তিন দিবসকে সামনে রেখে যশোরের গদখালীতে ৭০ কোটি টাকার ফুল বিক্রি
উৎসবের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে বিশেষ দিন। দরজায় কড়া নাড়ছে ঋতুরাজ বসন্ত। চলতি মাসে বসন্ত উৎসব, বিশ্ব ভালোবাসা দিবস এবং ২১ ফেব্রুয়ারী আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। ফুল ছাড়া এই তিন দিবস অসম্পূর্ণ।
পহেলা ফালগুন বসন্তকে বরণ করে নিতে রঙিন ফুলের বিকল্প নেই। বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে প্রিয়জনকে দেওয়া গোলাপের সুঘ্রাণে ভালোবাসা বেড়ে যায় বহুগুণ। একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জানানো হয় তাজা ফুল দিয়ে।
তিন দিবসকে সামনে রেখে যশোরের গদখালীর ফুলের পাইকারি বাজারে জমজমাট বেচাকেনা নিয়ে ফুলচাষি ও ব্যবসায়ীদের ব্যস্ততা তুঙ্গে। ফুলচাষি ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, করোনা পরবর্তী এ বছর ফুলের বেচাকেনা সব থেকে বেশি। ফুল ব্যবসায় তিন বছরের ক্ষতি পুষিয়ে ফের লাভের মুখ দেখতে পাচ্ছেন চাষি ও ব্যবসায়ীরা।
সরেজমিনে গদখালীতে ফুলের পাইকারি বাজারে গিয়ে দেখা যায়, বিক্রেতাদের হাঁকডাকে সরগরম বাজার। দূর-দূরান্তের খুচরা ব্যবসায়ীদের পদচারণায় মুখরিত ফুলের বাজার। দাম ও ফুলের চাহিদা ভালো পেয়ে খুশি মনে ফুল কিনে নিয়ে ফিরছেন ব্যবসায়ীরা। অন্যদিকে ভালো দাম পেয়ে খুশি কৃষক ও পাইকারি ফুল ব্যবসায়ীরা। গদখালী বাজারে গোলাপ প্রতি পিস বিক্রি হচ্ছে ২০-২৫ টাকা, জারবেরা প্রতি পিস ১২-১৫ টাকা, রজনীগন্ধা স্টিক প্রতি পিস ১০-১২ টাকা, জিপসি আঁটি প্রতি ৩০-৩৫ টাকা, গাধা প্রতি হাজার ২৫০-৩০০ টাকা, গাডিওলাস রং ভেদে ১০-১৫ টাকা, চন্দ্রমলিকা প্রতি পিস ৪-৫ টাকা, লিলিয়াম প্রতি পিস ১০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে।
পানিসারা এলাকার রফিকুল ইসলাম নামে এক ফুলচাষী বলেন, গত ৭ ও ৮ ফেব্রুয়ারী থেকে ফুলের বাজার জমজামট হয়েছে। উৎসব যত ঘনিয়ে আসছে ততই ফুলের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে, দামও ভালো পাচ্ছি। করোনা পরবর্তী সময়ে এ বছর বাজার সব থেকে ভালো যাচ্ছে, ফলে আমরা করোনার লোকসান দ্রুত কাটিয়ে উঠতে পারবো।
আল আমিন নামে এক পাইকারী ফুল ব্যবসায়ী বলেন, সারা বছর ফুলচাষি ও ব্যবসায়ীরা এই একটা সময়ের জন্য অপেক্ষা করেন। এই ফেব্রুয়ারী মাসে সারাদেশ থেকে খুচরা ব্যবসায়ীরা গদখালী বাজারে এসে ফুল কিনে নিয়ে যান। এ বছর দাম ভালো, বাজার ভালো, চাহিদাও ভালো।
এদিকে ফুল চাষিরা জানিয়েছেন, এ বছর ঝিকরগাছা উপজেলার প্রায় ছয় হাজার কৃষক ফুল চাষ করেছেন। চলতি মাসে তিন উৎসবকে ঘিরে ৭০ কোটি টাকার ফুল বিক্রির আশা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ ফলোয়ার সোসাইটির সভাপতি ফুলচাষি আব্দুর রহিম বলেন, ৭ ও ৮ ফেব্রুয়ারী থেকে তিন দিবসকে ঘিরে গদখালী বাজারে ফুলের বেচাকেনা জমে উঠেছে। এ বছর উপজেলার প্রায় ৬ হাজার কৃষক এ ফুল চাষের সঙ্গে জড়িত ছিল। উৎসবের সময় যত ঘনিয়ে আসছে ফুলের দামও ততই বাড়ছে। বাজার দর ভালো পেয়ে ফুলচাষি, পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ী সকলেই খুশি।
বিশ্ব ভালোবাসা দিবস, বসন্ত বরণ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসকে ঘিরে ৭০ কোটি টাকার ফুল বিক্রির লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। দেশের ফুলের মোট চাহিদার প্রায় ৭০ ভাগ ফুলই এ গাদখালী থেকে সরবরাহ করা হয়। আর এ কারণেই দেশের ফুলের রাজধানী হিসেবে খ্যাতি পেয়েছে যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালী ফুলের বাজার।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন