তারেক-জোবাইদার লন্ডনের অ্যাকাউন্ট জব্দ করা সম্ভব?
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমানের নামে যুক্তরাজ্যের একটি ব্যাংকে থাকা তিনটি হিসাব জব্দের নির্দেশ দিয়েছে ঢাকার একটি আদালত৷ এ নির্দেশ কার্যকর হওয়ার সম্ভাবনা কতটুকু?
ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ কে এম ইমরুল কায়েশ বুধবার এ আদেশ দেন৷ দুর্নীতি দমন কমিশনের একটি আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ আদেশ দেয়া হয়৷
আইনে এভাবে অ্যাকাউন্ট জব্দের কোনো সুযোগ আছে কি না জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোর্তিময় বড়ুয়া বলেন, ‘বাংলাদেশের বিদ্যমান আইনে এটা সম্ভব নয়৷ এখন নতুন কোনো আয়োজনে যদি সরকার যায়, তাহলে সেটা নতুন কিছু হবে৷ শুধু ক্রিমিনাল মামলায় ডিফাইন করা আছে, সেকশন ১৮৮-এ বাংলাদেশে যেটি অপরাধ হিসেবে ধরা হয়, সেটা যদি দেশের বাইরেও কেউ করেন, তাহলে সেটা অপরাধ হিসেবে ধরে বিচার করা সম্ভব৷ সেটা তো শুধু ক্রিমিনাল মামলার ক্ষেত্রে৷ কিন্তু অর্থনৈতিক ডিলিং বা অর্থনৈতিক ক্রাইমের বিষয়ে এটি না৷’
‘এখানে অ্যাকাউন্ট জব্দ করার কথা বলছে৷ লিগ্যালি যদি ট্র্যানজেকশন হয়, তাহলে ওরা শুনবে কেন? আর ওখানে আনডিসক্লোজড মানি ট্র্যানজেকশন হতে পারারও সুযোগ নেই৷ আনআইডেন্টিফাইড মানি ট্র্যানজেকশন হলে ওরাই সেটা বন্ধ করে দেবে৷ আসলে বিষয়টি আমাদেরও জানা-বোঝার বিষয় আছে৷ কোন প্রেক্ষিতে এটা আসছে সেটা দেখতে হবে৷ আমাদের জ না মতে এমন কোনো আইন নেই বা বিদ্যামান আইনে সুযোগ নেই।’
তবে বৃহস্পতিবার দুর্নীতি দমন কমিশনের আইনজীবী মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘আদেশটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ব্রিটেনের অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিসে পাঠানো হবে৷ সেখানে অ্যাটর্নি জেনারেল অফিস সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে পাঠিয়ে আদেশ কার্যকর করবেন৷’
এভাবে কি সম্ভব? জ্যোর্তিময় বড়ুয়া বলেন, ‘অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিস থেকে বললে ব্যাংক এগুলো শুনবে না৷ আদালতের সুনির্দিষ্ট রায় না থাকলে কোনো অ্যাকাউন্ট সম্পর্কেও ওরা বলবে না৷ শুধু ওদের দেশের ফিনান্সিয়্যাল ইউনিট থেকে কিছু বললে ওরা শুনবে৷ তাছাড়া ওদের ব্যাংকিং আইন অনুযায়ী ওরা চলে৷ সেখানে ওই টাকাগুলো ফেরত আনারও কোনো সুযোগ নেই৷’
যুক্তরাজ্যের স্যানট্যান্ডার ব্যাংক ইউকে’তেতারেক রহমানের নামে দুটি এবং তার স্ত্রীর নামে একটি ব্যাংক হিসাব জব্দ করেছেন আদালত৷ এসব ব্যাংক হিসাবে বাংলাদেশ থেকে সন্দেহজনক লেনদেন হওয়ার অভিযোগ রয়েছে৷ ব্রিটেনের ফিন্যান্সিয়্যাল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (এফআইইউ) এসব ব্যাংক হিসাব আগেই জব্দ করেছে৷
দুদকের অনুমতি মামলার আবেদনে বলা হয়, তারেক রহমানের বিরুদ্ধে দেশ থেকে অর্থ পাচার করে বিদেশে বিনিয়োগ করার অভিযোগের অনুসন্ধান চলছে৷ অনুসন্ধানে দেখা যায়, স্যানট্যান্ডার ব্যাংক ইউকে’তে পরিচালিত একটি প্রতিষ্ঠানের হিসাব থেকে তারেক রহমান এবং জোবায়দা রহমানের তিনটি ব্যাংক হিসাবে ৫৯ হাজার ৩৪১ দশমিক ৯৩ ব্রিটিশ পাউন্ড স্থানান্তর এফআইইউ, ইউকের নির্দেশে আটক আছে৷ ওই অর্থ তারা অন্যত্র হস্তান্তর বা রূপান্তর করার চেষ্টা করছেন৷ তাই বর্ণিত অর্থের বিষয়ে এখনই কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করা হলে তা বেহাত হয়ে যাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে৷
কিন্তু যেহেতু আগে থেকেই অ্যাকাউন্টগুলো সে দেশের সরকার জব্দ করে রেখেছে, তাহলে নতুন করে কীভাবে জব্দ হবে? জনাব বড়ুয়া মনে করেন, ‘এটা তো তারা তাদের দেশীয় আইনে করেছে৷ কিন্তু বাংলাদেশের আইনে তো কিছু করার সুযোগ নেই৷’
যুক্তরাজ্যে থাকা তারেকের বিরুদ্ধে অর্থ পাচারের মাধ্যমে বিদেশে বিনিয়োগ সংক্রান্ত একটি অভিযোগের অনুসন্ধান করছে দুদক৷ সংস্থাটির উপ-পরিচালক আখতার হামিদ ভূঁইয়ার নেতৃত্বে এই অনুসন্ধান চলছে৷ গত বছর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচন ‘প্রভাবিত করার উদ্দেশ্যে’ আসা দেড়শ’ কোটি টাকার’ একটি অংশ উদ্ধারের পর তার সঙ্গে তারেকের সম্পৃক্ততার দাবি করেছিল র্যাব৷
এদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল শুক্রবার এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমানের নামে ব্রিটেনে থাকা ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দের আদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। বিদেশে পুলিশের কর্মকাণ্ড ইন্টারপোলের মাধ্যমে হয়৷ আর ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দের যে আদেশ আদালত দিয়েছেন, তা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে৷
এ বিষয়ে বিএনপির প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘বাংলাদেশে যে অপরাজনীতি চলছে, এটা তারই প্রতিফলন৷ আমি প্রতিহিংসা বলি না, এটা সবাই বলে৷ আমি বলি, এটা অপরাজনীতির প্রতিফলন৷ এই সরকার বিরোধী দলের রাজনীতি বিশ্বাস করে না, এটা তো রাজনীতি না, এটা অপরাজনীতি৷ দেখেন সরকার যদি ভয় না পায়, তাহলে এত শত শত মামলা হবে কেন, কেন রাতের আঁধারে ব্যালটবাক্স ভরে রাখতে হবে? ভয় পায় বলেই তো তাদের এই সব চেষ্টা৷’
খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমান অর্থ পাচারের একটি মামলায় দেশের আদালতে দণ্ডিত৷ এছাড়া একুশে আগস্টের গ্রেনেড হামলা এবং জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় তার দণ্ড রয়েছে৷ সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে গ্রেপ্তার হওয়ার এক বছর বাদে সরকারের নির্বাহী আদেশে মুক্তি নিয়ে চিকিৎসার জন্য যুক্তরাজ্যে গিয়েছিলেন তারেক রহমান, তারপর থেকে স্ত্রী-মেয়েকে নিয়ে সেখানেই বসবাস করছেন তিনি৷
বিদেশে থেকেই বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন তারেক রহমান৷ মা খালেদা জিয়া গত বছর দুর্নীতির মামলায় দণ্ড নিয়ে কারাগারে যাওয়ার পর থেকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব তিনিই পালন করছেন৷ দণ্ড নিয়ে পলাতক তারেককে ফেরাতে বিভিন্ন সময়ে উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলেছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতারা, তবে তাতে এখনো সফল হয়নি৷ –ডয়েচে ভেলে
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন