তনু হত্যার ১৪ মাস : ডিএনএ রিপোর্টের খবর জানে না পরিবার
দিন পেরিয়ে মাস। পেরিয়েছে বছর। তবুও তনুর ঘাতকরা অধরা। আজ শনিবার দেশব্যাপী আলোচিত এ হত্যাকাণ্ডের ১৪ মাস পূর্ণ হচ্ছে। কিন্তু দীর্ঘ এই সময়েও কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের ইতিহাস বিভাগের ছাত্রী ও নাট্যকর্মী সোহাগী জাহান তনু হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের চিহ্নিত করতে পারেনি মামলার তদন্তকারী সংস্থা সিআইডি। ধরাছোঁয়ার বাইরেই রয়ে গেছে ঘাতকরা।
একাধিকবার মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পরিবর্তন হলেও দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই। এ নিয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাও মুখ খুলতে নারাজ। মামলার তদন্তের নামে জিজ্ঞাসাবাদ আর ডিএনএ পরীক্ষার একই বৃত্তে ১৪ মাস ঘুরপাক খাচ্ছে তদন্ত কার্যক্রম। তাই মামলার তদন্ত সংস্থার নিরপেক্ষতা ও ন্যায়বিচার পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তায় থাকা তনুর পরিবার ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
সিআইডির দাবি মামলার তদন্তে অগ্রগতি আছে। তবে একাধিক আইন বিশেষজ্ঞদের দাবি দু’দফায় তনুর ময়নাতদন্তের রিপোর্টে এর মৃত্যুর কারণ উল্লেখ না থাকায় শুরুতেই মামলার তদন্তের ক্ষেত্রে সহায়ক সকল ক্ষেত্রগুলি নষ্ট করে ফেলায় এখন অনিশ্চয়তার মুখে ফেলে দিয়েছে তদন্ত কার্যক্রম। তাই এখন শেষ ভরসা ডিএনএ রিপোর্ট।
তনুর মা আনোয়ারা বেগম সেলফোনে জানান, আমি তো সবই হারিয়েছে, শুরু থেকে যাদের নাম সিআইডি ও মিডিয়ার নিকট প্রকাশ করেছি তাদের আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই আমার তনুর ঘাতকরা ধরা পড়বে।
তিনি বলেন, দেশে এতো হত্যাকাণ্ডের বিচার হয়, আমার তনুর খুনের কী বিচার হবে না, ঘাতকরা কী এতই শক্তিশালী?’
মামলার তদন্ত কর্মকর্তার ভূমিকার বিষয়ে তনুর মা বলেন, এপ্রিল মাসে সিআইডির অফিসার আমাদের বাসায় আসে, এ সময় তনুর মামলার কথা না বলে উল্টো সিআইডি বলে যায় মিডিয়ায় তাদের (সিআইডি) বিরুদ্ধে বক্তব্য না দিতে, আমি মেয়ে হারিয়েছি, আমাকেই তো সব বলতে হবে।
তিনি বলেন, আগের বাসা পরিবর্তন করে অন্য বাসায় উঠেছি, সেনানিবাস থেকে বের হতে গেলে এখন ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড় করিয়ে রাখা হয়, আমার তনু খুন হয়েছে, বিচার চাওয়ার কারণে এখন ছেলেটার জন্য কোথাও চাকরি চাইলে নিষেধ করে দেয়া হয়, আমার ফাঁসি হলেও তনুর মৃত্যুর জন্য দায়িদের বিরুদ্ধে সত্য কথা বলবোই।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নিকট আমি ন্যায় বিচার চেয়েও পাচ্ছি না, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও সেনাবাহিনীর প্রধানও তো তনু হত্যার ন্যায়বিচারের আশ্বাস দিয়েছিলেন, দেশের ১৬ কোটি লোকও তনু হত্যার বিচার চায়, ডিএনএ রিপোর্টে কী পাওয়া গেছে তাও আমাদের জানানো হচ্ছে না।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও সিআইডি-কুমিল্লার সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার জালাল উদ্দীন আহমেদ বলেন, মামলাটির তদন্ত কার্যক্রম প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে, অগ্রগতিও আছে।
তিনি আরও বলেন, যেহেতু ঘটনাস্থলটি একটি স্পর্শকাতর এলাকা এবং মামলাটি তদন্তাধীন তাই এ বিষয়ে এর চেয়ে বেশি মন্তব্য করতে চাই না। সময় হলেই সব প্রকাশ করব।
জানা যায়, গত বছরের ২০ মার্চ রাতে কুমিল্লা সেনানিবাসের ভেতরের একটি জঙ্গল থেকে কলেজ ছাত্রী সোহাগী জাহান তনুর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পরদিন তার বাবা কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের অফিস সহায়ক ইয়ার হোসেন বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে কোতয়ালি মডেল থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।
থানা পুলিশ ও ডিবির পর গত বছরের ১ এপ্রিল থেকে মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব পায় কুমিল্লা সিআইডি। তনুর দুই দফা ময়নাতদন্তে কুমেকের ফরেনসিক বিভাগ মৃত্যুর সুস্পষ্ট কারণ উল্লেখ না করে প্রতিবেদন দেয়ায় ঘটনার রহস্য উৎঘাটন নিয়ে শুরু থেকেই সংশয় দেখা দেয়। এরই মধ্যে গত বছরের মে মাসে সিআইডি তনুর জামা-কাপড় থেকে নেওয়া নমুনার ডিএনএ পরীক্ষা করে ৩ জনের শুক্রানু পাওয়ার কথা গণমাধ্যমকে জানিয়েছিল এবং হত্যার আগে তনুকে ধর্ষণ করা হয়েছিল বলে তারা নিশ্চিত হয়েছিল।
পরে সন্দেহভাজনদের ডিএনএ মেচিং করার কথা থাকলেও তা করা হয়েছে কিনা কিংবা ফলাফল কী এ নিয়েও সিআইডি মুখ খুলছে না। তাই দীর্ঘ ১৪ মাসেও তনু হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত বা গ্রেফতার করতে না পারা, সামরিক-বেসামরিক অর্ধশতাধিক ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করা, এমনকি ডিএনএ পরীক্ষায় ৩ ধর্ষণকারীর শুক্রানু পেলেও এ পর্যন্ত ডিএনএ ম্যাচ করে ঘাতকদের শনাক্ত করতে না পারায় মেয়ে হত্যার বিচার পাওয়া নিয়ে তনুর পরিবারসহ সচেতন মহলে সংশয় দেখা দিয়েছে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন