ডোনাল্ড ট্রাম্পের ধনকুবের বাবা আসলে কে ছিলেন?

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পরিবার নিয়ে আবারো শুরু হয়েছে নানা কথাবার্তা। তবে এবার আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাবা ফ্রেড ট্রাম্প।

নিউ ইয়র্ক রাজ্যের কর বিভাগ নিশ্চিত করেছে যে নিউ ইয়র্ক টাইমস পত্রিকার একটি দাবি তারা তদন্ত করছে – যেখানে অভিযোগ আনা হয় ডোনাল্ড ট্রাম্প কয়েক মিলিয়ন ডলারের কর ফাঁকি দিতে সাহায্য করে তাঁর পরিবার এবং তাঁর সম্পদ বৃদ্ধি করেছেন।

ডোনাল্ড ট্রাম্প সবসময়ই নিজেকে একজন স্ব-প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী – যিনি পরিবারের কাছ থেকে খুব সামান্যই সাহায্য নিয়েছেন – হিসেবে দাবি করে এসেছেন।

কিন্তু মার্কিন প্রেসিডেন্টের এই দাব কতটা যৌক্তিক? আর তাঁর পিতার সম্পর্কে কতটুকুই বা আমার জানি?

কে ছিলেন ফ্রেড সি. ট্রাম্প?

ট্রাম্প সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা কিন্তু মাত্র ১৭ বছর বয়সেই সাফল্যের পথে হাঁটা শুরু করেন যখন মা’য়ের সাথে কনস্ট্রাকশন ব্যবসা শুরু করেন।

১৯০৫ সালে জার্মান অভিবাসী এলিজাবেথ ক্রাইস্ট আর ফ্রেডেরিক ট্রাম্প সিনিয়রের ঘরে জন্ম হয় ডোনাল্ড ট্রাম্পের পিতা ফ্রেডেরিক ক্রাইস্ট ট্রাম্পের।

১৩ বছর বয়সে ফ্রেডেরিক ট্রাম্পের বাবা মারা যান।

১৯২০ এর দশকে ‘কুইন্স’ অঞ্চলে এক পরিবারের উপযোগী ছোট বাড়ি বিক্রির মধ্যে দিয়ে যাত্রা শুরু করে ফ্রেডেরিক ট্রাম্পের ব্যবসা।

তবে যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ব উপকূলে মাঝারি আয় করা পরিবারদের সহজে গৃহায়ন সুবিধা দিয়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় দারুণ ব্যবসাসফল হন ফ্রেড ট্রাম্প।

সেসময় গৃহায়ন খাতে মার্কিন সরকারের বিনিয়োগকে কাজে লাগিয়ে ব্যবসা বড় করেন তিনি।

উৎকৃষ্ট মানের বিল্ডিং বানানোয় প্রসিদ্ধ ছিলেন ফ্রেড ট্রাম্প। তাঁর বানানো অনেক স্থাপনা এখনো টিকে আছে।

বিতর্ক

ফ্রেড ট্রাম্প সাধারণত সরকারি অর্থায়ন প্রকল্পগুলো কম মূল্যে কিনে নিতেন এবং তা বেশি দামে বিক্রি করে অতিরিক্ত মুনাফা করতেন।

এই পদ্ধতি আইনগতভাবে সিদ্ধ হলেও ১৯৫৪ সালে কংগ্রেসের সামনে জবাবদিহি করতে হয় তাঁকে।

১৯৭০ সালে তাঁর নামে সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে বৈষম্যমূলক আচরণ করার অভিযোগ আনা হয়। তিনি কৃষ্ণাঙ্গ ও পুয়ের্তো রিকো’র অভিবাসীদের কাছে বাড়ি ভাড়া না দেয়ায় অভিযোগ ওঠে তাঁর নামে।

সেসময় তাঁর বিরুদ্ধে নাগরিক অধিকার আইনে মামলা হয় এবং সেসময় পিতার পক্ষে আগ্রাসী ভূমিকা রাখায় পত্র-পত্রিকায় ডোনাল্ড ট্রাম্পের ছবি নিয়মিত পত্র-পত্রিকায় ছাপা হয়।

কোনো ধরনের অবৈধ বা অনৈতিক কার্যক্রম প্রমাণিত না হওয়ায় শেষ পর্যন্ত আগায়নি ঐ মামলা।

ধনী পিতার ধনী সন্তান

ফ্রেড ট্রাম্প একবার ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্পর্কে বলেছিলেন, “ওর দূরদর্শিতা প্রশংসনীয়, আর সে যাতেই হাত দেয় তা’ই যেন সোনায় পরিবর্তিত হয়।”

ডোনাল্ড ট্রাম্প অবশ্য একবার দাবি করেছিলেন তিনি তাঁর বাবার কাছ থেকে ১ মিলিয়ন ডলার ঋণ নিয়ে ফ্রেড ট্রাম্পের ‘ক্ষুদ্র’ আঞ্চলিক গণ্ডি থেকে বের হয়ে এসেছিলেন। আর ঐ ১ মিলিয়ন ডলার সুদসহ ফেরত দিয়েছিলেন বলেও দাবি করেছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।

তবে নিউ ইয়র্ক টাইমসের ভাষ্যমতে, বর্তমানের হিসেব অনুযায়ী বোবার রিয়েল এস্টেট সাম্রাজ্য থেকে অন্তত ৪১৩ মিলিয়ন ডলার মূল্যমানের সম্পদ পেয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। যার মধ্যে একটি বড় অংশই ‘সন্দেহজনক কর পরিকল্পনা’ অবলম্বন করে তৈরি করা হয়েছে।

ফ্রেড ট্রাম্পের ২০০’র বেশি কর বিবৃতির উল্লেখ করে নিউ ইয়র্ক টাইমস প্রতিবেদন করে যে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রয়াত পিতা-মাতা তাঁদের সন্তানদের প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার দিয়ে গেছেন – কর সংক্রান্ত কাগজে উল্লেখিত রয়েছে যে এর বিপরীতে ৫২.২ মিলিয়ন ডলার কর দিয়েছেন তারা (প্রায় ৫%) – যেখানে আইন অনুযায়ী করের অঙ্কটা হওয়া উচিত ছিল ৫৫০ মিলিয়ন ডলার।

এই তদন্তে আরো বলা হয় যে কর ফাঁকি দেয়ার উদ্দেশ্যে ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তাঁর সহোদররা ফ্রেড ট্রাম্পের সম্পদের মূল্যমান বহুগুণ কম হিসেবে উল্লেখ করে।

ফ্রেড ট্রাম্পের মৃত্যুর দেড় বছর আগেই তাঁর উত্তরসূরিরা তাদের পিতার অধিকাংশ সম্পদের মালিকানা পেয়ে যায়। ঐসময় তাঁরা সম্পদের মূল্যমান উল্লেখ করেছিল ৪১.৪ মিলিয়ন ডলার – যা আসলে ছিল এর চেয়ে বহুগুণ বেশি।

সম্পদের প্রদর্শন

সম্পদের পাহাড় গড়লেও তা প্রদর্শনে বিশ্বাস করতেন না ফ্রেড ট্রাম্প – ১৯৯৯ সালে ফ্রেড ট্রাম্প মারা যাওয়ার পর এমনটাই লেখা হয়েছিল নিউ ইয়র্ক টাইমসে।

৯৩ বছর বয়সে তিনি যখন মারা যান, তখন তিনি কুইন্সের জ্যামাইকা এস্টেটে থাকতেন, যেখানে তাঁর সন্তানরা বেড়ে উঠেছিল। তাঁর মৃত্যুর এক বছর পর তাঁর স্ত্রী ম্যারি অ্যান মারা যায়।

ফ্রেড ট্রাম্পের এই মনোভাব তাঁর ছেলে ডোনাল্ড ট্রাম্পের মনোভাবের চেয়ে অনেকটাই ভিন্ন।

২০১৬’তে নির্বাচনী প্রচারণার সময় ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছিলেন যে তাঁর ব্যক্তিগত মূল্য ১০ বিলিয়ন ডলার – যদিও এই অঙ্ক নিয়ে যথেষ্ট বিতর্ক রয়েছে।

তবে ৪৫তম মার্কিন প্রেসিডেন্ট সবসময়ই তাঁর বাবার প্রশংসা করেছেন।

ফ্রেড ট্রাম্পকে সবসময় নিজের অনুপ্রেরণা হিসেবে দাবি করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। বরাবর বলেছেন যে তিনি শুধু তাঁর বাবার অর্থ-বিত্তই উত্তরাধিকার সূত্রে পাননি, অর্জন করেছেন তাঁর ব্যবসায়িক চিন্তাধারাও।

-বিবিসি বাংলা