তিনি ভিআইপি প্রতারক! অতিষ্ট এলাকাবাসী

চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলার চরলক্ষ্যায় ভিআইপি প্রতারক মো. মোজাম্মেল হক (৪৩) এর অত্যাচারে অতিষ্ট এলাকাবাসি। কখনো সে পুলিশের এএসপি, কখনো সাংবাদিক আবার কখনো সে উপ-সচিব পরিচয় দিয়ে বিভিন্নজনের সঙ্গে প্রতারণা করছেন। আবার বিভিন্ন নিরীহ মানুষের জায়গা জমি, বাড়ি ঘর দখল চেষ্টা করে চাঁদা দাবি করছেন।

তার বেশকিছু প্রতারণার মধ্যে রয়েছে- ভিজিটিং কার্ড এডিট করে নাম পদবী ঠিক রেখে কার্ডের নিচে থাকা মোবাইল নম্বর ও ইমেইল আইডি মুছে ফেলে নিজের ফোন নম্বর ও ইমেইল আইডি দিয়ে বানিয়ে নিতেন উপ-সচিবের কার্ড। সচিব পরিচয়ে বিভিন্ন বাহিনীতে চাকরি দেওয়া থেকে শুরু করে স্কুলে ভর্তি, ব্যবসায়ীর কাছে মালামাল কেনার নামে আত্মসাৎ, এমন কোনো প্রতারণা বাদ দেননি তিনি।

আবার পুলিশি ঝামেলা এড়াতে নিজেকে ক্ষেত্র বিশেষে পরিচয় দিতেন ২৫তম বিসিএস পুলিশ ক্যাডার অথবা চ্যানেল এস নামক আইপি টিভির সাংবাদিক।

সে এমনই এক ভিআইপি প্রতারক।

গ্রাম ছেড়ে শহর ও মহানগর ছাড়িয়ে বাদ দিচ্ছে না এখন নিজের গ্রামও।

গত বুধবারও চরলক্ষ্যার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের মোঃ মাসুদ নামক এক ব্যক্তির বাসায় জোরপূর্বক প্রবেশ করে ভয়ভীতি দেখিয়ে ৫ লক্ষ চাঁদা দাবি করে। টাকা না দেওয়ায় বাসা থেকে উচ্ছেদ করে দখল করার চেষ্টা করেন। বাসার লোকজনকে বের করে মারধর করতে শুরু করেন। এতে আহত হন ঐ বাড়ির আবদুল মন্নান (৩২), পারুল বেগম (৫৭) জানালেন ভুক্তভোগিরা।

পরে খবর পেয়ে কর্ণফুলী থানার এসআই সুমন দের নেতৃত্বে একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন।

এ ঘটনায় সিএমপি কর্ণফুলী থানায় মোজাম্মেলসহ তিনজনের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ (নম্বর-১৪৪৬) দায়ের করেন ভুক্তভোগি পরিবার।

জানা যায়, ওই প্রতারক দীর্ঘ দিন ধরে শহরের বিভিন্ন এলাকায়ও এ ধরনের চাঁদা দাবি ও প্রতারণা চালিয়ে আসছেন। তার এই অপকর্মে সহযোগিতা করছেন তার’ই আপন ভাই মনজুরুল হক, নাজিমুল হক ও সংঘবদ্ধ একটি গ্রুপ।

তথ্য মিলে কিছু দিন আগেও তাকে গ্রেপ্তার করে সিএমপি কোতোয়ালী থানার পুলিশ। উদ্ধার করেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপসচিবের ভুয়া ভিজিটিং কার্ড ও ‘চ্যানেল এস টিভি’-এর সাংবাদিকের ভুয়া ভিজিটিং কার্ড।

অভিনব এই ভিআইপি প্রতারক মো. মোজাম্মেল হক (৪৩) চট্টগ্রামের কর্ণফুলী থানার চরলক্ষ্যার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের হাজী আব্দুল হকের ছেলে।

অন্যদিকে, জেলা প্রশাসকের স্বাক্ষর জাল করার অপরাধে তার বিরুদ্ধে কোতোয়ালী থানায় মামলা ও একাধিক অভিযোগ রয়েছে বলে পুলিশ জানায়।

এদিকে, আরেক ভুক্তভোগী মোঃ আলী জানান, এলাকায় এরা নামে বেনামে বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে অভিযোগ দিয়ে নিরীহ সাধারণ মানুষকে হয়রানি করেন। আবার দখলবাজি ও অনৈতিক সুবিধা আদায়সহ নানা অপরাধমূলক কর্মকান্ডে জড়িত। এদের অত্যাচারের কারণে আতংকিত সাধারণ লোকজন। এসব থেকে মুক্তি পেতে তারা প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করেছেন।

এছাড়া তাদের ছত্রছায়ায় চরলক্ষ্যার বোর্ডবাজার এলাকায় মাদক ব্যবসায় জড়িত গণি নামে এক ব্যক্তি। তাদের বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করলে মারধর করে। বেশি বাড়াবাড়ি করলে মিথ্যা মামলা দিয়ে ফাসিয়ে দেবার হুমকি দেয়। বলে বেড়ায় তাদের নাকি প্রশাসনের সাথে সম্র্পক রয়েছে। প্রশাসন নাকি তাদের কথা মত উঠে আর বসে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ভুক্তভোগীরা জানান, সংঘবদ্ধ গ্রুপটি খুবই বেপরোয়া প্রকৃতির। তারা প্রতিনিয়ত প্রভাব দেখিয়ে অবৈধভাবে সাধারণ লোকজনের হুমকি দমকি দিয়ে ভয়ভীতি প্রদর্শন করেন। তাদের দাবীকৃত সুবিধা দিতে না পরলে মারধর করে মারাত্বকভাবে জখম করে।

সাধারণ লোকজনের জান-মাল, সম্পদ ও পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এলাকাবাসি প্রশাসনের সহযোগিতা প্রত্যাশা করছেন। অভিযুক্ত মোজাম্মেল হকের ভিজিটিং কার্ড থেকে নম্বর নিয়ে একাধিকবার কল করেও তার সংযোগ পাওয়া যায়নি।

কর্ণফুলী থানার ওসি তদন্ত ফেরদৌস জাহান বলেন, ‘মোজাম্মেলের বিরুদ্ধে অতীতেও নানা অভিযোগ ও প্রতারণা মামলা ছিল পুলিশের খাতায়। এর মধ্যে চরলক্ষ্যার মাসুদ নামে এক ব্যক্তি থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন। যা তদন্ত করছেন এসআই সুমন দে।’

ঘটনার সত্যতা জানিয়ে এসআই সুমন দে বলেন, ‘অভিযোগ পেয়ে ঘটনাস্থল গিয়ে জানতে পারলাম দুপক্ষেই মারধর করেছেন। তাদের থানায় ডাকা হয়েছে। মোজাম্মেলের বিষয়ে আমরা অবগত। কেউ আইনের উর্ধ্বে নয়, যারা দোষী তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’