ড. কামালের ঐক্য প্রক্রিয়া : বিএনপির জন্য কী লাভ?
বাংলাদেশে একটি সরকার বিরোধী বৃহত্তর রাজনৈতিক জোট গঠনের লক্ষ্যে শনিবার ঢাকায় এক প্রকাশ্য সভায় যোগ দিয়েছিলেন বিএনপি, গণফোরাম, বিকল্পধারা, যুক্তফ্রন্ট, সহ আরও কিছু ছোট ছোট রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ।
‘জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া’ নামে একটি সংগঠনের ব্যানারে এ সমাবেশের মূল উদ্যোক্তা ড: কামাল হোসেন।
এ সমাবেশ বিকল্পধারা এবং রাজনৈতিক মোর্চা যুক্তফ্রন্টের শীর্ষ নেতা বদরুদ্দোজা চৌধুরী উপস্থিতি ছিলেন।
এছাড়াও বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ চারজন সিনিয়র নেতা যোগ দিয়েছিলেন।
ক্ষুদ্র-ক্ষুদ্র কয়েকটি বাম এবং ইসলামপন্থী দলের নেতারাও তাতে যোগ দেন।
গত কয়েক দিন আগে ‘ঐক্য প্রক্রিয়া’ যে পাঁচ-দফা দাবি তুলে ধরেছে তার মধ্যে রয়েছে সংসদ ভেঙ্গে দিয়ে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন এবং নির্বাচনের সময় সেনা বাহিনীকে বিচারিক ক্ষমতা দিয়ে মোতায়েন করা।
বিকল্প ধারা বাংলাদেশের অন্যতম নেতা মাহি বি চৌধুরী বলছেন, যে রাজনৈতিক ঐক্য গড়ে তোলার চেষ্টা করা হচ্ছে সেখানে এখনো কিছুটা মতভেদ আছে।
মি: চৌধুরী বলেন, তাদের পাঁচ-দফা দাবি বিএনপির কিছু দাবির সাথে মিলেছে। কিন্তু পুরো বিষয়টি একরকম নয়।
“এটা সম্পূর্ণ একই জিনিস নয়। একই জিনিস হলে তো ঐক্য হয়েই যেত,” বলেন মি: চৌধুরী
রাজনীতির মাঠে প্রধান বিরোধী দল অনেক ধরেই সরকারের চাপে কোনঠাসা অবস্থায় আছে বলে মনে করেন অনেকেই।
এমন অবস্থায় দলটি চাইছে নির্বাচনের আগে সরকার বিরোধী আন্দোলনে ড. কামাল হোসেন, বদরুদ্দোজা চৌধুরীসহ আরো পরিচিত রাজনৈতিক ব্যক্তিদের পাশে পেতে।
তাতে আন্দোলনে সুবিধা হবে বলে দলটির কোন কোন নেতার ধারণা।
গতরাতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ কয়েকজন সিনিয়র নেতা বদরুদ্দোজা চৌধুরীর বাসায় গিয়ে বৈঠকও করেছেন।
বিএনপি নেতা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলছেন, সরকারের উপর রাজনৈতিক চাপ তৈরির জন্য বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মধ্যে ঐক্য গড়ে তোলা জরুরী এবং সেটাই করার চেষ্টা হচ্ছে।
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, “পাঁচটি মৌলিক বিষয়ে আমরা দেখতে পাচ্ছি পরিষ্কারভাবে ঐকমত্য হয়েছে। এবং আমরা সবাই সামনের দিকে চলবো।”
ড. কামাল হোসেন এবং বদরুদ্দোজা চৌধুরী সরকার বিরোধী যে রাজনৈতিক ঐক্যের উদ্যোগ নিয়েছে সেটি নিয়ে সমালোচনামূখর ক্ষমতাসীন দল এবং তাদের রাজনৈতিক মিত্ররা।
সে জোটের কোন কোন নেতা এরই মধ্যে বলেছেন, এ ঐক্যের নামে তারা মূলত বিএনপি এবং জামায়াতে ইসলামীর এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে চান।
যদিও ঐক্য প্রক্রিয়া থেকে পরিষ্কার করে বলা হয়েছে তাদের উদ্যোগে জামায়াতে ইসলামীর কোন স্থান নেই।
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, এ রাজনৈতিক ঐক্য প্রক্রিয়ার ভবিষ্যৎ কী?
রাষ্ট্রবিজ্ঞানী দিলারা চৌধুরী মনে করেন, এর ভবিষ্যৎ পরিষ্কার না হলেও এটি বিএনপি জন্য কিছুটা হলেও সুবিধাজনক অবস্থা তৈরি করতে পারে।
দিলারা চৌধুরী বলেন, “ঐক্যজোটের যারা নেতা আছেন, তারা জনগণের কাছে খুব পরিচিত। কিন্তু ভোটের রাজনীতিতে তারা কতটুকু ভোটার টানতে পারবেন তাতে যথেষ্ট সন্দেহ আছে।”
তবে এ রাজনৈতিক ঐক্য হলে সরকার বিরোধী আন্দোলনে বিএনপি ‘পায়ের তলায় মাটি পাবে’ বলে উল্লেখ করেন দিলারা চৌধুরী।
তাঁর ধারণা একদিকে মাঠ পর্যায়ে বিএনপির সমর্থন এবং নেতা-কর্মী আছে, অন্যদিকে ড. কামাল হোসেন এবং বদরুদ্দোজা চৌধুরীর পরিচিতি আছে।
এ দুটো বিষয় একত্রিত হলে বিএনপির জন্য রাজনৈতিক সুবিধা হবে বলেই মনে করেন দিলারা চৌধুরী।
তবে ঐক্য প্রক্রিয়া নিয়ে কথাও হলেও কবে নাগাদ সেটির আনুষ্ঠানিক রূপ পাবে কিংবা কিভাবে ঐক্য গঠন করা হবে সে বিষয়ে পরিষ্কার কোন চিত্র দিতে পারছেন ঐক্য প্রক্রিয়ার নেতারা।
-বিবিসি বাংলা
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন