ড. কামালের নেতৃত্ব : কী বলছে তৃণমূল বিএনপি?

বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্য ফ্রন্ট নামে সরকার বিরোধী যে জোট গড়ে উঠেছে সে জোটে চারটি দল থাকলেও দেশজুড়ে কর্মী সমর্থকদের কার্যক্রম কিংবা সাংগঠনিক তৎপরতা দেখা যায় শুধু মাত্র বিএনপিরই।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মতো এ দলটিরও তৃণমূল পর্যায়ে নানা কার্যক্রম চোখে পড়ে।

আর গত কয়েকটি সাধারণ নির্বাচনের ফল পর্যালোচনা করলেও ভোটের হিসেবে বিএনপি আর জাতীয় ঐক্য ফ্রন্টের অন্য দলগুলোর মধ্যে বিশেষ করে গণফোরাম ও আসম আব্দুর রবের জাসদের আকাশ সমান পার্থক্যই চোখে পড়ে।

সেখানে গণফোরাম নেতা কামাল হোসেনের নেতৃত্বে বিএনপির কাজ করাকে কিভাবে দেখছেন?

এমন প্রশ্নের জবাবে বরগুনা জেলা বিএনপির সভাপতি নজরুল ইসলাম মোল্লা বিবিসিকে বলেন, “ড: কামাল হোসেন আন্তর্জাতিক মুখ। দেশে বিদেশে তিনি সুপরিচিত। তার একটি অবস্থান আছে। সেজন্যই বিএনপি মনে করেছে তাকে সামনে রেখে ঐক্য হলে দল উপকৃত হবে। সেজন্যই এটি করা হয়েছে।”

মি. ইসলাম বলছেন, বর্তমান পরিস্থিতির একটি পরিবর্তন আনাটাই যে দল হিসেবে তাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সেটি তারা বুঝতে পারেন। আর সে কারণেই জোটের নেতৃত্বে কে আছে সেটি এখন আর তাদের কাছে মুখ্য নয়।

প্রায় একই ধরনের মতামত দিয়ে নেত্রকোনা জেলা মহিলা দলের নেত্রী আরিফা জেএসমিন বলছেন, পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটাতে দলের রাজনৈতিক কৌশল তারা মাঠপর্যায়ে থেকেও বুঝতে পারেন।

তিনি বলেন, “শুধু ভোটের কথা চিন্তা করলে হবেনা। আসল হলো গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও ভোটের অধিকার আদায়। এখানে কোনো দ্বিমত নেই। সবাই পরিপক্ব। উনার মতো একজন বিজ্ঞ ব্যক্তি, তাকে দায়িত্ব দিলে সমস্যা তো নেই।”

তবে প্রকাশ্যে গণমাধ্যমে জোট নিয়ে মন্তব্য করার ক্ষেত্রে যথেষ্ট সতর্ক রয়েছেন বিএনপির মাঠ পর্যায়ের কর্মীরা।

কয়েকটি জেলার সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদক বলছেন, গত এক দশকে বিশেষ করে দলটির দুই শীর্ষ নেতা খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে ঘিরে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তাতে কামাল হোসেন জোটের নেতা হওয়ায় তা তাদের জন্য স্বস্তিই নিয়ে এসেছে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বিএনপির সহ সভাপতি নাছির হাজারী বলছেন, রাজনৈতিক কারণেই বর্তমান পরিস্থিতিতে কামাল হোসেনের নেতৃত্ব মানতে তাদের কোনো আপত্তি নেই।

তিনি বলেন, “কামাল হোসেন ভালো রাজনীতিবিদ। তিনি আসাতে আমাদের দলও শক্তিশালী হচ্ছে। উনার নেতৃত্বে আন্দোলন ও নির্বাচনের পরিবেশ তৈরির গতি বাড়বে। ড: কামালের মতো লোক নেতৃত্ব দিলে আমাদের আপত্তি নেই”।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক সিনিয়র সাংবাদিক রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ বলছেন, বিএনপি বাস্তবতা ও ভবিষ্যৎ বিবেচনা করেই যে অনেকটা ছাড় দিয়ে জোট করেছে এটা দলটির তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত সব নেতাকর্মীরাই উপলব্ধি করতে পারছেন।

তিনি বলেন, “বিএনপি ও আওয়ামী লীগের সমর্থকরা সহজে নড়েনা। এটা নিয়ে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হবে বলে মনে হয়না। কামাল হোসেনের ইমেজ আর বিএনপির ভোট ব্যাংক বিবেচনায় নিলে একটা শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হতে পারে। আর এটি বিএনপি কর্মীরাও জানে”।

মি. আহমেদ বলছেন দলের শীর্ষ দুই নেতার অনুপস্থিতিতে কামাল হোসেনের নেতৃত্বে বিএনপির জোট বরং দলটি কর্মীদের ভোটের আগে কিছুটা হলেও চাঙ্গা করে তুলেছে।

তবে তার মতে নির্বাচন আসলে আসন বণ্টন নিয়ে পরিস্থিতি কেমন দাঁড়ায় সেটিই হবে দেখবার বিষয়।

-বিবিসি বাংলা