তাহলে কি রাজাকারের নাতিপুতিরা কোটা সুবিধা পাবে, প্রশ্ন প্রধানমন্ত্রীর
কোটা সংস্কার দাবিতে আন্দোলনকারীদের দাবির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তারা দাবি করছেন মুক্তিযোদ্ধাদের নাতিরা কোটা সুবিধা পেতে পারবেন না। আমার প্রশ্ন হচ্ছে-তাহলে কি রাজাকারের নাতিপুতিরা চাকরির ক্ষেত্রে কোটা সুবিধা পাবে?
সাম্প্রতিক চীন সফর নিয়ে রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। গণভবনে সিনিয়র সাংবাদিকদের চীন সফর নিয়ে ব্রিফ করেন তিনি।
সেখানে প্রশ্নোত্তর পর্বে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে কথা বলার অধিকার তাদের কে দিয়েছে? তারা আন্দোলন করছে। আদালতে গেছেন। আবার আমার সিদ্ধান্তের কথাও বলছেন। আমি এ বিষয়ে বলব-বিষয়টি যেহেতু আদালতে গেছে। আদালতের নির্দেশনা তো আমাদের মানতেই হবে। তারা না মানতে চাইলে আন্দোলন করুক। তবে আমি পরিস্কার করে বলছি, আন্দোলনের নামে কোনো সহিংসতা বরদাশত করব না। কেউ উস্কানি দিচ্ছে কিনা সেটিও দেখা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোটার সুবিধা তো মুক্তিযোদ্ধা পরিবারই গ্রহণ করবে। নাকি রাজাকার পরিবার গ্রহণ করবে?
তিনি বলেন, তারা বলে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যরা অযোগ্য বলে কোটার সুবিধা নিয়ে চাকরি পায়। আমি বলব মুক্তিযোদ্ধারা কিন্তু সব সময়ই বিজয়ী। মুক্তিযোদ্ধারা একাত্তরে কিন্তু তাদের পরাজিত করেছিল।
কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীদের হুঁশিয়ারি প্রধানমন্ত্রীর
কোটাবিরোধী আন্দোলন ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কোটা পদ্ধতি বাতিলের দাবিতে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে বাধা নেই, তবে সহিংসতা করলে ছাড় নয় বলে হুঁশিয়ারি দেন তিনি। এছাড়া কোটা সংস্কার প্রশ্নে আদালতের রায় না আসা পর্যন্ত সরকারের কিছু করার নেই বলেও মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।
রোববার বিকালে গণভবনে চীন সফর নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১৮ সালে আন্দোলন ও সহিংসতার ঘটনায় বিরক্ত হয়ে কোটা বাতিল করেছিলাম। কোটা বাতিল করায় সমস্যা হয়েছে বলেও মনে করেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, একবার তারা (শিক্ষার্থীরা) এ ধরনের আন্দোলন করছিল। আন্দোলন তো না সহিংসতা। ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ করেছিল। তখন আমি বিরক্ত হয়ে বলেছিলাম সব কোটা বাদ দিয়ে দিলাম। তখনই বলেছিলাম যে কোটা বাদ দিলে দেখেন কী অবস্থা হয়। এখন দেখেন কী অবস্থা তৈরি হয়েছে?
তিনি বলেন, যারা আন্দোলন করছে তারা আইন মানবে না, আদালত মানবে না আইন মানবে না। সংবিধান কী তা তারা চেনে না। একটা সরকার কীভাবে চলে তা সম্পর্কে আন্দোলনকারীদের কোনো জ্ঞানই নেই।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের সংবিধান কী বলে তা তাদের জানা উচিত। এখন আদালত তাদের সুযোগ দিয়েছে। তারা আদালতে যাক। কিন্তু তারা আদালতে না গিয়ে রাজপথে দাবি আদায় করতে চায়।
তিনি বলেন, কোটার সমাধান আদালতের মাধ্যমেই হতে হবে। আদালতের রায় মানতে হবে। আর যদি না মানে তাহলে কিছু করার নেই। তারা রাজপথে আন্দোলন করতেই থাকবে করুক। তবে ধ্বংসাত্মক কিছু করতে পারবে না।
শেখ হাসিনা বলেন, তারা যদি কাউকে আঘাত করতে চায়। পুলিশের ঘাড়িতে হামলা করতে চায় তাহলে আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে এখানে আমার কিছু করার নেই।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াংয়ের আমন্ত্রণে গত সোমবার সরকারি সফরে বেইজিং যান। তিনি বৃহস্পতিবার দেশে ফেরেন। বেইজিংয়ে অবস্থানকালে শেখ হাসিনা চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠক করেন। তিনি চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াংয়ের সঙ্গেও দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন।
বুধবার প্রতিনিধি পর্যায়ের দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের পর বাংলাদেশ ও চীন ২১টি সহযোগিতার নথিতে সই এবং নবায়ন করেছে। এসবের বেশিরভাগই সমঝোতা স্মারক। বৈঠকে এশিয়ার এই দুই দেশের মধ্যে শক্তিশালী উন্নয়ন এবং অর্থনৈতিক সহযোগিতার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। বাংলাদেশ ও চীন উভয়েই মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির (এফটিএ) বিষয়ে যৌথ সম্ভাব্যতা সমীক্ষার সমাপ্তিসহ সাতটি ঘোষণা পত্র সই করেছে।
বিসিএসের প্রশ্নফাঁস নিয়ে যা বললেন প্রধানমন্ত্রী
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে কোনো পরীক্ষা নয়, হাওয়া ভবন থেকে পাঠানো তালিকায় বিসিএসে চাকরি হতো বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রোববার বিকালে চীন সফর নিয়ে গণভবনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী প্রশ্নফাঁস ইস্যুতে এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, দেখুন, ২৪তম বিসিএস পরীক্ষা হয়েছিল ২০০২ সালে। বিএনপির আমলে সেই সময়ে যত পরীক্ষা হতো, চাকরি হতো, সব হাওয়া ভবন থেকে তালিকা পাঠানো হতো। সেই তালিকা অনুযায়ী চাকরি হতো। ঢাকা কলেজে সেই সময় একটা বিশেষ কামরা রাখা হতো। সেখানে বসে তাদের লোক পরীক্ষা দিতো। তাদেরই চাকরি হতো। কোনো উচ্চবাচ্য সেসব কিন্তু নেই।
শেখ হাসিনা বলেন, প্রশ্নফাঁস করে নিজেদের লোককে চাকরি দেওয়াটা সেই জিয়ার আমল থেকে শুরু হয়েছিল। খালেদার আমলে সেটা চলেছে। আমরা এটা থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করেছি এবং সফল হয়েছি। কোটা বাতিলের পর অনেকে চাকরিতে ঢুকে গেলো। তারা এখন অনেক জায়গায় বসে এসব প্রশ্নফাঁসসহ বিভিন্ন অপকর্ম করছে।
কোটা ইস্যুর সমাধান আদালতে: প্রধানমন্ত্রী
কোটা সংস্কার আন্দোলন ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানিয়েছেন, সমাধান কোর্টেই করতে হবে। রোববার বিকাল ৪টায় গণভবনে চীন সফর নিয়ে সংবাদ সম্মেলনের সময় এ কথা বলেছেন তিনি।
এর আগে রোববার বিকালে কোটা আন্দোলনকারীরা বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি বরাবর স্মারকলিপি পেশ করেন। এরপর সরকারি চাকরিতে কোটার যৌক্তিক সংস্কারের এক দফা দাবি আদায়ে ফের ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। তারা এ সময়ের মধ্যে কোটা নিয়ে দৃশ্যমান পদক্ষেপ চেয়েছেন।
রোববার বিকাল ৩টা ২০ মিনিটে রাজধানীর গুলিস্তানের পাতাল মার্কেট এলাকায় এ ঘোষণা দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম।
তিনি বলেন, এক দফা দাবিতে আমরা রাষ্ট্রপতির কাছে স্মারকলিপি দিয়েছি। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অধিবেশন ডাকার দাবি জানিয়েছি। আমরা এই দৃশ্যমান পদক্ষেপ দেখতে চাই।
নাহিদ ইসলাম বলেন, আজ আমাদের থামানো যায়নি। আমরা চাইছি না কঠোর কর্মসূচিতে যেতে। আমরা চাই দ্রুত দৃশ্যমান পদক্ষেপ নিয়ে আমাদের দাবি মেনে নেওয়া হোক। আগামী ২৪ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণ করা হবে। এরপর আমরা সে অনুযায়ী পরবর্তী কর্মসূচি গ্রহণ করব।
কোটা সংস্কার আন্দোলনের এ সমন্বয়ক বলেন, সময় ২৪ ঘণ্টা বাড়ানো হলো মামলা সরিয়ে নিতে। না হলে আমরা কঠোর কর্মসূচি নিয়ে সবাইকে জবাবদিহি করতে বাধ্য করব।
স্মারকলিপি জমাদানকারী প্রতিনিধি দলে ছিলেন– সারজিস আলম, নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ, হাসিব আল ইসলাম, রিফাত রশিদ, হান্নান মাসুদ, সুমাইয়া আক্তার, আব্দুল কাদের, মেহেরুন্নেসা নিদ্রা, মো. মাহিন সরকার, আরিফ সোহেল ও আশিক।
এক দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে রোববার বেলা ১১টা থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনে গ্রন্থাগারের সামনে ছোট ছোট দল নিয়ে জড়ো হতে শুরু করেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। পরে দুপুর ১২টায় তারা কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে থেকে এ পদযাত্রা শুরু করেন। পদযাত্রায় ঢাকার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা যুক্ত হন।
এ সময় মিছিলটি বঙ্গভবনের উদ্দেশে এগিয়ে যেতে থাকলে দুপুর ১টার দিকে শিক্ষা ভবনের সামনে তাদের আটকাতে ব্যারিকেড দেয় পুলিশ। পরে শিক্ষার্থীরা পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে এগিয়ে যান। এরপর গণপদযাত্রা নিয়ে শিক্ষা ভবন এলাকা অতিক্রম করে সচিবালয়ের কাছে পৌঁছালে ‘ভুয়া’ ‘ভুয়া’ স্লোগান দিতে শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। পরে সচিবালয় গেট বন্ধ করে দেওয়া হয়।
তাদের এ কর্মসূচি রাজধানীর জিরো পয়েন্টে পৌঁছালে সেখানে পুলিশের ব্যারিকেড দেখা যায়। ব্যারিকেডের কারণে সামনে এগোতে না পেরে সড়কেই বসে পড়েন আন্দোলনকারীরা। এক পর্যায়ে দুপুর ১টা ৪০ মিনিটের দিকে গুলিস্তান জিরো পয়েন্টের ব্যারিকেড ভেঙে বঙ্গভবনের দিকে রওনা হন শিক্ষার্থীরা।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন