ঢাবির যে পুকুরে ডুবে মারা যায় মা-বাবার একমাত্র সন্তানরা!
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শহীদুল্লাহ হলের পুকুর। এটি শহীদুল্লাহ হল ও ফজলুল হক হলের মাঝখানে অবস্থিত। পুকুরটি বেশ বড়। এর গভীরতা ১০-১২ হাত। এ পুকুরে সাঁতার কাটা নিষেধ থাকলেও অনেক উৎসুক শিক্ষার্থী মাঝেমধ্যে নামেন সাঁতার কাটতে।
এভাবে গত ৩ যুগে পুকুরটি কেড়ে নিয়েছে অন্তত ৩৫ জনের প্রাণ। যদিও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এ পুকুরে ডুবে মৃতের সংখ্যার সঠিক কোনো তথ্য দিতে পারেনি। তবে প্রাচীনতম এ পুকুরটি শিক্ষার্থীদের কাছে ‘রহস্যময় মৃত্যুকূপ’!
চলতি বছরের ৫ এপ্রিল সন্ধ্যায় এ পুকুরে সাঁতার কাটতে গিয়ে ডুবে প্রাণ হারান বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী বায়েজিদ বোস্তামি। ফুটবল খেলে ক্লান্ত সহপাঠীদের সঙ্গে গোসল করতে নেমেছিলেন তিনি। ফলিত পরিসংখ্যান বিভাগের প্রথম বর্ষের এ ছাত্র শহীদুল্লাহ হলে থাকতেন। এর আগেও এভাবে প্রাণ গিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের আরো দু’ছাত্রের। বাকিরা বহিরাগত।
শহীদুল্লাহ হলের কর্মচারী আব্দুর রশিদ বলেন, আগে পুকুরটিতে গোসল করতেন। তারা কেউ এখন আর এ পুকুরে গোসল করেন না।
তিনি বলেন, এখানে শিক্ষার্থীরাই বারবার ডুবে মরে। হঠাৎ একটি ছেলে সাঁতার কাটতে থাকে এমনি নিচ থেকে কেউ মনে হয় টান মেরে তাকে নিয়ে যায়। কেউ ধরলেও তারে আর রাখা যায়না। আমার জানা মতে এহানে যারা মরেছেন তারা সকলেই মা–বাবার একমাত্র সন্তান। গত ৩ যুগে এখানে প্রায় ৪০ জনের মৃত্যু হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘৮০এর দশকে একরাতে বরশি দিয়া মাছ ধরছিলাম, হঠাৎ দেহি পুকুরের ভেতর থেকে অনেক বড় আকৃতির কি যেন একটা ভাইসা উঠছে। ছিপ রাইখা ভয়ে আমরা সবাই পালাইয়া আই। সকালে দেহি সেখানে কিছু নাই।’
আরেক কর্মচারি ফজলুর রহমান বলেন, যেরা এহানে ডুঁবে মারে হেগ লাশ ডুবুরিরা পাইতো বসা অবস্থায়। কিন্তু মৃত্যু হইলে তো হেগ লাশ বসে থাকার কথা না’? এছাড়াও মানুষ পানিতে ডুঁবে মরার পর প্যাডে পানি থাকার কথা। যারা মরছে হেগ কাউর প্যাডে পানি ছিল না। আসলে পুকুডায় একটা বদ জ্বিন আছে।
ঢাবির মৃত্তিকা, পানি ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক দিদারুল আলম বলেন, পুকুরের পানি পুরানো হলে এতে অক্সিজেনের পরিমাণ কমে যায়। ফলে পুকুরের মাঝখানে নিম্নমুখী চাপ সৃষ্টি হয়। আর পুরানো পুকুরে এটি আরো বেশি। তাই একজন ডুব দিলে তাকে নিম্নমুখী চাপ নিচের দিকে টেনে নিতে চায়। তাই সাঁতার কাটার জন্য দরকার পানিতে পরিমাণ মত অক্সিজেন। এই পুকুরটিতে পরিমাণ মত অক্সিজেন না থাকায় এটি হতে পারে। পুকুরটিতে দ্রুত নতুন পানি দেয়ার পরামর্শও দেন তিনি।
এর পর যেন আর এমন দুর্ঘটনা না ঘটে সে বিষয়টি ভেবে দেখা হচ্ছে বলে জানান অধ্যাপক দিদারুল আলম।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন