ড্রোনে ধরা পড়ছে উন্নয়ন প্রকল্পের কারসাজি

সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের নানা অনিয়ম ধরা পড়ছে ড্রোনের মাধ্যমে। অনেক প্রকল্প এলাকা বেশি বড় হওয়ায় পুরোটা ঘুরে দেখা সম্ভব হয় না। প্রকল্প তত্ত্বাবধানের দায়িত্বে থাকা পরিকল্পনা কমিশনের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) পক্ষে কাজটি কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়ায়।

তাই প্রকল্পের অনিয়ম বা অসংগতির বিষয়টি ধরে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জবাবদিহির আওতায় আনতে ড্রোন প্রযুক্তি ব্যবহার শুরু করেছে আইএমইডি।এরই মধ্যে এই প্রযুক্তি ব্যবহারের সুফল আসতে শুরু করেছে।

সম্প্রতি রাজশাহীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হাই-টেক পার্ক প্রকল্প পরিদর্শনে যান আইএমইডির কর্মকর্তারা। হাই-টেক পার্কের প্রধান স্থাপনা জয় সিলিকন টাওয়ার ১৪ তলা হওয়ায় ড্রোন দিয়ে পরিদর্শনের সিদ্ধান্ত নেন তাঁরা। ড্রোনটি টাওয়ার ঘুরে ছবি তোলে।

সেখানে ধরা পড়ে ভবনের ১৪ তলার ওপরের পানির পাইপ ফাটা, যেখান থেকে পানি বের হচ্ছে। পরে ত্রুটিপূর্ণ পাইপ পরিবর্তনের নির্দেশ দেন কর্মকর্তারা।

গাজীপুর মেডিক্যাল কলেজ প্রকল্প পরিদর্শনে গিয়ে আইএমইডির কর্মকর্তারা ড্রোনের মাধ্যমে দেখতে পান, সেখানে কিছু জায়গায় দেয়াল না তুলেই সীমানাপ্রাচীরের কাজ শেষ করা হয়েছে। দেয়াল পুরোটা হয়নি অথচ পুরো কাজের টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে।আইএমইডির নির্দেশে এখন দেয়ালের বাকি অংশ করা হচ্ছে।

আইএমইডির এক কর্মকর্তা জানান, একটি প্রকল্প পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে নিচু জায়গা বালি দিয়ে ভরাট করা হয়েছে। ১২ ফুট ভরাট করার কথা থাকলেও কতটুকু ভরাট হয়েছে তা বোঝার উপায় নেই। তখন তিনি ড্রোন উড়িয়ে চারপাশের নিচু জায়গার ভিউ নিয়ে দেখতে পান, সেখানে পাঁচ থেকে সাত ফুট বালু ভরাট করা হয়েছে। অথচ বিলে ১২ ফুট ভরাটের বিষয়টি উল্লেখ রয়েছে।

তিনি বলেন, প্রকল্পের চুরি ধরতে ড্রোন প্রযুক্তি খুব কার্যকর। পরীক্ষামূলকভাবে কয়েকটি প্রকল্পে কিছু অনিয়ম ধরা পড়েছে। ড্রোন ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা গেলে প্রকল্পে অনিয়ম কমবে।

এমন অনেক প্রকল্পের অসামঞ্জস্য উঠে আসছে ড্রোন প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে। এ জন্য সম্প্রতি আইএমইডি তাদের কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছে, বছরে একটি প্রকল্পে হলেও ড্রোন ব্যবহার করতে হবে। যাতে তাঁরা দ্রুত প্রযুক্তির ব্যবহার শিখতে পারেন।

সম্প্রতি আইএমইডি সচিব আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ বিষয়ে আইএমইডি সচিব বলেন, ‘অনেক সময় পুরো প্রকল্প ঘুরে দেখা সম্ভব হয় না। তাই আমরা প্রকল্প পরিদর্শনে ড্রোন ব্যবহারের নির্দেশ দিচ্ছি। যাতে প্রকল্পের আপডেট পরিদর্শনে উঠে আসে। আমরা ধাপে ধাপে সবাইকে প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। অনেকে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রকল্পের কিছু অসামঞ্জস্য তুলে এনেছেন।’

জানা গেছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে আইএমইডি দুটি ব্র্যান্ডের তিনটি ড্রোন কিনেছে। সেগুলো হচ্ছে ডিজেআই ফ্যান্টম ৪ প্রো এবং ডিজেআই ম্যাভিক ৩। যার মাধ্যমে কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু হয়েছে। এ পর্যন্ত ৫০ থেকে ৬০ জন কর্মকর্তা ড্রোন প্রশিক্ষণ পেয়েছেন বলে জানা গেছে। গত অর্থবছরে আইএমইডি সীমিত আকারে ড্রোন ব্যবহার শুরু করেছিল। এর মধ্যে প্রায় ১৫টি প্রকল্পে ড্রোন ব্যবহার করেছে সংস্থাটি।

পাঁচ কেজির বেশি ওজনের উড়ন্ত ড্রোনের জন্য সিভিল এভিয়েশন অথরিটি অব বাংলাদেশের (সিএএবি) অনুমোদন লাগে। কিন্তু আইএমইডি এখনো সিএএবি থেকে আনুষ্ঠানিক অনুমতি পায়নি। তবে অনুমতি পাওয়ার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন বলে জানিয়েছেন আইএমইডিসচিব।

জানা গেছে, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের আশপাশে প্রশিক্ষণ দেওয়া যাচ্ছে না। কারণ, ওই এলাকার আশপাশে পুরনো বিমানবন্দর, জাতীয় সংসদ, প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনসহ বেশ কিছু অতিগুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা রয়েছে। বর্তমানে ঢাকার উপকণ্ঠে মুন্সীগঞ্জ ও পূর্বাচলে আইএমইডি কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।

আইএমইডি সূত্রে জানা গেছে, লেজার প্রযুক্তির ড্রোন কিনবে তারা। কারণ, এই প্রযুক্তির ড্রোন দিয়ে আকাশ থেকে পানির নিচের গভীরতাও মাপা যায়। এই ড্রোন নদী খনন প্রকল্প পরিদর্শনের সময় ব্যবহার করা যাবে।

কারণ ঠিকাদাররা নদীর তলদেশ যতটা গভীর করে খনন করার কথা, তা করেন না বলে অভিযোগ রয়েছে। আবার পানির নিচে গিয়ে গভীরতা মাপাও যায় না। তাই এই প্রযুক্তির ড্রোন ব্যবহার করবে আইএমইডি। এ ছাড়া প্রকল্প এলাকার জমি অধিগ্রহণ ঠিকমতো হয়েছে কি না, সেটি দেখার জন্য জিও ম্যাপিং প্রযুক্তির ড্রোন কেনার পরিকল্পনা রয়েছে আইএমইডির।