তেরেসার খারাপ ফলের নেপথ্যেও ট্রাম্প?
ব্রিটেনের সাধারণ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে’র দল কনজারভেটিভ পার্টি ‘বিপর্যয়কর’ ফল করেছে। গতবারের মতো একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা ধরে রাখতে পারেনি দলটি বরং বেশ কিছু আসন হারিয়েছে, হারিয়েছে বহু ভোটারের সমর্থন।
তেরেসার এ খারাপ ফলের কারণ কি তা নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। এমন বাজে পারফরম্যান্সে দলে তার নেতৃত্বে নিয়েও ইতিমধ্যে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে।
অনেকেই অনেক কারণ দেখিয়েছেন এবং দেখাচ্ছেন। তবে সিএনএনের কলামিস্ট ফ্রিদা ঘিতিস বলছেন, তেরেসার এ বিপর্যয়কর ফলাফলের নেপথ্যে রয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে তার সংশ্লিষ্টতা।
তিনি লিখেছেন, যুক্তরাজ্যে নির্বাচনের মাত্র পাঁচ দিন আগে আইএস সংশ্লিষ্ট সন্ত্রাসীগোষ্ঠী লন্ডনের প্রাণ কেন্দ্রে এক ভয়াবহ হামলা চালায়। এতে ৮ জন নিহত এবং আরও কয়েক ডজন লোক আহত হন। এ সন্ত্রাসী হামলার মাত্র এক ঘণ্টার মধ্যে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রতিক্রিয়া জানান। ব্রিটেনের প্রধান বিরোধী দল লেবার পার্টির একজন সদস্য ও লন্ডনের মেয়র সাদিক খানের বিরুদ্ধে এক টুইটার বার্তায় কামান দাগেন তিনি। এটাই ছিল কনজারভেটিব পার্টির নেতা তেরেসার প্রতি অন্যতম বড় আঘাত। ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেয়ার পর তেরেসাই ছিলেন প্রথম কোনো বিদেশি নেতা যিনি হোয়াইট হাইস সফর করেন। তার ওই সফর প্রতিদ্বন্দ্বী লেবার দলের জন্য অবশ্যই আশীর্বাদস্বরূপ ছিল। ট্রাম্পের সঙ্গে তেরেসা সম্পর্ক ব্রিটেনের বহু ভোটারের উদ্বেগের কারণ।
ফ্রিদা বলেন, দেশটির ভোটাররা বৃহস্পতিবার যখন ভোট কেন্দ্রে গেল, তেরেসার প্রতি আরেকটা তীব্র আঘাত দেয়ার সুযোগ তারা হাতছাড়া করেননি। ব্রেক্সিট ইস্যুকে সামনে রেখে তেরেসা মূলত জনগণের সঙ্গে একটা জুয়া খেলতে চেয়েছিলেন। তিনি চেয়েছিলেন, ব্রিটিশ জনগণ ব্রেক্সিট ইস্যুতে তার হাত আরও শক্তিশালী করতে ও এক্ষেত্রে তার আত্মবিশ্বাস আরও বাড়াতে ম্যানডেট দেবে। তবে তার চাওয়ার বিপরীতটাই ঘটেছে। সরকার গড়ার ক্ষেত্রে অল্পের জন্য ঝুলে গেলেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, নির্বাচনে তেরেসার এ দুর্বল পারফরম্যান্সের প্রাথমিক কারণ হিসেবে তার নিস্তেজ নির্বাচনী প্রচারণাকেও দায়ী করা যায়। প্রচারণার ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন অনেকটা নিরাসক্ত এবং তার মধ্যে ভোটারদের মুগ্ধ ও আকর্ষণ করার ক্ষমতার অভাব ছিল চোখে পড়ার মতো। এক্ষেত্রে লক্ষণীয় যে, রাজনীতির ক্ষেত্রে নিয়মিতই নিজের অবস্থান পরিবর্তন করেছেন তিনি। এর আগে বারবার করে তিনি আগাম নির্বাচন না ডাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেলেন। অথচ দুই বছর না পেরোতেই আগাম নির্বাচনের ডাক দিয়ে নিজের সে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করলেন।
ফ্রিদার মতে, নির্বাচনের ক্ষেত্রে বড় ধরনের কয়েকটা প্রস্তাবের ব্যাপারে নিজের অবস্থান পুরোপুরি উল্টে নিলেও বাস্তাবে এটা কোনো কাজে দেয়নি। আর এটার অন্যতম কারণ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের দায়িত্ব নেয়ার পরপরই ‘বিশেষ সম্পর্কে’র প্রত্যাশা নিয়ে তিনি ছুটে গিয়েছিলেন ওয়াশিংটনে। লন্ডন-ওয়াশিংটন জোট আরও শক্তিশালী করার কৌশলগত প্রয়োজনীয়তা ব্রিটেনের অনেকেই উপলব্ধি করেন।
তবে দেশটির বেশিরভাগ জনগণই ট্রাম্পকে পছন্দ করেন না। নির্বাচনেই আগেই ট্রাম্পের সঙ্গে তেরেসার সম্পর্কের কারণে অসন্তোস অনেকটাই বেড়ে যায়। তবে প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে ট্রাম্প যখন আমেরিকাকে সরিয়ে নেয়ার ঘোষণা দিলেন, ট্রাম্পের ওই সিদ্ধান্তের নিন্দা জানিয়ে ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে যৌথ এক চিঠিতে স্বাক্ষর দিতে অস্বীকার করেন তেরেসা। তার এ অস্বীকৃতি ব্রিটেনে তাকে ব্যাপক সমালোচনা ও ক্ষোভের মুখে ফেলে দেয়।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন