তিনবারই আ.লীগ আমার সমর্থনে ক্ষমতায় : এরশাদ
জাতীয় পার্টির সমর্থন পেয়ে আওয়ামী লীগ তিনবার ক্ষমতায় এসেছে বলে জানিয়েছেন দলটির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। ১৯৯৬, ২০০৮ ও ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলেও তিনি তেমন কিছু পাননি বলে জানান প্রধানমন্ত্রীর এই বিশেষ দূত। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি উভয় দলই জাতীয় পার্টির প্রতি অবিচার করেছে বলে দাবি করেন তিনি।
তবে এবার জাতীয় পার্টি নিজ পায়ে দাঁড়িয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, জাতীয় পার্টিকে ছাড়া আগামীতে নির্বাচন হবে না। আগামীতে এককভাবে নির্বাচন করার ঘোষণাও দেন সাবেক এই স্বৈরশাসক।
সোমবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে দলের ৩২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
নিজের ক্ষমতা গ্রহণের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে এরশাদ বলেন, ‘জাস্টিস সাত্তার আমার কাছে এসে বলেন তার মন্ত্রীরা দুর্নীতিবাজ, তাই তিনি ক্ষমতা সেনাবাহিনীর কাছে ছাড়তে চান। আমি ছিলাম সেনাবাহিনীর প্রধান, আমার জায়গায় অন্য কেউ থাকলেও ক্ষমতা নিতে হতো। তাই ১৯৮২ সালে বাধ্য হয়ে আমি পরিচালনার দায়িত্ব নিই। আমি ব্যারাকে ফিরে যেতে চেয়েছি, তাই ১৯৮৪ নির্বাচন দিয়েছিলাম, তখন জাতীয় পার্টি ছিল না। কোনো দল আসেনি।’
এরশাদ বলেন, ‘দেশকে তো এভাবে অধঃপতনের দিকে ফেলে দেয়া যায় না। তাই ১৯৮৬ সালের ১ জানুয়ারি জাতীয় পার্টি গঠন করি। চার মাস পর নির্বাচনে একমাত্র বিএনপি ছাড়া বাকি সব দল এলো। সেই নির্বাচনে ১৫৩টিরও বেশি আসন পেয়ে ক্ষমতায় আসি। আমার হাতে রক্তের দাগ নেই।’
ক্ষমতা ছাড়ার পর তিনি নিজে, তার পরিবার ও দলের অনেক নেতা-কর্মী নির্যাতনের শিকার হয়েছে জানিয়ে এরশাদ বলেন, ‘সুখতো নাই-ই, দুঃখের কথা বলি। আওয়ামী লীগ তিন বারই ক্ষমতায় গিয়েছে জাতীয় পার্টির সহযোগিতায়। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি কেউই আমাদের প্রতি সুবিচার করেনি।’
‘১৯৯৬ সালের জাতীয় নির্বাচনের বিএনপি পেয়েছিল ১৩৪ আসন, জাপা পায় ১৬, আর আওয়ামী লীগ ১৪৪ আসন পায়, জামায়াতের ছিল তিনটি। আমরা বিএনপির সঙ্গে যোগ দিলে জামায়াতের তিনটিসহ ১৫৩টি আসন নিয়ে জয়ী হতো বিএনপি। ১৯৯৬ সালে জেলে আমার কাছে মধ্যরাতে লোক পাঠিয়েছিল বিএনপি। সমর্থন চেয়ে বলেছিল- আমি প্রধানমন্ত্রী হতে চাইলেও তাদের আপত্তি নেই। কিন্তু আমি আওয়ামী লীগকে সমর্থন দিই, তারা সরকার গঠন করে। কিন্তু আমি কী পেলাম…! আমার দলের মহাসচিব আনোয়ার হোসেন মঞ্জুকে দিয়ে আমার দল ভাঙা হলো।’
এরশাদ বলেন, ‘১৯৯১ এর নির্বাচনে বিএনপি আমাদের নির্যাতন করে দলে ভাঙন ধরাতে চেয়েছিল। কিন্তু আমরা টিকে গেছি। আমরা জনগণের জন্য কাজ করেছি, তাদের দোয়ায় টিকে আছি। জাতীয় পার্টি এখন বিগ ফ্যাক্ট ইন পলিটিক্স।’
১৯৯০ সালের ২৭ নভেম্বর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন মিছিলে গুলিতে নিহত বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের তৎকালীন যুগ্ম-মহাসচিব ডা. শামসুল আলম খান মিলন হত্যার বিচার প্রসঙ্গে এরশাদ বলেন, ‘প্রতি বছরই ২৭ নভেম্বর ডা. মিলন দিবস পালন করা হয়। কিন্তু এর বিচার কেন হলো না? আমরা ক্ষমতায় গেলে এ হত্যাকাণ্ডের বিচার করবো।’
‘একই মাসেই মিছিল করতে গিয়ে পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারানো নূর হোসেনের হত্যার দায় আমার না। নূর হোসেনকে কারা মেরেছে আমরা জানি না। তবে ক্ষমতায় গেলে এ বিষয়টাও খতিয়ে দেখা হবে।’ বলেন এরশাদ।
সভার শেষে জাপা চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে সমবেত নেতাকর্মীরা রাজধানীতে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আনন্দ শোভাযাত্রা বের করেন।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মহাসমাবেশ করার ঘোষণা দেন এরশাদ।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন