রাজধানীর প্রধান সড়কে লেগুনা বন্ধ নিয়ে বিতর্ক
রাজধানী ঢাকার কয়েকটি প্রধান সড়কে হিউম্যান হলার বা লেগুনা চলাচল ছিল স্বাভাবিক চিত্র, কারণ বাসের বিকল্প হিসেবে অনেকে এই লেগুনায় চড়েন।
তবে কয়েকদিন ধরে ঢাকার প্রধান কয়েকটি রাস্তায় এই স্বাভাবিক চিত্র দেখা যাচ্ছে না। কারণ গত মঙ্গলবার ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার আসাদুজ্জামান মিয়া এক সংবাদ সম্মেলনে জানান ‘রাজধানী ঢাকার প্রধান সড়কগুলোতে এখন থেকে লেগুনা চলবে না’।
প্রধান সড়ক বলতে ফার্মগেট থেকে মিরপুর ১০, ফার্মগেট থেকে মহাখালী, ফার্মগেট থেকে জিগাতলা, ফার্মগেট থেকে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ হয়ে নিউমার্কেট, ট্যানারি মোড় থেকে নিউমার্কেট, গাবতলী থেকে বাড্ডা ভায়া মহাখালী-গুলশান- উত্তরা মাস্কট প্লাজা ও দিয়াবাড়ি, গুলিস্তান থেকে মালিবাগ রেলগেট-সিপাহীবাগ-গোড়ান, ডিএসসিসি নগর ভবন থেকে পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকা অন্যতম।
ঢাকার রাস্তায় শৃঙ্খলা ফেরাতে মাসব্যাপী কার্যক্রমের অংশ হিসেবে প্রধান সড়কে লেগুনা চলাচল বন্ধের ঘোষণা আসে ডিএমপির পক্ষ থেকে।
তবে অনেক সাধারণ যাত্রী রাস্তায় যাতায়াতের ক্ষেত্রে যেমন লেগুনার ওপর নির্ভরশীল, তেমনি এই যানটির রুট পারমিট, চালক ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আলোচনা -সমালোচনাও রয়েছে।
বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন “অনুমোদিত রুট পারমিট নিয়েই লেগুনাগুলো চলছে। বন্ধ করার ঘোষণার ক্ষেত্রে সে বিষয়টিও বিবেচনায় নিতে হবে”।
তবে ডিএমপি থেকে বলা হয়েছে যে শহরের বাইরে বা উপকন্ঠে লেগুনা চলতে পারে।
সামাজিক মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া
এদিকে প্রধান সড়তে লেগুনা চলাচল বন্ধ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে। কারণ রাজধানী ঢাকার অনেক মানুষ যাতায়াত করেন এই লেগুনাতে করে। অনেকেরই মন্তব্য বাসের বিকল্প এই যানটি বন্ধ হওয়াতে সাধারণ মানুষ পড়েছেন বিপাকে।
এই বিষয় নিয়ে বিবিসি বাংলার ফেসবুক পাতায় অনেকেই নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরেছেন।
যেমন সাঈদ হাসান নামে একজন লিখেছেন- “লেগুনার বিকল্প ব্যবস্থা না করে লেগুনা উঠিয়ে দেওয়া অন্যায়, এতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় জনগণকে। নেতারা এসি গাড়িতে বসে তা বুঝে না। জনবিচ্ছিন্ন নেতাদের থেকে আর কিইবা আশা করা যায়?”।
এমডি খান নামের আরেক ব্যক্তি লিখেছেন “সরকারের উচিত প্রাইভেট গাড়ির উপর নীতিমালা প্রয়োগ করা, কিন্তু তা না করে পাবলিক পরিবহনের উপর নীতিমালা প্রয়োগ করছে।
যে সাইজের প্রাইভেট গাড়িতে ১-৪ যাত্রী চলাচল করে, ঠিক সেই একই সাইজের লেগুনাতে ১৪-১৬ যাত্রী চলাচল করে। রাস্তায় যানজটের জন্য লেগুনা দায়ী না, দায়ী প্রাইভেট কার। তাই এমন নীতিমালা গ্রহণ করুন,যা সাধারণ মানুষের উপকার হয় এবং ঢাকা শহরের যানজট দূর হয়”।
“যেখানে আগে খিলগাঁও থেকে গুলিস্তান যেতাম ১২ টাকা দিয়ে আর সেখান থেকে রিক্সায় যেতে লাগে ৮০ টাকা তারপর আবার রিক্সাদের তেল মারা লাগে।
ডিএমপির আগে এসব রুটে বিকল্প যানবাহন দিয়ে লেগুনা বন্ধ করা উচিত ছিলো। লেগুনা দিয়ে অনেক চিপাচাপা গলিতে যাওয়া যেতো অনেক সহজে, আর এখন ওইসব জায়গা ৩ গুন ভাড়া বেশি দিয়ে যাওয়া লাগে” -লিখেছেন সোয়েব লস্কর।
তবে ভিন্নমত দিয়েছেন সায়িদ এ সায়িদ । তাঁর মতে “লেগুনার চালকের বয়স অনেক কম থাকে, এছাড়া তারা অদক্ষ। লেগুনায় উঠলে নিরাপত্তাহীনতায় থাকতে হয়। শহরে ব্যক্তিগত গাড়ি কমিয়ে সাধারণ পরিবহন বাড়িয়ে যানজট পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা দরকার”।
প্রিন্স রনি লিখেছেন “লেগুনা বন্ধ করার আগে বিকল্প ব্যবস্থা করা উচিত ছিল। এখন আমাদের অনেক দুর্ভোগ বেড়ে গেছে”।
বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ অটো-রিকশা অটোটেম্পু পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাদেরকে পাওয়া যায়নি।
-বিবিসি বাংলা
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন