তিন সিটিতে নগরপিতা বাছাইয়ের লড়াই চলছে

রাজশাহী, বরিশাল ও সিলেট সিটি কর্পোরেশনে নগরপিতা বাছাইয়ের লড়াই শুরু হয়েছে।

সোমবার সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলবে টানা ভোট গ্রহণ।

সিটিগুলোর মেয়র পদে কাগজ-কলমে ১৯ প্রার্থীর নাম থাকলেও নির্বাচনী মাঠে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ১৭ জন। তাদের মধ্য থেকেই নির্বাচিত হবেন আগামীর নগরপিতা। কাউন্সিলর পদেও এ দুই দল সমর্থিত প্রার্থীদের মধ্যে মূল লড়াই চলছে। তিন সিটির ৮৭ ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৩৮১ জন ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ১৪৯ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

সুষ্ঠু ভোট নিশ্চিতে তিন সিটিতে পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি ও আনসার বাহিনীর প্রায় সাড়ে ১৭ হাজার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মাঠে রয়েছেন। এ নির্বাচন উপলক্ষে তিন সিটি কর্পোরেশন এলাকায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়েছে যান চলাচলের ওপর।

তিন সিটি নির্বাচন স্থানীয় গণ্ডি ছাড়িয়ে জাতীয় রাজনীতির অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাত্র কয়েক মাস আগে অনুষ্ঠিত তিন সিটি কর্পোরেশনে নির্বাচন ঘিরে নিজ নিজ এলাকায় একদিকে যেমন উৎসবভাব রয়েছে, অপরদিকে চরম শঙ্কা ও আতঙ্ক বিরাজ করছে।

যদিও ভোটের নিরাপত্তায় তিন সিটিতে পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি ও আনসার বাহিনীর প্রায় সাড়ে ১৭ হাজার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মাঠে রয়েছেন।

পাশাপাশি ১২৭ জন জুডিশিয়াল ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটও মোতায়েন করা হয়েছে। নির্বাচনের সব ধরনের প্রস্তুতি শেষে করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তবুও ভোটের দিনের পরিবেশ নিয়ে ভোটারদের মধ্যে রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।

সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠান বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তিন সিটিতে ভোট সুষ্ঠু করতে মাঠ প্রশাসনকে বিভিন্ন ধরনের নির্দেশনা দিয়েছে সাংবিধানিক এ প্রতিষ্ঠানটি। রোববারও তিন সিটির ভোট নিয়ে অনানুষ্ঠানিক বৈঠক করেছেন কমিশন কর্মকর্তারা। তিন সিটির ভোট পর্যবেক্ষণে তিনজন নির্বাচন কমিশনার সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছেন। এছাড়া নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে একটি মনিটরিং সেলও খোলা হয়েছে।

সর্বশেষ ২০১৩ সালের ১৫ জুন এ তিন সিটি কর্পোরেশনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ওই নির্বাচনে সবক’টিতে বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী জয়ী হন। এবারের নির্বাচনে রাজশাহী ও সিলেটে মেয়র পদে গত নির্বাচনের প্রার্থীদের আবারও মনোনয়ন দিয়েছে প্রধান দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি।

বরিশাল সিটিতে দু’দলই নতুন প্রার্থী দিয়েছে। রাজশাহী সিটির সদ্য বিদায়ী মেয়র বিএনপির মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল লড়ছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী সাবেক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের সঙ্গে। সিলেট সিটি কর্পোরেশনের সদ্য বিদায়ী মেয়র বিএনপির আরিফুল হক চৌধুরীর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ প্রার্থী সাবেক মেয়র বদরউদ্দিন আহমদ কামরান। আর বরিশাল সিটিতে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিএনপির প্রার্থী প্রবীণ রাজনীতিক মজিবর রহমান সরোয়ার ও আওয়ামী লীগের নবীন নেতা সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ।

তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা : রাজশাহী, বরিশাল ও সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন সুষ্ঠু করতে তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ভোট গ্রহণের দায়িত্বে রয়েছেন পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি ও আনসার বাহিনীর প্রায় সাড়ে ১৭ হাজার সদস্য। সিলেট সিটি কর্পোরেশনে প্রায় সাড়ে ছয় হাজার, রাজশাহীতে প্রায় ছয় হাজার এবং বরিশাল সিটিতে পাঁচ হাজারের বেশি সদস্য মাঠে রয়েছেন। প্রতিটি সিটিতে সাধারণ ভোট কেন্দ্রে পুলিশ ও আনসারের ২২ জন ও ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে ২৪ জন সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। ভোট কেন্দ্রের বাইরে মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্সও আছে।

রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ, এপিবিএন ও আনসারের ৩০টি মোবাইল টিম ও ১০টি করে স্ট্রাইকিং ফোর্স মাঠে রয়েছে। এছাড়া র‌্যাবের ৩০টি টিম ও ১৫ প্লাটুন বিজিবি টহল দিচ্ছে। এছাড়া ৪ প্লাটুন বিজিবি রিজার্ভ ফোর্স হিসেবে সংরক্ষিত রয়েছে। এ সিটির ১৩৮টি ভোট কেন্দ্র ও ১ হাজার ২৬টি ভোটকক্ষ রয়েছে। এর মধ্যে ১১৪টি ভোট কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ।

বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ১২৩টি ভোট কেন্দ্রের মধ্যে ১১২টিই ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে পুলিশ। এর মধ্যে ৫৫টি ভোট কেন্দ্র অতি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। এ সিটির ভোটের নিরাপত্তায় পুলিশ, এপিবিএন ও আনসারের ৩০টি মোবাইল টিম ও ১০টি করে স্ট্রাইকিং ফোর্স মাঠে রয়েছে। এছাড়া র‌্যাবের ৩০টি টিম ও ১৫ প্লাটুন বিজিবি টহল দিচ্ছে। এর বাইরে ৪ প্লাটুন বিজিবি রিজার্ভ ফোর্স হিসেবে সংরক্ষিত রয়েছে।

সিলেট সিটিতে ১৩৪টি ভোট কেন্দ্র ও ৯২৬টি ভোটকক্ষ রয়েছে। এর মধ্যে ৮০টি ভোট কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। এ সিটির ভোটের নিরাপত্তায় পুলিশ, এপিবিএন ও আনসারের ২৭টি মোবাইল টিম ও ১০টি করে স্ট্রাইকিং ফোর্স মাঠে রয়েছে। এছাড়া র‌্যাবের ২৭টি টিম ও ১৪ প্লাটুন বিজিবি টহল দিচ্ছে। এর বাইরে ৩ প্লাটুন বিজিবি রিজার্ভ ফোর্স হিসেবে সংরক্ষিত রয়েছে।

প্রার্থী ও ভোটার সংখ্যা : রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে ৫, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১৬০ ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ৫২ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এ সিটিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির পাশাপাশি বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী মাঠে রয়েছেন।

এর বাইরে একজন স্বতন্ত্র প্রার্থীও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এ সিটিতে আওয়ামী লীগের এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন ও বিএনপির মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের মধ্যে মূল লড়াই হবে বলে জানা গেছে। ৩০টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত এ সিটিতে ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ১৮ হাজার ১৩৮ জন; যার মধ্যে পুরুষ ১ লাখ ৫৬ হাজার ৮৫ ও নারী ১ লাখ ৬২ হাজার ৫৩ জন।

বরিশাল সিটি কর্পোরেশনে ৭ মেয়র প্রার্থী রয়েছেন। এদের মধ্যে বশিরুল হক ঝুনু নামের স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচন থেকে সরে গেছেন। বাকি ছয় মেয়র প্রার্থী মাঠে রয়েছেন। বরিশাল সিটিতে সাধারণ ৩০টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৩টিতে ও একটি সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।

বাকি ২৭টি সাধারণ ওয়ার্ডে ৯১ জন ও ৯টি সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৩৪ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এ সিটিতে ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৪২ হাজার ১৬৬, যার মধ্যে পুরুষ ১ লাখ ২১ হাজার ৪৩৬ ও নারী ভোটার ১ লাখ ২০ হাজার ৭৩০ জন।

সিলেট সিটি নির্বাচনে ৭ মেয়র প্রার্থী হলেও বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী মো. বদরুজ্জামান সেলিম নির্বাচন থেকে সরে গেছেন। বাকি ৬ মেয়র প্রার্থী মাঠে রয়েছেন। মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন আওয়ামী লীগের বদরউদ্দিন আহমদ কামরান ও বিএনপির আরিফুল হক চৌধুরী।

এছাড়া জামায়াত প্রার্থী এহসানুল মাহবুব জুবায়ের প্রথমবার প্রার্থী হয়ে আলোচনায় আছেন। এ সিটিতে সর্বোচ্চ ৩ লাখ ২১ হাজার ৭৩২ ভোটার। এর মধ্যে পুরুষ ১ লাখ ৭১ হাজার ৪৪৪ ও নারী ভোটার ১ লাখ ৫০ হাজার ২৮৮ জন। ২৭টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত সিলেট সিটিতে সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১২৭ ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৬২ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।