ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক: অরক্ষিত ইউটার্নে বাড়ছে মৃত্যুঝুঁকি!
ঢাকা-চট্টগ্রাম ফোরলেন জাতীয় মহাসড়কের কুমিল্লা অংশের ১০০ কিলোমিটার এলাকার ৮৪টি ইউটার্ন (গাড়ি ঘোরানোর কাটা জায়গা) দিন দিন ভয়ংকর হয়ে উঠছে। এসব স্থানে যখন-তখন ইউটার্ন নিচ্ছে বাস, ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান, সিএনজিচালিত অটোরিকশাসহ ছোট-বড় যানবাহন। এছাড়া গাড়ির চালকদের অসাবধানতা, হঠাৎ করে রং সাইডে (উল্টা পথে) চলাচলসহ নানা কারণে প্রায়সময় ঘটছে প্রাণহানির ঘটনা।
হাইওয়ে পুলিশের একটি সূত্র জানায়, গত আড়াই বছরে জেলার বিভিন্ন ইউটার্নে অন্তত অর্ধশতাধিক ব্যক্তি প্রাণ হারিয়েছেন এবং আহত হয়েছেন দুই শতাধিক। এছাড়া অনেক ছোটখাটো দুর্ঘটনা ঘটেছে যা পুলিশের নথিতে অন্তর্ভুক্ত হয়নি।
সওজ-কুমিল্লা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম ফোরলেন মহাসড়কের ডিভাইডারের (বিভাজক) দুইপাশ দিয়ে প্রতি মিনিটে কাভার্ডভ্যান, লরি, ট্রাক, বাস-মিনিবাস, মাইক্রোবাস, প্রাইভেট কার ছাড়াও দ্রুতগতির ছোট-বড় অসংখ্য গাড়ি চলাচল করে। এর কুমিল্লা অংশের দাউদকান্দি থেকে চৌদ্দগ্রামের মোহাম্মদ আলী বাজার পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার এলাকায় ৮৪টি ইউটার্নের কাটা জায়গা হয়ে উলটো পথেও ছোট-বড় গাড়ি এবং তিন চাকার বিভিন্ন যানবাহনও চলাচল করে।
সরেজমিনে ঘুরে জানা যায়, এসব ইউটার্ন দুর্ঘটনাপ্রবণ, অরক্ষিত। এসব স্থানে যখন-তখন গাড়ি ঘোরানো (ইউটার্ন), তিন চাকার যান চলাচল, রাস্তার মধ্যে যাত্রী ওঠানো-নামানো, ওভারটেকসহ নানা বিশৃঙ্খলা চলছে। এই মহাসড়কের জেলার দাউদকান্দির গৌরীপুর, ইলিয়টগঞ্জ, চান্দিনার মাধাইয়া, দেবিদ্বারের বাগুর, বুড়িচংয়ের নিমসার, আদর্শ সদরের আলেখারচর, সদর দক্ষিণের নন্দনপুর, হারাতলী, পদুয়ার বাজার, উত্তর রামপুর, লইপুরা, চাষাপাড়া, শুয়াগাজি, জোড়কানন, চৌদ্দগ্রামের মিয়াবাজার এলাকার ইউটার্ন অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ও দুর্ঘটনাপ্রবণ।
উত্তর রামপুর এলাকার বাসিন্দা সাংবাদিক নেতা মো. ফিরোজ মিয়া বলেন, ‘আমার বাড়ির অদূরে পদুয়ার বাজার, উত্তর রামপুর, চাষাপাড়াসহ তিনটি ইউটার্নেই গত আড়াই বছরে বেপরোয়া গতির গাড়ির নিচে চাপা পড়ে ও ধাক্কা লেগে অন্তত ১৪ জন নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন পথচারীসহ অন্তত অর্ধশতাধিক মানুষ। এ তিনটি স্থান ভয়ংকর হলেও কোনো ট্রাফিক ব্যবস্থা নেই। ইউটার্নগুলো অরক্ষিত হওয়ায় মানুষের জীবনঝুঁকি বাড়ছে।’
কুমিল্লা বাস-মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা মো. ফারুক হোসেন সুমন বলেন, ‘এটা সত্যি, অধিকাংশ গাড়ির চালক ইউটার্নে এসেও গতি কমায় না। যেখানে-সেখানে গাড়ি ঘোরানো, মাঝপথে যাত্রী নামিয়ে দেওয়া ও তিন চাকার যান চলাচলের বিষয়ে কর্তৃপক্ষের নজরদারি বাড়াতে হবে।’
হাইওয়ে কুমিল্লা অঞ্চলের পুলিশ সুপার মো. রহমত উল্লাহ বলেন, ‘এ মহাসড়কের পদুয়ার বাজারসহ অন্যান্য ইউটার্নে মাঝেমধ্যে দুর্ঘটনা ঘটে। আমাদের পর্যাপ্ত জনবল নেই। তাই এসব স্থানে দুর্ঘটনা প্রতিরোধে সওজ বিভাগ ব্যবস্থা নিলে যানজট ও দুর্ঘটনার ঝুঁকি কমবে। এছাড়া যেসব গাড়ি আইন অমান্য করছে কিংবা নির্ধারিত জায়গায় মোড় না নিয়ে যেখানে-সেখানে ঘুরছে, সেগুলোর বিরুদ্ধে সব সময়ই মামলা দিচ্ছি।’
সওজ-কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশলী রেজা-ই রাব্বি বলেন, ‘মহাসড়কের কুমিল্লা অংশের ১০০ কিলোমিটারে ৮৪টি ইউটার্ন রয়েছে। বিশৃঙ্খলা প্রতিরোধে এসব স্থানে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে সচেতনতামূলক সাইনবোর্ড স্থাপন করা হবে। পদুয়ার বাজার এলাকায় দৃষ্টিনন্দন করে ইউলুপ স্থাপনের একটি প্রকল্প একনেকে অনুমোদন পেয়েছে। এখানে ইউলুপ নির্মাণ করা গেলে যানজট ও দুর্ঘটনার ঝুঁকি থাকবে না।’।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন