তাজরীন ট্রাজেডি : খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না সাক্ষীদের

রাজধানীর অদূরে আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুরের তাজরীন ফ্যাশনস-এ ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় গত এক বছরেও কোনো সাক্ষীকে আদালতে হাজির করতে পারেনি রাষ্ট্রপক্ষ। সাক্ষীদের ঠিকানায় সমন পাঠানোর পরও বারবার তা ফেরত এসেছে। কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, উল্লেখিত ঠিকানায় সাক্ষীরা থাকেন না।

সাক্ষীদের খুঁজে না পাওয়ায় ছয় বছরেও শেষ হয়নি আলোচিত এ হত্যাকাণ্ডের বিচার। মামলাটির বিচার শেষ করতে আর কত দিন লাগবে তাও বলতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। ছয় বছর আগে আজকের দিনে (২৪ নভেম্বর) ওই অগ্নিকাণ্ডে ১১২ জন গার্মেন্টসকর্মী মারা যান। আহত ও দগ্ধ হন আরও দুই শতাধিক শ্রমিক।

আলোচিত ওই ঘটনায় দায়ের করা মামলার বিচার কাজ চলছে ঢাকার প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে। মামলাটির বিচার শুরু হওয়ার তিন বছর পার হয়েছে। দুই বছরে ১০৪ জন সাক্ষীর মধ্যে সাক্ষ্য দিয়েছেন মাত্র ৭ জন। গত বছর কোনো সাক্ষীই আদালতে যাননি।রাষ্ট্রপক্ষ দাবি করছেন, সাক্ষীরা নির্ধারিত ঠিকানায় থাকেন না। মামলার অভিযোগপত্রে অধিকাংশ সাক্ষীর স্থায়ী ঠিকানা উল্লেখ নেই। তাই নির্ধারিত ঠিকানায় সাক্ষীদের খুঁজেও পাওয়া যাচ্ছে না।

রাষ্ট্রপক্ষের অতিরিক্ত কৌঁসুলি কাজী শাহানারা ইয়াসমিন বলেন, তাজরীন ফ্যাশনস-এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় দায়ের করা মামলাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মামলার অভিযোগপত্রে অধিকাংশ সাক্ষীর বর্তমান ঠিকানা দেয়া হয়েছে। তবে বর্তমান ঠিকানায় অধিকাংশ সাক্ষীকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। যদি সাক্ষীদের স্থায়ী ঠিকানা দেয়া থাকত তাদের খুঁজে বের করে সাক্ষ্য দিতে আদালতে হাজির করা যেত।

সাক্ষীদের খুঁজে না পাওয়ার কারণ হিসাবে রাষ্ট্রপক্ষের অতিরিক্ত কৌঁসুলি বলেন, অগ্নিকাণ্ডের পর গার্মেন্টসটি বন্ধ হয়ে যায়। কেউও বাড়িতে চলে গেছে আবার কেউও অন্য গার্মেন্টসে চাকরি করছে। তাই বর্তমান ঠিকানায় তাদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার উচিত ছিল সাক্ষীদের বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা চার্জশিটে উল্লেখ করার।

আসামি পক্ষের আইনজীবী এটি এম গোলাম গাউস বলেন, অধিকাংশ তারিখে মামলার সাক্ষী আদালতে হাজির হচ্ছে না। সাক্ষী হাজির না হওয়ায় মামলাটি গতি পাচ্ছে না। আমরা চাই মামলাটি যেন দ্রুত শেষ হয়। ন্যায়-অন্যায় আদালতের মাধ্যমে প্রমাণিত হবে।

তিনি আরও বলেন, মামলা নিষ্পত্তি না হওয়ায় আমরা খুব অসুবিধার মধ্যে আছি। আমরা দেশের বাইরে যেতে পারছি না। ঠিকভাবে ব্যবসাও পরিচালনা করতে পারছি না। রাষ্ট্রপক্ষের উচিত মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তি করা।

মামলার অভিযোগ থেকে জানা গেছে, ২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুরের তাজরীন ফ্যাশনস-এ ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ১১২ জন নিহত হন। আহত ও দগ্ধ হন আরও দুই শতাধিক শ্রমিক। ভয়াবহ ওই অগ্নিকাণ্ডের পরদিন আশুলিয়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) খায়রুল ইসলাম বাদী হয়ে অজ্ঞাত পরিচয় আসামিদের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন। সেই মামলায় নাশকতার পাশাপাশি অবহেলাজনিত মৃত্যুর দণ্ডবিধির ৩০৪ (ক) ধারা যুক্ত করা হয়।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) পরিদর্শক এ কে এম মহসিনুজ্জামান খান ২০১৩ সালের ২২ ডিসেম্বর ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম (সিজিএম) আদালতে তাজরীন ফ্যাশনস-এর এমডি দেলোয়ারসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেন।

২০১৫ সালের ৩ সেপ্টেম্বর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ এসএম কুদ্দুস জামান। মামলায় ১০৪ জন সাক্ষীর মধ্যে বিভিন্ন সময় ৭ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ হয়েছে।

মামলার আসামিরা হলেন- প্রতিষ্ঠানের মালিক দেলোয়ার হোসেন, চেয়ারম্যান মাহমুদা আক্তার, লোডার শামীম, স্টোর ইনচার্জ (সুতা) আল আমিন, সিকিউরিটি ইনচার্জ আনিসুর রহমান, সিকিউরিটি সুপার ভাইজার আল আমিন, স্টোর ইনচার্জ হামিদুল ইসলাম লাভলু, অ্যাডমিন অফিসার দুলাল উদ্দিন, প্রকৌশলী এম মাহবুবুল মোর্শেদ, সিকিউরিটি গার্ড রানা ওরফে আনোয়ারুল, ফ্যাক্টরি ম্যানেজার আব্দুর রাজ্জাক, প্রোডাকশন ম্যানেজার মোবারক হোসেন মঞ্জুর ও শহীদুজ্জামান দুলাল।

আসামিদের মধ্যে মো. শহিদুজ্জামান দুলাল, মোবারক হোসেন মঞ্জু, মো. রানা ওরফে আনোয়ারুল ও মো. শামিম মিয়া পলাতক রয়েছেন।