তাবলিগের দুই পক্ষে সংঘর্ষ, একজনের মৃত্যু
টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে আজ সকালে দুই পক্ষের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের সময় আহত এক বৃদ্ধ মারা গেছেন বলে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
শনিবার দুপুরে টঙ্গী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামাল হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘সকালে আশকোনা এলাকায় তাবলিগ জামাতের দুই পক্ষের সংঘর্ষের সময় বেশ কয়েক আহত হয়। এর মধ্যে ইসমাইল হোসেন (৭০) নামের এক ব্যক্তি মারা গেছেন। তাঁর বাড়ি মুন্সীগঞ্জে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে।’
শনিবার সকাল ৮টার দিকে বিমানবন্দর সংযোগ সড়কে তাবলিগ জামাতের মাওলানা সাদ ও তাঁর প্রতিপক্ষ মাওলানা জুবায়েরের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে বলে বার্তা সংস্থা ইউএনবিকে বলেন আবদুল্লাহপুর জোনের ট্রাফিক পরিদর্শক আসাদ।
পুলিশ জানিয়েছে, এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এই কারণে উত্তরা থেকে মহাখালী পর্যন্ত যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। কিছু পরে পুলিশ এসে রাস্তার একদিক থেকে লোকজনকে সরিয়ে দেয়। এতে সড়কের একটি পথে যান চলাচল শুরু হয়। কেউ যান চলাচলে বাধা দিচ্ছে না।
ইজতেমার একটি সূত্র জানায়, কয়েকদিন ধরেই মাওলানা সাদের প্রতিপক্ষ মাওলানা জুবায়েরের সমর্থকরা টঙ্গীর তুরাগ তীরের ইজতেমার ময়দানে অবস্থান নেন। আজ সকালে মাওলানা সাদের সমর্থকরা ময়দানে প্রবেশ করতে গেলে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। সংঘর্ষের বেশ কিছু ভিডিও চিত্র ও আলোকচিত্র সামাজিক যোগযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
একটি ভিডিওতে দেখা যায়, হাজার হাজার মুসল্লি ময়দানের দেয়াল ভেঙে ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করছেন। ভিতর থেকে তাদের ইট ছুড়ে প্রতিহতের চেষ্টা করছেন প্রতিপক্ষ। একপর্যায়ে দেয়াল ভেঙে ভিতরে প্রবেশ করলে দুইপক্ষের মধ্যে মুখোমুখি সংঘর্ষ শুরু হয়। লাঠি নিয়ে একপক্ষ আরেক পক্ষকে আঘাত করে।
আরেকটি ভিডিওতে দেখা যায়, সংঘর্ষের সময় এক বৃদ্ধ পড়ে যান। তখন তাঁকে প্রতিপক্ষের অনেকে ঘিরে বাঁশ দিয়ে অনরবত আঘাত করতে থাকেন। তাঁর পাশেই পড়ে রয়েছেন আরেক বৃদ্ধ। তাঁর পায়েও বাঁশ দিয়ে আঘাত করা হচ্ছে। আহত অবস্থায় অনেককে উদ্ধার করে নেওয়ার দৃশ্যও দেখা যায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া আলোকচিত্রে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটি সূত্র জানায়, সংঘর্ষ, ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার একপর্যায়ে সাদপন্থীরা মাঠের দখল নিয়ে নেয়। তখন ভেতরে থেকে মাওলানা জুবায়েরের সমর্থকরা সরে যায়। দুপুরের দিকে পুলিশ, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)সহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ওই এলাকায় গিয়ে ময়দান ছাড়ার জন্য মাইকিং করতে থাকে। এ সময় র্যাবের হেলিকপ্টারকে মাঠের উপর টহল দিতে দেখা যায়। দুপুরের পর সাদপন্থীরা মাঠ ছেড়ে বেরিয়ে আসতে থাকে। তখনই এলাকার পরিস্থিতি ধীরে ধীরে শান্ত হয়ে আসে।
গতকাল শুক্রবার নির্বাচন কমিশন থেকে জারি করা এক নির্দেশনায় বলা হয়েছে, আগামী ৩০ ডিসেম্বর জাতীয় নির্বাচনের আগে ইজতেমা ময়দানে জড়ো হওয়া যাবে না। কোনো ওয়াজ, মাহফিল, ধর্মীয় সমাবেশও করা যাবে না। সেই নির্দেশনা উপেক্ষা করেই আজ দুই পক্ষ ইজতেমা ময়দানে জড়ো হয়।
মাওলানা সাদের সমর্থকরা জানায়, আজ থেকে ময়দানে তাদের পাঁচদিনের জোড় শুরু হওয়ার কথা। একে কেন্দ্র করেই তাঁরা সেখানে এসেছেন। হাজার হাজার মাওলানা সাদ সমর্থক ময়দানের প্রতিটি গেটের সামনে অবস্থান নেয়। মুসল্লিরা আশকোনা, কামারপাড়া, ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়কের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নেন।
গত বছর বিশ্ব ইজতেমার সময় থেকেই দুই পক্ষের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে আসতে থাকে। এর জের ধরে গত এপ্রিলে তাবলিগ জামাতের প্রধান কেন্দ্র রাজধানীর কাকরাইল মসজিদে একপক্ষ আরেকপক্ষকে আটকেও রাখে। তখন সরকার দুই পক্ষকে নিবৃত্ত করতে বৈঠকও করে। টঙ্গীতে বিশ্বের বড় ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে।
এই পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৫ নভেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের উপস্থিতিতে তাবলিগ জামায়াতের বিবদমান দুই পক্ষের সভা হয়। সেই সভা থেকে ডিসেম্বর মাসের বিশ্ব ইজতেমা স্থগিত ঘোষণা করা হয়। আগামী জানুয়ারিতে বিশ্ব ইজতেমা হওয়ার কথা ছিল। সেই সভায় পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজি), ধর্ম সচিবসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন