ঢাকার প্রবেশমূখগুলোতে হচ্ছে চার আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল

আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল হিসেবে ঢাকা মহানগরীর শহরতলির চারটি স্থানকে প্রাথমিকভাবে নির্বাচন করা হয়েছে। স্থানগুলো হচ্ছে বিরুলিয়ার বাটুলিয়া, সাভারের হেমায়েতপুর, কামরাঙ্গীরচরের তেঘরিয়া ও কাঁচপুর।
বাস রুট রেশনালাইজেশন কমিটির নিকট কারিগরি কমিটি কর্তৃক আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল ও ডিপোর জন্য প্রস্তাবিত দশটি স্থানের মধ্যে এই চারটি স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে।

বুধবার ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মোঃ আতিকুল ইসলাম এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস সকাল সাড়ে দশটায় আবদুল্লাহপুর থেকে শুরু করে বিকেল সাড়ে তিনটা পর্যন্ত এই চারটি স্থান পরিদর্শনকালে এ কথা জানান।

বাটুলিয়ায় প্রস্তাবিত বাস টার্মিনাল পরিদর্শন শেষে ডিএনসিসি মেয়র মোঃ আতিকুল ইসলাম বলেন, বাস রুট ফ্র্যাঞ্চাইজি বাস্তবায়ন হলে অন্যান্য জেলার বাসগুলো ঢাকা শহরের মধ্যে ঢুকতে পারবে না। শহরের বাস শহরের ভেতরে চলবে আর শহরের বাইরের বাস অর্থাৎ আন্তঃজেলা বাস একটি নির্দিষ্ট জায়গায় এসে থেমে যাবে। বাস রুট ফ্রেঞ্চাইজি বাস্তবায়নের মাধ্যমে শহরের বাইরের বাস ঢাকার মধ্যে ঢুকতে পারবে না। কারণ এখন শহরের বাসের সাথে আন্তঃজেলা বাসের প্রতিযোগিতা হচ্ছে। এতে কিন্তু আমাদের ট্রাফিক ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ছে, ট্রাফিক জ্যাম হচ্ছে। তাই শহরের বাসকে শহরের ভেতরে চলতে হবে এবং একটি নির্দিষ্ট রুটের মধ্যে চলতে হবে।

আতিকুল ইসলাম আরো বলেন, গত সভাতে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, ঢাকায় ঘাটারচর হতে মতিঝিল পর্যন্ত, যেখানে ১৬০টির বেশী বাস ও ২৯ জনের বেশি মালিকের বাস চলাচল করে। সেটিকে আমরা একটি কোম্পানির মধ্যে নিয়ে আসার জন্য উদ্যোগ নিয়েছি।

বাস মালিক ও শ্রমিকরাও এই উদ্যোগ বাস্তবায়নে সহযোগিতা করছে জানিয়ে ডিএনসিসি মেয়র বলেন, আমরা সবাই চাই একটি শৃংখলা আনতে। তাই শৃঙ্খলা আনার জন্য শহরের বাস শহরের ফ্রেঞ্চাইজ রুট দিয়ে চলবে। তারই পরিপ্রেক্ষিতে পয়লা এপ্রিল থেকে ঘাটারচর-মতিঝিল রুটে আমরা প্রথম (বাস রুট ফ্রেঞ্চাইজি) শুরু করতে যাচ্ছি।

এ সময় ডিএসসিসি মেয়র ব্যারিস্টার শেখ তাপস বলেন, আমরা ইতোমধ্যে বাস রুট রেশনালাইজেশনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে আমরা পুরো গণপরিবহন ব্যবস্থাকে এটি শৃঙ্খলার মধ্যে আনতে চাই। আমরা এরই মাঝে কাজ আরম্ভ করেছি। সে প্রেক্ষিতেই গত সভাতে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল এর জন্য যে দশটি স্থানকে নির্বাচন করা হয়েছে, সেখান থেকে আমরা তালিকা ছোট করে এনেছি। আমরা মনে করেছি যে, সার্বিকভাবে চারটি স্থান গ্রহণযোগ্য হতে পারে। সে প্রেক্ষিতে আজকে আমরা বাটুলিয়ায় সরেজমিন পরিদর্শনে এসেছি।

ডিএসসিসি মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস আরও বলেন, এই চারটি স্থান পরিদর্শনের পর আমরা আগামী জানুয়ারি মাসে বাস রুট রেশনালাইজেশন কমিটির সভা দিয়েছি। সেখানে আমরা সিদ্ধান্ত নেব। সিদ্ধান্তের পর আমরা মন্ত্রণালয়ে পাঠাবো যে কোনগুলোতে টার্মিনাল স্থাপন করা যাবে। আমাদের লক্ষ্য হলো ঢাকা শহর উপর থেকে চাপটা কমিয়ে আনা।

বহির্বিশ্বে আন্তঃজেলা গণপরিবহন শহরের মধ্যে ঢুকে না উল্লেখ করে ডিএসসিসি মেয়র ব্যারিস্টার শেখ তাপস এ সময় আরও বলেন, কিন্তু আমরা লক্ষ্য করি শহরের মধ্যে যে বাস টার্মিনালগুলো আছে, যেমন- মহাখালী, সায়দাবাদ, গাবতলী – আন্তঃজেলা বাসগুলো সেসব টার্মিনাল ব্যবহার করে থাকে। সিটি বাস টার্মিনাল আমাদের কার্যকর নেই। তার মানে যত্রতত্রভাবে সিটি বাসগুলো রাস্তার ওপর দাঁড়িয়ে থেকে যানজট সৃষ্টি করে এবং একটি বিশৃংখল পরিবেশ সৃষ্টি করে। সবকিছু মিলিয়ে সামগ্রিকভাবে গণপরিবহনে একটি শৃঙ্খলা নিয়ে আসতে আমাদের এই কার্যক্রম। আমাদের কার্যক্রম চলমান আছে, যাতে করে আগামী বছরের মধ্যে আমরা একটি সুনির্দিষ্ট রূপরেখার আওতায় আসতে পারি।

পরিদর্শনকালে অন্যান্যের মধ্যে ডিএনসিসির প্রধান নিবার্হী কর্মকর্তা মোঃ সেলিম রেজা, ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী, ঢাকা ট্রান্সপোর্ট কো-অর্ডিনেশন অথরিটি (ডিটিসিএ) এর নির্বাহী পরিচালক খন্দকার রাকিবুর রহমান, দুই সিটি কর্পোরেশন ও রাজউকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ এবং বাস মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।