ত্রাণ নয়, বাঁধ ও ঘর চায় দ্বীপের মানুষ
কক্সবাজারের টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের ৪০ হাজার মানুষ ত্রাণ নয় বাঁধ নির্মাণ ও তাদের ঘর মেরামত করে দেয়ার দাবি জানিয়েছেন। সরকারের পক্ষ থেকে তাদের সব দাবি পর্যায়ক্রমে পূরণের আশ্বাস দেয়া হয়েছে।
শুক্রবার দুপুর দেড়টার দিকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের শাহপরীর দ্বীপে ত্রাণ বিতরণ করতে এলে তারা উপরে হাত তুলে এ দাবি জানান। এসময় তাদের সঙ্গে একমত পোষণ করেন উখিয়া-টেকনাফের সাংসদ আব্দুর রহমান বদি।
শুক্রবার টেকনাফ শাহপরীর দ্বীপে ওবায়দুল কাদের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতারা ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’র আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত এক হাজার পরিবারের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করেন। প্রত্যেক পরিবারকে ২০ কেজি চাউল ও এক হাজার টাকা করে দেয়া হয়।
ত্রাণ নিতে আসা জুহুরা বেগম (৫০) ও নুর মোহাম্মদ (৪৫) ঢাকাটাইমসকে বলেন, গত মঙ্গলাবার ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’র আঘাতে আমাদের ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। এরপর থেকে কষ্টের দিন কাটাচ্ছি। আমরা এই ২০ কেজি চাউল নিয়ে কী করব? এগুলো কোথায় রান্না করব? আমাদের কোনো ঘরবাড়ি নেই? আমরা ত্রাণ চাই না, হারিয়ে যাওয়া ঘর ফিরে ফেতে চাই।
তারা বলেন, আমাদের দাবি ত্রাণ নয়, আমাদের ঘরবাড়ি চাই। আর এ দ্বীপবাসীর একমাত্র চাওয়া ভাঙা বেড়ি বাঁধ নির্মাণ। এছাড়া যোগাযোগব্যবস্থা উন্নত করার দাবি এই দ্বীপের মানুষের।
ত্রাণ বিতরণকালে ওবায়দুল কাদের জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে তারা এই ত্রাণ বিতরণ করতে এসেছেন। এ সময় বিএনপির সমালোচনা করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় মোরার আঘাতে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তায় আমরা উপকূলে চলে এসেছি, কিন্তু বিএনপি ও তার দল কখন আসবে? শুধু ঢাকা বসে বড় বড় কথা বলে আর ফটোসেশন করে তারা। কিন্তু শেখ হাসিনার সরকার ফটোসেশন করে না। আমরা ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে ত্রাণ দিচ্ছি।’
ওবায়দুল কাদের বলেন. ‘ঘরহারা মানুষদের আবাসন তৈরিসহ একে একে সব ক্ষতি পুষিয়ে দেয়া হবে। ঘূর্ণিঝড় কবলিত এলাকার একটি মানুষও না খেয়ে থাকবে না। যত দ্রুত সম্ভব দ্বীপের বেড়ি বাঁধ নির্মাণ করে দেয়া হবে।’
কাদের বলেন, ‘বিএনপি রোজার দিনেও বাজেট নিয়ে মিথ্যা কথা বলছে। আওয়ামী লীগ লুটপাটের বাজেট করে না, এই বাজেট উন্নয়ন ও জনকল্যাণে বাজেট।’
সাংসদ বদি বলেন, ‘বেড়ি বাঁধ না থাকায় গত পাঁচ বছর ধরে দ্বীপের ৪০ হাজার মানুষ কষ্টে রয়েছে। পাশাপশি টেকনাফ-শাহপরীর দ্বীপ যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। এতে এ দ্বীপের জনগোষ্ঠীকে নৌকা নিয়ে পারাপার করতে হচ্ছে।’ দ্বীপবাসীর একমাত্র দাবি বাঁধ নির্মাণ করে দিকে মন্ত্রীকে বিশেষ অনুরোধ জানান এই সাংসদ।
এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন দলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, সাংগঠনিক একেএম এনামুল হক শামিম, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান, জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন, সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী রানাপ্রিয় বড়–য়া, জেলা নেতা শাহ আলম (রাজা), নাজনিন সরওয়ার কাবেরী, শফিক মিয়া, টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাহিদ হোসেন ছিদ্দীক, সহকারী কমিশনার (ভূমি) তুষার আহমদ, সাবরাং ইউপি চেয়ারম্যান নুর হোসেন, সদর ইউপি চেয়ারম্যান শাহাজান মিয়া, আওয়ামী লীগ নেতা সোনা আলী ও রেজাউল করিম রেজা প্রমুখ।
এর আগে বেলা ১২টার দিকে সড়কযোগে মন্ত্রীর গাড়িবহর সাবরাং খুরের মুখ পৌঁছলে সেখান থেকে স্পিডবোট যোগে তিনি শাহপরীর দ্বীপে যান।
অন্যদিকে দলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ ও সাংসদ আব্দুর রহমান বদির নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল বিকাল সাড়ে তিনটার দিকে স্পিডবোটযোগে শাহপরীর দ্বীপ জেটি দিয়ে সেন্টমার্টিনে পৌঁছে। তারা সেখানে এক হাজার ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে এক হাজার টাকা ও ২০ কেজি করে চাউল বিতরণ করেন। এরপর তারা টেকনাফে ফিরে আসেন।
সেন্টমার্টিনের সুলতান আহমদ (৭৫) বলেন, ‘আমার একমাত্র সম্বল ঘর হারিয়ে আমি নিঃস্ব হয়ে গেছি। ২০ কেজি চাল নিয়ে কী হবে? সরকার কাছে দাবি ত্রাণ নয় হারিয়ে যাওয়া ঘরটি ফিরিরে দেয়া হোক।’
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন