তিস্তার পানি বিপৎসীমার ২৯ সেন্টিমিটার উপরে, নির্ঘুম রাত তিস্তা পাড়বাসীর

উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল আর টানা বৃষ্টির কারণে তিস্তা নদীর পানি ডালিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে ভাটিতে থাকা চার উপজেলার নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। হুমকির মুখে পড়েছে উজানে থাকা ফ্লাড বাইপাসসহ ঘরবাড়ি ও স্থাপনা।
রাত গভীর হলে এসব এলাকায় পানি ঢুকে প্লাবিত হয়ে দুর্ভোগের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এছাড়াও পানির তেড়ে বেশ ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
এদিকে উজানের ঢল আসায় নদী তীরবর্তী মানুষদের নিরাপদ স্থানে চলে যেতে মাইকিং করছে পাউবো। ফ্লাড বাইপাসের উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হওয়ায় হুমকির মুখে পড়েছে সড়কটি। এতে ভাটিতে থাকা ঘরবাড়ি সহ বিভিন্ন স্থাপনা হুমকিতে পড়েছে।
রোববার (৫ অক্টোবর) সন্ধ্যা ৬টার দিকে তিস্তা ব্যারেজের ডালিয়া পয়েন্টে নদীর পানির উচ্চতা রেকর্ড করা হয় ৫২ দশমিক ২৫ মিটার, যা বিপৎসীমার ১০ সেন্টিমিটার ওপরে। আর রাত নয়টায় বিপৎসীমার ২৯ সে.মি উপরে পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয়েছে।
পাউবো বলছে, আগামী ২৪ ঘন্টায় উজানের ভারী ঢল এসে নদী এলাকা প্লাবিত হতে পারে। এসময় বিপৎসীমার উপরে পানি প্রবাহ অব্যাহত থাকবে।
পানি বৃদ্ধি মোকাবিলায় পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) তিস্তা ব্যারেজের সব (৪৪টি) জলকপাট খুলে দিয়েছে।
নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল ও চরের অনেক ঘরবাড়িতে পানি প্রবেশ করতে শুরু করেছে।বেশ কিছু এলাকায় ফসলের জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে ফসলের ক্ষতিসহ গবাদী পশুপাখি নিয়ে দুশ্চিন্তা বাড়ছে। দুশ্চিন্তায় রাত পার করছে তিস্তাপাড়বাসী।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, ৫ অক্টোবর সকাল ৯টা থেকে ৬ অক্টোবর সকাল ৯টার মধ্যে দেশের অভ্যন্তরে ও উজানে ভারি থেকে অতি ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমার নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে। এতে লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর ও কুড়িগ্রাম জেলার নদীসংলগ্ন নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে।
তিস্তা পাড়ের বাসিন্দা শহিদুল ইসলাম (৪৫) বলেন, “বাড়িঘর পানিতে তলিয়ে গেছে। আজকে এখনও জ্বালাতে পারিনি। শিশুদের খাবার নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি। সরকার ও প্রশাসনের সহায়তা এখন সবচেয়ে বেশি দরকার।
গড্ডিমারী ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান জিয়া বলেন, “তিস্তা ব্যারেজের একেবারে পাশে হওয়ায় আমার ইউনিয়নের ওপর সবচেয়ে বেশি চাপ পড়েছে। এখন প্রায় পাঁচ হাজার পরিবার পানিবন্দি অবস্থায় আছে। শুকনা খাবার ও ত্রাণ সহায়তা অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে।
লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীল কুমার বলেন, কয়েক দিনের ভারী বৃষ্টিপাত এবং উজান থেকে নেমে আসা ঢলের কারণে তিস্তার পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। তীরবর্তী এলাকাগুলোর মানুষকে অগ্রিম জানানো হয়েছে যেন তারা প্রস্তুত থাকে। ক্ষয়ক্ষতি কমাতে প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে, লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. শায়খুল আরিফিন বলেন,বর্তমানে তিস্তা তীরবর্তী অঞ্চলে রোপা আমন, চিনা বাদাম ও শাকসবজির চাষ হচ্ছে। পানি যদি তিন থেকে চার দিন স্থায়ী হয়, তাহলে কৃষকদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে। তবে এক থেকে দুই দিনের মধ্যে পানি নেমে গেলে তেমন ক্ষতি হবে না। আমরা চেষ্টা করছি কৃষকদের ক্ষতি যেন কম হয়।

এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন