থানায় গরম পানি ঢেলে নির্যাতন, পরে গুলি
নরসিংদীর শিবপুরে অটোরিকশা চুরির অভিযোগে আটক করে শরীরে গরম পানি ঢেলে ও পায়ে গুলি করার অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে। তবে স্বজনদের অভিযোগ অস্বীকার করে বাহিনীটি বলছে, ডাকাতির প্রস্তুতিকালে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ আহত হয়েছেন ওই ব্যক্তি।
আহত ওই ব্যক্তির নাম আতিকুর রহমান ভূঁইয়া। তিনি শিবপুর উপজেলার বাঘাব ইউনিয়নের লামপুর গ্রামের আবদুল হান্নান ভূঁইয়ার ছেলে।
গত রবিবার (১১ নভেম্বর) আতিককে আটকের পর ওইদিনই শরীরে গরম পানি ঢেলে নির্যাতন ও পরে বুধবার (১৪ নভেম্বর) রাতে নির্জনস্থানে নিয়ে ডান পায়ে গুলি করার অভিযোগ করেছে তার পরিবার।
স্বজনদের অভিযোগ, চলতি মাসের শুরুর দিকে লামপুর গ্রামের সানাউল্লাহ নামের একজনের একটি অটোরিকশা চুরি হয়। গত রবিবার বিকাল সাড়ে তিনটার দিকে শিবপুর থানার উপপরিদর্শক মনিরের নেতৃত্বে চার জন পুলিশ লামপুর এলাকায় গিয়ে আতিককে আটক করে। পরে আতিকের বাবা পুলিশকে আট হাজার টাকা দিলে তাকে ছেড়েও দেয়া হয়। কিন্তু১০ মিনিট পর টাকা ফেরত দিয়ে আবার আতিককে ধরে নেয় পুলিশ।
সন্ধ্যার পর আতিকের বাবা থানায় গিয়ে পুলিশকে এক হাজার টাকা দিয়ে আসেন নির্যাতন না করার জন্য। কিন্তু পরদিন সকালে থানায় গিয়ে আতিকের শরীর গরম পানিতে ঝলসানো দেখতে পান তিনি। সেদিন ওষুধও কিনে দিয়ে আসেন।
এসময় আতিকের বাবা পুলিশের কাছে জানতে চান, তার সন্তানকে কখন আদালতে পাঠানো হবে। তখন পুলিশ জানায়, সুস্থ না হলে তাকে আদালতে নেয়া হবে না। একইভাবে মঙ্গলবার ও বুধবার থানায় গিয়ে তাঁর খোঁজ নেন আতিকের বাবা আবদুল হান্নান ভূঁইয়া।
বৃহস্পতিবার সকালে বাবাকে ফোন করে জানানো হয় আতিক পায়ে চোট পেয়েছেন, হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
আতিকের বাবা বলেন, ‘পুলিশের ফোন পায়া হাসপাতালে গেয়া দেহি তাঁকে গুলি করছে। পুলায় আমারে কইছে, রাইতে তারে চোখ বাইন্ধা নিয়া গুলি করছে।’
বাঘাব ইউনিয়নের চেয়ারম্যান তরুণ মৃধা বলেন, ‘আতিককে গত রবিবার আটক করার পর তাঁর বাবার সঙ্গে থানায় গিয়ে সুপারিশ করেছিলাম। কিন্তু পুলিশ জানায় গাড়ি চুরির অভিযোগে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, ছাড়া যাবে না। তাকে কোর্টে চালান করা হবে। পরে আর খোঁজ নেইনি।’
তবে পুলিশের দাবি পুরো উল্টো। তারা বলছে, গত বুধবার রাতে ডাকাতির প্রস্তুতির খবর পেয়ে উপজেলার মুরগিবেড় এলাকায় অভিযান চালায় একটি দল। সেখানে পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে গুলি চালায় ডাকাত সদস্যরা। কিছুক্ষণ পর পুলিশ রুবেল নামের একজনকে চারটি গুলি এবং আতিকুর রহমান নামের একজনকে একটি পিস্তলসহ গুলিবিদ্ধ অবস্থায় আটক করা হয়।
ওইসময় পুলিশের পক্ষ থেকে কোন গুলি চালানো হয়নি বলে দাবি করেন শিবপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মমিনুল ইসলাম।
আহতের পরিবারের অভিযোগ অস্বীকার করে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘আতিকের বিরুদ্ধে দুটি মামলা রয়েছে। একটি গত মাসের ১০ তারিখের ডাকাতির অভিযোগে এবং অপরটি চলতি মাসের ৭ তারিখে ডাকাতির প্রস্তুতির অভিযোগে।’
‘আতিকের পরিবারের লোকজনের অভিযোগ সম্পূর্ন মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। তাকে আমরা আগে আটক করিনি।’
এই ঘটনায় এসআই মনির বৃহস্পতিবার সকালে দুই জনের বিরুদ্ধে ডাকাতির প্রস্তুতি ও অস্ত্র আইনে দুটি মামলা করেছে।
নরসিংদী জেলা হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা এমএন মিজানুর রহমান বলেন, ‘গত বুধবার দিবাগত রাত ১২ টা ৪০ মিনিটে পুলিশ হেফাজতে আতিক নামের একজনকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। তাঁর ডান পায়ের হাঁটুর নিচে গুলির চিহ্ন পাওয়া গেছে।’
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন