জানান, কেন তারা এই আইনের বিরোধিতা করছেন।
বৈঠক শেষে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৯টি ধারা স্বাধীন সাংবাদিকতার জন্য হুমকি বলে জানিয়েছে সম্পাদক পরিষদ। এসব ধারার বিষয়ে আলোচনার জন্য আবারও মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে উপস্থাপন করা হবে।’
বৈঠকে সরকারের পক্ষ থেকে আইন ও তথ্যমন্ত্রী ছাড়ও ছিলেন ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার, প্রধানমন্ত্রীর তথ্যবিষয়ক উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী ও তথ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত সচিব আবুয়াল হোসেন।
সম্পাদক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনামের নেতৃত্বে সম্পাদকদের মধ্যে ছিলেন প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান, যুগান্তর-এর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সাইফুল আলম, নিউ এজের নূরুল কবির, মানবজমিনের মতিউর রহমান চৌধুরী, নিউজ টুডের রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ, কালের কণ্ঠের ইমদাদুল হক মিলন, ইনডিপেনডেন্ট এর এম শামসুর রহমান, বাংলাদেশ প্রতিদিনের নঈম নিজাম, ইনকিলাবের এ এম এম বাহাউদ্দীন, বণিক বার্তার দেওয়ান হানিফ মাহমুদ, ঢাকা ট্রিবিউনের জাফর সোবহান, সমকাল-এর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মুস্তাফিজ শফি প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
আনিসুল হক বলেন, ‘আইনটি ইতোমধ্যে জাতীয় সংসদে পাস হয়েছে। তবে রাষ্ট্রপতি এখনও আইনটিতে স্বাক্ষর করেননি। তাই এসব বিষয়ে আলোচনার জন্য আগামী ৩ অক্টোবরের পরে মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে আইনটি উপস্থাপন করা হবে। মন্ত্রিপরিষদের অনুমতি সাপেক্ষে এসব বিষয়ে সম্পাদক পরিষদসহ সাংবাদিক নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় বসা হবে। আলোচনার মাধ্যমেই জটিলতা দূর হবে।’
সম্পাদক পরিষদের পক্ষ থেকে মাহফুজ আনাম জানান, বৈঠকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৮, ২৫, ২৮, ২৯,৩১, ৩২, ৪৩ ও ৫৩ ধারা সম্পর্কে আপত্তি জানিয়েছেন তারা। তার মতে, এসব ধারা স্বাধীন সাংবাদিকতার পরিপন্থী।
‘এসব ধারার বিরুদ্ধে আপত্তি ও কিছু সুপারিশ সরকারের তিন মন্ত্রীর কাছে লিখিতভাবে উপস্থাপন করেছি আমরা। আইনটির ২১ নম্বর ধারা সম্পর্কেও আমরা আপত্তি জানিয়েছিলাম তবে সরকারের ব্যাখ্যায় আমরা সন্তুষ্ট।’
‘এ ধরনের একটি আইন হোক তা আমরা চাই কিন্তু। তা যেন স্বাধীন সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে বাধার সৃষ্টি না করে। সংসদে পাস হওয়া এ আইনটি বাতিল নয় আমরা সংশোধন চাই। সে কারণে এই আইনের বিষয়ে আমাদের আপত্তিগুলো আমরা লিখিত আকারে দিয়েছি।’
মাহফুজ আনাম বলেন, ‘আইনটি সংসদে পাস হওয়ার আগে আমরা মন্ত্রণালয় ও সংসদীয় কমিটির সঙ্গে বসেছিলাম এবং অনেক পথ এগিয়েছিলাম। সংসদীয় কমিটির সঙ্গে দুই দফা আমরা বসেছি। তবে কথা থাকলেও তৃতীয় দফা আর বসা হয়নি। সংসদীয় কমিটি আমাদের সঙ্গে তৃতীয় দফা না বসে কেন আইনটি সংসদে পাস করেছে সেটা আমরা জানি না।’
‘তবে তথ্যমন্ত্রী আবারও আইনটির বিষয়ে সম্পাদক পরিষদের সঙ্গে বসার উদ্যোগ নিয়েছেন, তার এ উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই।’
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন