থাইরয়েড হরমোনে মুখের যেসব সমস্যা হয়ে থাকে
থাইরয়েড গ্রন্থি থেকে যে হরমোন উৎপাদন হয় তাতে শরীরে বেশ কিছু পরিবর্তন দেখা দেয়। থাইরয়েড গ্রন্থি নিঃসৃত হরমোনগুলোর একটি থাইরক্সিন স্বাভাবিক গঠন ও বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজন।
হাইপারথাইরয়ডিজমে ঘুমের সমস্যা, দ্রুত হৃদস্পন্দন হয়ে থাকে। যার কারণে রোগীর মনে দুশ্চিন্তা, বিরক্তিভাব ও অস্থিরতা বিরাজ করে থাকে।
এর ফলে মুখের অভ্যন্তরে ঘা বা ক্ষত দেখা দিতে পারে। থাইরয়েড হরমোনের পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে অর্থাৎ হাইপারথাইরয়ডিজমে রক্তচাপ বৃদ্ধি পেতে পারে এবং পালপিটেসন হতে পারে।
এ বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন মুখ ও দন্তরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মো. ফারুক হোসেন।
হরমোনে দীর্ঘমেয়াদে বার্নিং মাউথ সিনড্রোম বা মুখে জ্বালাপোড়া হতে পারে। কখনও কখনও হাইপারথাইরয়ডিজমে জগ্রেনস সিনড্রোম দেখা দিয়ে থাকে, যার কারণে শুষ্ক মুখের সৃষ্টি হয়। শুষ্ক মুখের প্রভাবে দন্তক্ষয়ের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় যেহেতু লালার প্রবাহ স্বাভাবিকের চেয়ে কম থাকে।
হাইপারথাইরয়ডিজমে পেরিওডন্টাল রোগ, ম্যাক্সিলারি বা ম্যান্ডিবুলার অস্টিওপরোসিস এবং দাঁত তাড়াতাড়ি উঠে। এক্সরে করার সময় থাইরয়েড গ্রন্থিকে রক্ষা করার জন্য থাইরয়েড কলার ব্যবহার করা উচিত। থাইরয়েড গ্রন্থি রেডিয়েশনের প্রতি অত্যন্ত সংবেদনশীল।
অতিরিক্ত এক্সরে বা রেডিয়েশন থাইরয়েড গ্রন্থির জন্য একটি রিস্ক ফ্যাক্টর। হাইপারথাইরয়ডিজমের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ঘাম হতে পারে এবং গরম সহ্য করতে সমস্যা হয়। কনজেনিটাল হাইপোথাইরয়ডিজম ক্রেটিনিজম নামে পরিচিত।
এ কারণে ঠোঁট পুরু, ম্যাক্রোগ্লসিয়া বা জিহ্বা বড় হওয়া, ম্যালঅকলুশন অর্থাৎ ওপরের এবং নিচের চোয়ালের কামড় দিলে স্বাভাবিক রিলেশন ব্যাহত হওয়া এবং দেরিতে দাঁত উঠে থাকে। পেরিওডন্টাল অবস্থা ভালো থাকে না।
কোনো ক্ষতস্থান ভালো হতে দেরি হয়। লম্বা সময় ধরে হাইপোথাইরয়ডিজমের প্রতিক্রিয়া স্বরূপ ক্রেনিওফেসিলয়াল গ্রোথ এবং ডেন্টাল ডেভেলপমেন্টের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। ডেন্টাল ডেভেলপমেন্টের ক্ষেত্রে ম্যান্ডিবুলার বা নিচের চোয়ালের দ্বিতীয় মোলার বা সাত নম্বর দাঁতের ইমপ্যাকশন বা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হতে পারে।
হাইপোথাইরয়ডিজমের রোগীদের ক্ষত বা ঘা দেরিতে শুকায়, কারণ মেটাবলিজমের কার্যকারিতা কমে যায়। দেরিতে ঘা বা ক্ষত সারার জন্য সংক্রমণের ঝুঁকিও বেড়ে যায়। তাই দাঁত তোলা বা সার্জারির সময় সতর্কতার সঙ্গে সবকিছু করতে হবে। হাইপোথাইরয়ডিজমের কারণে হার্ট বিট ধীরে ধীরে হতে পারে।
এছাড়া রোগীর কনস্টিপেসন দেখা দিতে পারে। কনস্টিপেসন হলে মুখে আলসার হতে পারে। হাইপোথাইরয়ডিজমের ক্ষেত্রে রোগী প্রায়ই ঠাণ্ডা অনুভব করার কথা বলে থাকেন।
রোগীর ওজন বৃদ্ধি পেতে পারে। হাইপোথাইরয়ডিজম এবং হাইপারথাইরয়ডিজম উভয় ক্ষেত্রেই রোগীর চুল পড়ে যেতে পারে। হাইপোথাইরয়ডিজমের কারণে বিষণ্ণতা, ক্লান্তিভাব এবং অলসতার অনুভূতির মতো লক্ষণসমূহ সৃষ্টি হতে পারে। বিষণ্ণতার কারণে মুখের আলসারসহ নানাবিধ রোগ সৃষ্টি হতে পারে।
মুখের জ্বালাপোড়ার ক্ষেত্রে কোনো কারণ খুঁজে পাওয়া না গেলে তখন অবশ্যই একজন রোগীর সার্বিক শারীরিক ইতিহাস সম্পর্কে জানতে হবে।
থাইরয়েড গ্রন্থির কোনো কিছু সন্দেহজনক হলে অবশ্যই রক্ত পরীক্ষা করে দেখতে হবে থাইরয়েড হরমোনের মাত্রা জানার জন্য। অতএব মুখের যে কোনো রোগের চিকিৎসায় রোগ নির্ণয় করে চিকিৎসা প্রদান করতে হবে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন