ঢাকায় মোটর সাইকেল কেন জনপ্রিয় বাহন হয়ে উঠলো?
ঢাকায় যাত্রী পরিবহনে সবচেয়ে জনপ্রিয় বাহন হয়ে উঠেছে মোটর সাইকেল। আর এই জনপ্রিয়তা মূলত এসেছে বিভিন্ন রাইড শেয়ারিং অ্যাপের হাত ধরে।
বাংলাদেশ সড়ক যোগাযোগ কর্তৃপক্ষের সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী ঢাকায় মোট নিবন্ধিত বাইকের সংখ্যা ৫ লাখ ৮৫ হাজার ৪৯০টি।
এরমধ্যে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে ঢাকায় মোট নিবন্ধিত মোটর সাইকেলের সংখ্যা প্রায় ৭৩ হাজার।
সে তুলনায় অন্যান্য যানবাহনের নিবন্ধন সংখ্যা অনেকটাই কম।
কেন জনপ্রিয় হল মোটর সাইকেল?
মূলত কম পয়সায় দ্রুত যাতায়াত তারমধ্যে ডিসকাউন্ট সুবিধার কারণে ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে অ্যাপভিত্তিক মোটর সাইকেল রাইড পরিসেবা।
ফটোগ্রাফার আদনান আদিদকে প্রায়ই তার কাজের প্রয়োজনে ঢাকার বিভিন্ন প্রান্তে ছুটে বেড়াতে হয়। এই যাতায়াতের ক্ষেত্রে তিনি পুরোপুরি এই মোটর বাইকের ওপর নির্ভর করেন।
বিবিসিকে তিনি জানান, ” খুব ইমার্জেন্সি কোন এসাইনমেন্ট থাকলে বাইকে করে সবচেয়ে কম সময়ে সেখানে পৌঁছানো যায়। আমি যে অ্যাপগুলো ব্যবহার করি সেগুলোর একটা না একটায় ডিসকাউন্ট থাকেই। তখন সেই ভাড়াটা অনেক কম আসে। তাছাড়া বাইকে করে আপনি এমন সব রাস্তায় যেতে পারবেন যেখানে হয়তো গাড়ি চালানো সম্ভব না।”
তাছাড়া এই রাইড পরিবহন সেবাগুলো যাত্রীদের নিরাপত্তায় কয়েকটি সেফটি ফিচার যুক্ত করায় মোটর সাইকেল রাইডে আগ্রহী হচ্ছেন নারীরাও।
এসব সেফটি ফিচারের মধ্যে রয়েছে চালক ও গাড়ি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্যসহ জিপিএস ট্র্যাকিং, টু-ওয়ে ফিডব্যাক ও ট্রিপ ডিটেইলস শেয়ারিং।
এছাড়া গাড়ি খোঁজা বা ভাড়া নিয়ে দর কষাকষির কোন ঝামেলা না থাকায় এই মোটর সাইকেল রাইড নেয়ার কথা জানান ঢাকার বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী মারফিয়া হায়দার।
বিবিসিকে তিনি বলেন, “অফিস ছুটি হওয়ার পর বাসগুলোয় এতো ভিড় থাকে যে ওঠার উপায় থাকেনা। উঠতে পারলেও এতো বেশি ধাক্কাধাক্কি হয়। এটা মেয়েদের জন্য সমস্যার। এক্ষেত্রে অ্যাপের মাধ্যমে মোটর সাইকেল ডেকে যাতায়াত করি। মাঝেমাঝে আমার কোন বন্ধু বা কলিগ তাদের বাইকে আমাকে পৌঁছে দেন।”
“রাইডের মাধ্যমে বাইক ডাকলে বাস ভাড়া থেকে একটু বেশি খরচ পড়লেও গাড়ি থেকে অনেক কম। সবচেয়ে বড় কথা হল, মোটর সাইকেলের মাধ্যমে দ্রুত যানজট ঠেলে গন্তব্যে পৌঁছানো যায়। আর এটা আমাকে মাঝ রাস্তায় নামিয়ে দেয় না। একদম গন্তব্য পর্যন্ত পৌঁছে দেয়। এটাই সবচেয়ে বড় সুবিধা।”
অর্থ আয়ের সুযোগ:
এই মোটর সাইকেল যানজটের মধ্যে দ্রুত পরিবহন নিশ্চিত করার পাশাপাশি অনেক তরুণদের জন্য অর্থ আয়েরও ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত অবস্থায় প্রায় প্রতিদিনই অফিসে যাওয়া আসার পথে এই রাইড সেবা দিয়ে থাকেন দেওয়ান শাওন।
এতে একদিকে যেমন তার বাইক রক্ষণাবেক্ষণ খরচ উঠে আসে তেমনি ছুটির দিনে অবসরে কয়েক-ঘণ্টা এই সার্ভিসের মাধ্যমে তার পকেট খরচও এসে পড়ে।
দেওয়ান শাওন জানান, “আমি আগে থেকেই বাইক চালাই, তাই বলতে গেলে এর মাধ্যমে অর্থ উপার্জনে আমার কোন কিছুই ইনভেস্ট করতে হয়নি। যা পাচ্ছি তার পুরোটাই লাভ। আমার মতো এখন অনেকেই ফ্রিল্যান্সার রাইড সার্ভিস দিচ্ছে। তবে এমন অনেকেই আমি চিনি যারা সকাল সন্ধ্যা বাইক রাইড দেন। এখন এটাই তাদের পেশা।
বিশ্বের সবচেয়ে বড় মোটর পরিসেবা বাংলাদেশে:
ঢাকায় মোটর সাইকেলের এতো জনপ্রিয়তার কারণে যুক্তরাষ্ট্রের রাইড শেয়ারিং অ্যাপভিত্তিক প্রতিষ্ঠান “উবার” এর মোটর সাইকেল সেবা হয়ে উঠেছে বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বড় মোটর সাইকেল পরিসেবা।
প্রতিষ্ঠানটি তাদের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এমনটা দাবি করে।
সেখানে তারা জানায় যে, বর্তমানে তাদের গাড়ি ও মোটর সাইকেল মিলিয়ে মোট এক লাখ চালক রয়েছে এবং প্রতি সপ্তাহে আড়াই হাজার চালক যুক্ত হচ্ছে।
তবে এরমধ্যে মোটর বাইক চালকের সংখ্যা কতো সেটা জানা যায় নি।
গত বছরের নভেম্বর থেকে ঢাকায় প্রথমবারের মতো মোটরসাইকেল সেবা চালু করে প্রতিষ্ঠানটি। যার নাম রাখা হয় “উবার মোটো”।
বর্তমানে চট্টগ্রাম শহরেও তারা এই সেবাটি পরিচালনা করছে।
ভারতের হায়দ্রাবাদে উবার প্রথম মোটরসাইকেল রাইড শেয়ার সেবা শুরু করলেও সেটা বাংলাদেশের মতো জনপ্রিয়তা পায়নি।
মোটর সাইকেলে নিরাপত্তায় করণীয়:
তবে ঢাকায় ক্রমেই এই মোটর সাইকেল বেড়ে যাওয়ায় দুর্ঘটনার হারও বেড়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন অ্যাকসিডেন্ট রিসার্চ সেন্টারের পরিচালক মিজানুর রহমান।
তিনি বলেন, “গাড়ির ভেতরে আপনি যেমন চারিদিক থেকে একটা নিরাপত্তা বলয়ে থাকেন, সেক্ষেত্রে মোটর বাইকের চারিদিক খোলা। দুই চাকার ওপর ভারসাম্য গাড়ির মতো এতো ভাল থাকেনা। এ কারণে আরোহীদের পাশাপাশি পথচারীরাও দুর্ঘটনার ঝুঁকিতে থাকেন।”
ট্রাফিক আইনে এই মোটর বাইকে চালকের পাশাপাশি যাত্রীর হেলমেট পরা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে এবং রাইড শেয়ারিং অ্যাপগুলোয় এখন চালকরাই এই হেলমেট সরবরাহ করে থাকে।
তবে এই হেলমেটগুলোর মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন মিজানুর রহমান। মানসম্পন্ন হেলমেট বলতে তিনি বুঝিয়েছেন ভালো উপাদানের তৈরি এমন হেলমেট যেটা মাথাকে পূর্ণ সুরক্ষা দেয়ার পাশাপাশি কান ও থুতনি রক্ষা করবে।
মিজানুর রহমান বলেন, “এখন রাস্তাঘাটের বেশিরভাগ মোটর সাইকেলের চালক ও আরোহীদের হেলমেট পড়তে দেখা যায়। যেটা বেশ ইতিবাচক। তবে আরোহীরা যে হেলমেটগুলো পড়েন, সেগুলোর মান খুবই খারাপ। যে উদ্দেশ্যে মানুষ এসব হেলমেট পরে থাকে। ওইসব ঠুনকো হেলমেটে কোন উদ্দেশ্য সাধন হয়না। বরং ক্ষতি আরও বেশি।” এছাড়া মোটর সাইকেল চালানোর ক্ষেত্রে ঝুঁকিমুক্ত থাকতে চালকের বাইক চালানোর পারদর্শিতা এবং গতি-সীমার ব্যাপারে সচেতনতার ওপরও গুরুত্ব দেন তিনি।-বিবিসি বাংলা
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন