ডেঙ্গু : সরকারি হিসেবে মৃতের সংখ্যা কম কেন?
বাংলাদেশে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তদের মধ্যে মৃত্যুর সংখ্যা ১০০ ছাড়িয়ে গেছে বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবর প্রকাশ হচ্ছে। তবে সরকারি হিসাবে বলা হচ্ছে, দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে এপর্যন্ত ২৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। দু’টি পরিসংখ্যানে বিশাল ফারাক দেখা যাচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মৃত্যুর সংখ্যা কম দেখানোর একটা চেষ্টা সরকারের রয়েছে বলে তারা মনে করেন। তবে সরকারি কর্মকর্তারা বলেছেন, সরকারের গঠিত একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি তথ্য নিয়ে মৃত্যুর কারণ যাচাই করার পর ডেঙ্গুর ব্যাপারে নিশ্চিত হলে তখনই তা তালিকাভুক্ত করা হচ্ছে।
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় হাসপাতাল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তাদের হাসপাতালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে এপর্যন্ত ১৮জনের মৃত্যু হয়েছে। একটি হাসপাতালে যখন এই চিত্র পাওয়া যাচ্ছে, তখন সরকারি হিসাবে এ পর্যন্ত সারাদেশে ২৩ জনের মৃত্যুর কথা বলা হয়েছে।
কয়েকটি পত্রিকা সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে তথ্য সংগ্রহ করে এপর্যন্ত ১১৪ জনের মৃত্যুর খবর প্রকাশ করেছে।
ঢাকায় একটি বেসরকারি হাসপাতালের কর্ণধার ডা: লেনিন চৌধুরী বলছিলেন, মৃত্যু সংখ্যা নিয়ে যখন অনেক ফারাক দেখা যাচ্ছে, তখন সরকারি হিসাব নিয়ে সন্দেহ তৈরি হচ্ছে।
“ঢাকার মাত্র ৩৭টি হাসপাতালের রিপোর্ট সরকারি হিসাবে দেয়া হয়। ঢাকাতেই সাড়ে তিনশ’র মতো হাসপাতাল আছে। সেগুলোর রিপোর্ট সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগে যায় না। সরকারি হিসাব কম হওয়ার এটি একটি কারণ।”
“আরেকটি কারণ, সম্ভবত কর্মকর্তাগণ মনে করেন, ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু বেশি হলে এটি মানুষকে আতংকগ্রস্ত করবে, প্রভাবিত করবে। যে ভাবনা থেকে এই মৃত্যুর রিপোর্ট দিতে গিয়ে ঢাক ঢাক গুড়গুড় অবস্থা বা ঢেকে রাখার প্রবণতা তাদের মধ্যে কাজ করে। এটিই আমার মনে হচ্ছে।”
স্বাস্থ্য অধিকার নিয়ে আন্দোলন করেন ডা: নাজমুন নাহার। তিনি বলেছেন, ডেঙ্গুতে মৃত্যুর ঘটনা যেহেতু সরকার অস্বীকার করছে না, সে কারণে সব হাসপাতাল থেকে তথ্য সংগ্রহ করে তারপর পরিসংখ্যান দেয়া উচিত বলে তিনি মনে করেন।
তবে ডা: লেনিন চৌধুরী জানিয়েছেন, এ বছর সরকার, বেসরকারি হাসপাতালগুলোর কাছ থেকে ডেঙ্গু নিয়ে রোগী ভর্তি এবং মৃত্যুর সংখ্যা চায়নি। এরপরও কিছু হাসপাতাল তা সরকারকে দিচ্ছে।
এদিকে সরকারের একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ করা হয়েছে। সেখান থেকে প্রতিদিন যে পরিসংখ্যান দেয়া হচ্ছে,তাতেই মৃত্যুর সংখ্যা কম দেখা যাচ্ছে।
এই নিয়ন্ত্রণ কক্ষের প্রধান ডা: আয়শা আকতার বলছিলেন, সরকারি বিশেষজ্ঞ কমিটি থেকে মৃত্যুর নিশ্চিত খবর পাওয়ার পর তারা সেটাই প্রকাশ করেন।
সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে আটজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সমন্বয়ে ডেথ রিভিউ নামের একটি কমিটি করা হয়েছে। এই বিশেষজ্ঞ কমিটি এপর্যন্ত বিভিন্ন হাসপাতালে মৃত্যু হওয়া ৪০ জনের তথ্য সংগ্রহ করে তা যাচাই করার পর ডেঙ্গুতে ২৩জনের মৃত্যুর বিষয় নিশ্চিত করেছে।
রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের পরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেছেন, একজনের মৃত্যুর কারণ যাচাই করতে বিশেষজ্ঞ কমিটিকে তিন ধরণের তথ্য সংগ্রহ করতে হয়।
“প্রথমত মৃত্যু হওয়া রোগীর চিকিৎসা সংক্রান্ত সব কাগজপত্র এবং দ্বিতীয়ত তার রক্তের স্যাম্পল হাসপাতালে থাকলে তা সংগ্রহ করা হয়। এছাড়া রোগীর ইতিহাস বা বিস্তারিত তথ্য অনেক সময় থাকে না, সেই রোগীর একাধিক ঘনিষ্ট আত্নীয়ের সাথে কথা বলে তথ্য নেয়া হয়।”
“এই তিন ধরণের তথ্য সংগ্রহ করার পরই ডেথ রিভিউ কমিটি সেগুলো বিশ্লেষণ করেন। এরপরই তারা সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে, মৃত্যুটা ডেঙ্গুর কারণে নাকি অন্য কোন কারণে হয়েছে। এখানে আসলে লুকোচুরি করার কিছু নেই।”
সরকারি হিসেবে গত ২৪ ঘন্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে প্রায় আড়াই হাজার নতুন রোগী ভর্তি হয়েছে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে। এবং এপর্যন্ত মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৩২ হাজার ছাড়িয়েছে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন