তারেককে দেশে এনে শাস্তি নিশ্চিত করার প্রতিজ্ঞা জয়ের

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে এনে শাস্তি নিশ্চিত করার প্রতিজ্ঞা করেছেন প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়।

প্রধানমন্ত্রী পুত্র বলেন, তারেক রহমান ২১ আগস্টের খুনিদের একজন হলেও সুশীল সমাজের একাংশ তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে প্রতিষ্ঠিত করতে চায়।

শনিবার রাজধানীর রেডিসন হোটেলে সুচিন্তা ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ‘২১ আগস্ট: বাংলাদেশের রাজনীতির বর্তমান –ভবিষ্যৎ’ বিষয়ক সেমিনারে বক্তব্য রাখছিলেন জয়।

‘একুশে আগস্টের হত্যাকারী তারেক রহমান, তাকে কী আমরা ভবিষ্যতে প্রধানমন্ত্রী দেখতে চাই?’-এমন প্রশ্ন করে জয় বলেন, ‘আমাদের সুশীলরা তো মনে হচ্ছে সেটাই চায়। না, সেটা আমরা হতে দেব না। বাংলার মানুষ যতদিন আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়ে যাবে এ রকম জঙ্গি দল এ রকম খুনি দলের স্থান বাংলাদেশে হবে না। এদের বিচার হতে থাকবে। তারেক রহমানকেও আমরা দেশে ফিরিয়ে এনে আমরা সাজা দেব। এটা আমাদের ওয়াদা।’

২০০৪ সালে আওয়ামী লীগের জনসভায় গ্রেনেড হামলার পর বিএনপিকে ক্ষমতা থেকে সরানোর ওয়াদা করেছিলেন বলেও জানান জয়। বলেন, ‘সেদিন আমি ওয়াদা করেছিলাম, বিএনপিকে আমি ক্ষমতা থেকে বের করবই, করব। ১৪ বছর সময় লেগে গেছে হত্যাকাণ্ডের বিচার পেতে। আদালতে প্রমাণিত হয়েছে, তখনকার প্রধানমন্ত্রী (খালেদা জিয়া) এই ষড়যন্ত্রকে উস্কে দেয়ার সঙ্গে জড়িত। তিনি নিজেই হুকুম দিয়েছিলেন।’

‘তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ই এই হামলায় কারা জড়িত তাদের নাম প্রকাশিত হয়। বিএনপি সরকার ক্ষমতা থেকে সরে যাওয়ার পরই সব সত্য বের হয়ে আসে’- বলেন প্রধানমন্ত্রীপুত্র।

২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে গ্রেপ্তার তারেক রহমান পরের বছর চিকিৎসার জন্য যান যুক্তরাজ্যে। দুর্নীতির দুই মামলায় ১৭ বছরের কারাদণ্ড এবং ২২ কোটি টাকা জরিমানা এবং ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছে তাদের।

তারেক রহমানকে দেশে ফেরাতে যুক্তরাজ্য সরকারের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। আওয়ামী লীগ আরেকবার ক্ষমতায় ফিরলে তাকে ফিরিয়ে এনে শাস্তি নিশ্চিত করার ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও।

ঐক্যফ্রন্টে যোগ দেয়া মইনুল হোসেনই তারেক রহমানকে দেশ ছাড়ার ব্যবস্থা করেন বলে অভিযোগ করেন জয়। বলেন, ‘এই ঐক্যফ্রন্ট ১/১১-এর সময় থেকে তারেক রহমানের সঙ্গে ষড়যন্ত্রে জড়িত।’

সুশীলরা আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে বড় বড় কথা বলে উল্লেখ করে জয় বলেন, ‘আমার চরিত্র যদি তারেক রহমানের হতো তাহলে কি আজকে বেগম জিয়া শুধু মাত্র জেলে থাকতেন? না। এই কথা তাদের মনে রাখা উচিত।’

‘আওয়ামী লীগ বিএনপি না, আমাদের চরিত্র তাদের মতো না। আমরা খুন না, আমরা সন্ত্রাসী না। আওয়ামী লীগ হচ্ছে স্বাধীনতার দল।’

বিএনপির সঙ্গে ঐক্যবদ্ধদেরকে সুশীল আখ্যা দিয়ে জয় বলেন, ‘সুশীলরা নিরপেক্ষতার কথা বলে। সন্ত্রাস, মানুষ হত্যাকাণ্ড নিয়ে কি কোনো নিরপেক্ষতা হতে পারে? তাহলে তারা নিরপেক্ষতা বলতে কী বোঝাতে চাইছে? যারা সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কথা বলতে লজ্জা পায় তারা সন্ত্রাসকে প্রশ্রয় দেয়।’

বাংলাদেশের মানুষ শান্তিতে আছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী পুত্র বলেন, ‘একুশে আগস্টের মতো হত্যাকাণ্ডের মতো ঘটনা ঘটছে না।’

বিএনপিকে জঙ্গি দল উল্লেখ করে জয় বলেন, তাদের হাত থেকে বাংলাদেশকে রক্ষা করা এখন দেশের প্রধান কাজ। কিন্তু এই কাজে এখন বাধা দিচ্ছে ঐক্যফ্রণ্ট।’

‘জিয়াউর রহমান যেমন যুদ্ধাপরাধীদের বাচিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। ঐক্যফ্রন্টের চেষ্টা হচ্ছে বিএনপিকে বাচিয়ে দেওয়া এবং বিএনপিকে রিহ্যাবিলেট করা।’

বাংলাদেশের মানুষ এখন আওয়ামী লীগকে ভোট দেবে জানিয়ে জয় বলেন, ‘এই সুশীল বাবুদের হুমকিতে আওয়ামী লীগের কিছু যায় আসে না। বাংলাদেশে এমন কোনো শক্তি নাই আওয়ামী লীগকে ভোটে হারাতে পারে। সব ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে আমরা এই অবস্থানে এসেছি। এখন আর কাউকে আমরা ভয় পাই না।’

বিকাল চারটা নাগাদ জাতীয় সঙ্গীতের মধ্য দিয়ে মূল অনুষ্ঠান শুরু হয়। অনুষ্ঠানের শুরুতে একটি ভিডিও প্রদর্শনীর মাধ্যমে বর্তমান বাংলাদেশের রাজনীতির অবস্থান ও অবস্থার কারণ বর্ননা করেন সুচিন্তা ফাউন্ডেনের সভাপতি মোহাম্মদ ই আরাফাত।

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় নিহত আইভী রহমানের মেয়ে তানিয়া আক্তার তার মায়ের স্মৃতিচারণ করেন। বলেন, ‘দীর্ঘ ১৪ বছর পার হয়ে গেছে কিন্তু আমার মায়ের চলে যাওয়াটাকে আমরা এখনো মেনে নিতে পারিনি। একটি সন্ত্রাসবিরোধী অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গিয়ে আমার মাসহ ২৪ জন কেন চলে যাবে? আম্মার কথা মনে হলেই তার রক্তাক্ত চেহারা আমাদের সামনে ভেসে ওঠে।’

‘আম্মার মাথার কাছে বসে দোয়া করতে দেয়া হয়নি। একটা সরকার কতটা অমানবিক হলে এই ধরনের কার্যক্রম করতে পারে!’

সাংবাদিক মোজাম্মেল বাবু বলেন, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরকে সর্বোচ্চ শাস্তির রায় শোনানো হয়েছে। কিন্তু বেগম খালেদা জিয়াকে এই মামলায় আসামি করা হয়নি কেন?

তথ্য ও যোগযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তফা জব্বার, অভিনেত্রী অরুণা বিশ্বাস, অভিনেতা ফেরদৌস, রিয়াজ সহ সুশিন্তা ফাউন্ডেশনের সংগঠকরা এ সময় বক্তব্য রাখেন।