ঢাকায় বেপরোয়া বাস চালকদের রুখবে কে?
রাজধানীর সড়কে যমদূতে পরিণত হয়েছেন যাত্রীবাহী বাসচালকরা। তারা বেপরোয়া ও নিয়ন্ত্রণহীনভাবে গাড়ি চালাতে গিয়ে কেড়ে নিচ্ছেন সাধারণ মানুষের প্রাণ। কেউ পঙ্গুত্ব বরণ করছেন।
নিয়মিত একের পর এক প্রাণঘাতী দুর্ঘটনার পরও বাসচালকদের হুঁশ ফিরছে না। আর ট্রাফিক পুলিশও তাদের নিয়ন্ত্রণে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
ফলে ঢাকায় নিরাপদ নাগরিক জীবনের জন্য এসব চালককে নিয়ন্ত্রণ করাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
গত মঙ্গলবার বিআরটিসির একটি দোতলা বাসের পেছনের ফটকে দাঁড়িয়ে গন্তব্যে যাচ্ছিলেন সরকারি তিতুমীর কলেজের স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র রাজীব হোসেন (২১)।
বাস থেকে তার ডান হাতটি সামান্য বাইরে বেরিয়ে ছিল। হঠাৎই পেছন থেকে স্বজন পরিবহনের একটি বাস বিআরটিসির বাসটিকে ওভারটেক করতে চেষ্টা করে।
এ সময় দুই বাসের ঘঁষাঘঁষির প্রবল চাপে রাজীবের হাত শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
এতে অল্প বয়সে বাবা-মাকে হারানো তিতুমীর কলেজের ছাত্র রাজীব হোসেনের জীবন অনিশ্চিত হয়ে পড়ে।
এতিম একজন তরুণের জীবনে অন্ধকার নেমে এসেছে বেপরোয়া দুই বাসচালকের খেয়ালখুশির নিষ্ঠুরতায়।
রাজীবের এ ঘটনায় রাজধানীসহ সারা দেশেই আলোচনার ঝড় উঠেছে৷ সবাই বলাবলি করছেন- বেপরোয়া বাসচালকদের কে নিয়ন্ত্রণ করবে, কবে করবে? কখন মানুষ ঘর থেকে বের হয়ে নিরাপদে আবার ঘরে ফেরার নিশ্চয়তা পাবেন?
বেসরকারি ব্যাংক কর্মকর্তা খুরশিদ আলম বলেন, রাস্তায় বের হয়ে নিরাপদে বাসায় ফেরাটাই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ৷ কোনোভাবেই চালকদের নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। এক চালক আরেক চালকের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলে। প্রতিমুহূর্তেই এই ঝুঁকি নিয়ে আমাদের চলতে হচ্ছে৷
তিনি আরও বলেন, আমরা এ পরিস্থিতি থেকে মুক্তি চাই৷ পুলিশ তো চাইলে সব পারে৷ তা হলে বাসচালকদের কেন নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না?
ফার্মগেটের পাশেই চায়ের দোকান রফিকুল ইসলামের। তিনি জানান, রাজীবের মতো দৃশ্য তারা প্রতিদিনই দেখছেন৷ কে কার আগে যাবে, কীভাবে যাবে– এই প্রবণতা চলছেই৷ পথচারীরা যেখানে দাঁড়িয়ে থাকেন, তার মধ্যেই ঢুকে পড়ে আরেকটি বাস। প্রতিমুহূর্তেই এ দৃশ্য দেখে আসছি।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের যুগ্ম কমিশনার মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি৷ পুলিশ এখন দুই ধরনের কাজ করছে৷ একটি এনফোর্সমেন্ট, আরেকটি সচেতনতা বৃদ্ধি করা৷ প্রতিদিন শুধু বাসের বিরুদ্ধেই চার শতাধিক মামলা হচ্ছে৷ লাখ লাখ টাকা জরিমানা আদায় করা হচ্ছে৷ কিন্তু তার পরও তাদের কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না৷
কেন নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ২০০-৫০০ টাকার একটি মামলা দিলে তারা কিছুই মনে করেন না৷ এমনকি বাস ডাম্পিংয়ে পাঠালেও মালিকরা জরিমানা দিয়ে নিয়ে আসেন৷
মোসলেহ উদ্দিন বলেন, বাসচালকদের জেলজরিমানা করেও কাজ হয় না৷ আসলে ওদের মধ্যে সচেতনতা দরকার৷ এই সচেতনতার লক্ষ্যে আমরা প্রতিটি স্কুলে ডকুমেন্টারি দেখাচ্ছি৷ পাশাপাশি বাসস্ট্যান্ডসহ জনবহুল জায়গাগুলোতেও বড় পর্যায় এসব ডকুমেন্টারি দেখানো হচ্ছে৷ এতে যে কিছু কাজ হচ্ছে না, তা নয়; তবে সবার সচেতনতা দরকার৷
বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি-বিআরটিএর চেয়ারম্যান মশিউর রহমান বলেন, আমরা প্রতিনিয়ত মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করছি৷ চালক-মালিকদের নিয়ে সচেতনতামূলক প্রচার চালাচ্ছি৷
সূত্র: ডয়চে ভেলে
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন