ডিসিসি মার্কেট থেকে আপন জুয়েলার্সের ৬৮ কেজি স্বর্ণ জব্দ
রাজধানীর গুলশান-১ এ অবস্থিত ঢাকা সিটি কর্পোরেশন মার্কেটের (ডিসিসি) আপন জুয়েলার্সের শাখা থেকে ৬৮ কেজি স্বর্ণ ও ৩৩৮টি ডায়মন্ডের ছোট নাকফুল আনুষ্ঠানিক জব্দ করেছে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর। এছাড়া গুলশান-২ এর সুবাস্তু ভবন-সংলগ্ন আপন জুয়েলার্সের শোরুম থেকে প্রায় ২১২ কেজি (৫.৩ মণ) স্বর্ণ ও ৩শ’ ৫০ গ্রাম ডায়মন্ড জব্দ করা হয়েছে।
রোববার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে শুল্ক গোয়েন্দার সহকারী পরিচালক (এডি) আরজিনা খাতুনের নেতৃত্বে এসব স্বর্ণ ও ডায়মন্ড জব্দ প্রক্রিয়া শুরু হয়। এছাড়া পৃথক ৫টি দল সকাল ৯টায় একযোগে আপন জুয়েলার্সের ৫টি শোরুমে এ প্রক্রিয়া শুরু করেছে।
এ ব্যাপারে শুল্ক গোয়েন্দার সহকারী পরিচালক (এডি) আরজিনা খাতুন বলেন, আপন জুয়েলার্সকে সময় দেয়া হয়েছিল। তারা তিন দফায় সময় নিয়েও স্বর্ণের পক্ষে বৈধ কাগহজপত্র দেখাতে পারেনি। যে কারণে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে স্বর্ণ আনুষ্ঠানিক জব্দ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ডিসিসি মার্কেট শাখায় মোট ৬৮ কেজি স্বর্ণ ও ৩৩৮টি ডায়মন্ডের নাকফুল রয়েছে জব্দের তালিকায়। দুপুর আড়াইটা নাগাদ পুলিশ ও র্যাব প্রহরায় জব্দকৃত স্বর্ণ বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠানো হবে।
এর আগে, শুল্ক গোয়েন্দা অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিজি) ড. মইনুল খান বলেন, আপন জুয়েলার্স কর্তৃপক্ষ তাদের স্বর্ণের পক্ষে কোনো বৈধ কাগজপত্র দেখাতে না পারায় অধিদফতর আনুষ্ঠানিকভাবে তা জব্দের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এ জন্য রোববার সকাল ৯টা থেকে একযোগে আপন জুয়েলার্সের ৫টি শো রুম থেকে পাওয়া সাড়ে ১৩ মণ স্বর্ণ আনুষ্ঠানিকভাবে জব্দ দেখানোর প্রক্রিয়া চলছে। জব্দকৃত স্বর্ণ বাংলাদেশ ব্যাংকে স্থানান্তর করা হবে বলে জানান তিনি।
ড. মইনুল খান বলেন, সংশ্লিষ্ট সবার উপস্থিতিতে স্বর্ণ জব্দ দেখানোর পর ঢাকা কাস্টম হাউসের শুল্ক গুদামের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা দেয়া হবে। জব্দকৃত স্বর্ণ ও ডায়মন্ড শুল্ক আইন অনুযায়ী নিষ্পত্তি করা হবে।
শুল্ক গোয়ন্দা সদর দফতর সূত্র জানায়, শুল্ক গোয়েন্দার ৫টি দল এই স্বর্ণ জব্দ ও স্থানান্তর প্রক্রিয়া তদারকি করছেন। যুগ্ম পরিচালক মো. সফিউর রহমান প্রক্রিয়ার সার্বিক সমন্বয় করছেন। এ ছাড়া স্বর্ণ জব্দ ও বাংলাদেশ ব্যাংকে জমাদানের সার্বিক প্রক্রিয়া তত্ত্বাবধানে রয়েছেন এ কে নুরুল হুদা আজাদ।
গুলশান-২ এর সুবাস্তু ভবন-সংলগ্ন আপন জুয়েলার্সের শোরুমে তদারকি করছেন শুল্ক গোয়েন্দার ডেপুটি ডিরেক্টর (ডিডি) শরীফুল হাসান। সীমান্ত স্কয়ারে করছেন ডেপুটি ডিরেক্টর (ডিডি) জাকির হোসেন, উত্তরার শাখায় ডেপুটি ডিরেক্টর (ডিডি) শামীমুর রহমান, মৌচাক মার্কেট শাখায় রয়েছেন ডেপুটি ডিরেক্টর (ডিডি) সাইফুর রহমান এবং সহকারী পরিচালক (এডি) আরজিনা খাতুন রয়েছেন গুলশান-১ ডিসিসি মার্কেট শাখায়।
গত ২৮ মার্চ রাজধানীর বনানীর দ্য রেইন ট্রি হোটেলে জন্মদিনের পার্টিতে ডেকে নিয়ে ধর্ষণ করা হয় বলে অভিযোগ করেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া দুই ছাত্রী। যাদের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ আনা হয় তাদের একজন আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার হোসেনের ছেলে সাফাত আহমেদ।
এরই মধ্যে ফরেনসিক পরীক্ষার যে প্রতিবেদন পাওয়া গেছে তাতে বলা হয়েছে, দুই তরুণীকে ধর্ষণের আলামত পাওয়া যায়নি।
ওই ঘটনায় দায়ের করা মামলায় সাফাতসহ ৫ আসামি বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন। ধর্ষণের ঘটনার পর দেশব্যাপী ব্যাপক আলোচনায়-সমালোচনয় উঠে আসে আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার হোসেনের ব্যাংক হিসাবে গরমিলের বিষয়টি। এতে শুল্ক গোয়েন্দার পক্ষ থেকে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এছাড়া বিভিন্ন মহল থেকে আপন জুয়েলার্স বর্জনের দাবি ওঠে।
পরে গত ১৪ ও ১৫ মে শুল্ক গোয়েন্দা আপন জুয়েলার্সের গুলশান ডিসিসি মার্কেট, গুলশান অ্যাভিনিউ, উত্তরা, সীমান্ত স্কোয়ার ও মৌচাকের ৫টি শো রুমে অভিযান চালিয়ে প্রায় সাড়ে ১৩ মণ স্বর্ণ ও ৪২৭ গ্রাম হীরা সাময়িকভাবে জব্দ করে। এগুলো পরে আইনানুগভাবে প্রতিষ্ঠানের জিম্মায় দেয়া হয়।
আত্মপক্ষ সমর্থনে আপন জুয়েলার্স কর্তৃপক্ষকে পরে তিনবার শুনানির সুযোগ দিলেও তারা কোনো প্রকার বৈধ কাগজ দেখাতে পারেনি। তবে আপন জুয়েলার্সের মালিকপক্ষের দেয়া ১৮২ জনের তালিকার মধ্যে ৮৫ জন প্রকৃত গ্রাহককে মেরামতের জন্য জমা রাখা প্রায় ২.৩ কেজি স্বর্ণালঙ্কার অক্ষত অবস্থায় ফেরত দেয় শুল্ক গোয়েন্দা।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন