দশ জেলায় বজ্রপাতে ১৯ জনের মৃত্যু
দেশের দশ জেলায় পৃথক পৃথক বজ্রপাতের ঘটনায় ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে হবিগঞ্জে ৬ জন, সুনামগঞ্জে ২ জন, রাজশাহীতে ২ জন, নীলফামারীতে ২ জন, কিশোরগঞ্জে ২ জন, মানিকগঞ্জে একজন, গাইবান্ধায় একজন, সিরাজগঞ্জে একজন, জামালপুরে একজন এবং ময়মনসিংহে একজন। এছাড়া আহত হয়েছেন অন্তত ১৭ জন। হতাহতদের মধ্যে বেশির ভাগ কৃষক। বুধবার (৯ মে) সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত বজ্রপাতে এ ঘটনা ঘটে। বিস্তারিত আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে-
হবিগঞ্জ: জেলার বানিয়াচং, নবীগঞ্জ এবং লাখাই উপজেলায় বজ্রপাতে ছয় কৃষক নিহত হয়েছেন। বুধবার (৯ মে) দুপুরে তারা হাওরে ধান কাটতে গিয়ে বজ্রপাতের মারা যান। এতে আহত হয়েছেন আরও ৬ জন।
জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, বুধবার দুপুরে হঠাৎ জেলার বিভিন্ন স্থানে তুমুল কালবৈশাখী ঝড় শুরু হয়। মাত্র আধা ঘণ্টা স্থায়ী হয় ঝড়। এ সময়ে ঝড়ে হাওর ধান কাটা অবস্থায় ছয়জন কৃষক বজ্রপাতে মারা যান।
বানিয়াচংয়ের মাকালকান্দি হাওরে দাইপুর গ্রামের বসন্ত দাশের ছেলে স্বপন দাশু (৩৫)। একই উপজেলার নূরপুর হাওরে সিরাজগঞ্জ জেলার দত্তকান্দি এলাকার বাসিন্দা জয়নাল উদ্দিন (৬০) মারা যান। এসময় আহত হন আরো ৬ জন।
নবীগঞ্জ উপজেলার বৈলাকীপুর গ্রামের হাওরে নারায়ন পাল (৪০) ও আমড়াখাই হাওরে হাবিব উল্লাহর ছেলে আবু তালিব (২৫) বজ্রপাতে মারা যান।
লাখাই উপজেলার তেঘরিয়া হাওরে সফি মিয়া (৫৫) ও মাধবপুর উপজেলার পিয়াইম হাওরে রাম কুমার সরকারের ছেলে জোহর লাল সরকার (১৮) বজ্রপাতে মারা যান।
সুনামগঞ্জ: জেলার ধর্মপাশা ও শাল্লা উপজেলায় বজ্রপাতে ২ জনের মৃত্যু হয়েছে। বুধবার (৯ মে) দুপুরে এ ঘটনা ঘটে।
মৃতরা হলো- ধর্মপাশা উপজেলার সদর ইউনিয়নের দুর্বাকান্দা গ্রামের আব্দুর রহিমের ছেলে জুয়েল আহমদ (১৬) ও শাল্লা উপজেলার আটগাঁও ইউনিয়নের কাশিপুর গ্রামের ইসহাক আলীর ছেলে আলমগীর মিয়া (২২)।
ধর্মপাশা সদর ইউপির ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য নূর ইসলাম জানান, দুপুরে জুয়েল মিয়া বাড়ির পাশে কাইলানী হাওরে ধান কাটতে যায়। ধান কাটার সময়ই বজ্রপাতে আহত হলে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে ধরমপাশা উপজেলা স্বাস্থ কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
শাল্লা থানার ওসি দোলোয়ার হোসেন জানান, আলমগীর মিয়া ট্রলি চালিয়ে ছায়ার হাওরে যাচ্ছিলেন কাটা ধান বাড়িতে আনতে। পথে বজ্রপাতে ঘটনাস্থলে তার মৃত্যু হয়।
রাজশাহী: জেলার তানোরে বজ্রপাতে ২ জন নিহত হয়েছেন। এ সময় আহত হয়েছেন আরো ২ জন।
বুধবার (৯ মে) সকালে উপজেলার দুবাইল ও বাতাসপুর গ্রামে এ বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলো- বাতাসপুর গ্রামের কৃষক আনসার আলী (৩০) এবং দুবইল পূর্বপাড়ার কিশোর সোহাগ আলী (১৬)।
উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির উপ-সহকারী প্রকৌশলী এনামুল হক জানান, সকালে বৃষ্টির সময় সময় মাঠে ধান কাটছিলেন আনসার আলী। এ সময় বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। আহত হন একই গ্রামের আনন্দ সাহা ও লিটল সাহা।
আর মাছে গভীর নলকূপে কাজ করার সময় বজ্রপাতে মারা যান সোহাগ আলী।
তানোর উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা শওকাত আলী বলেন, উপজেলার দুই ইউনিয়নের বজ্রপাতে দুইজন মারা যাওয়ার খবর পেয়ে উপজেলা সহকারী ভূমি কর্মকর্তাকে ঘটনাস্থল পাঠানো হয়েছে।
নিহত প্রত্যেক পরিবারের জন্য ২০ হাজার টাকা ও ৩০ কেজি করে চাল অনুদান দেয়া হয়েছে।
নীলফামারী: জেলার জলঢাকা উপজেলায় পৃথক স্থানে বজ্রপাতে ২ জনের মৃত্যু হয়েছে। বুধবার (৯ মে) সকাল ৮ টার দিকে ঝড়ো হাওয়া ও শিলাবৃষ্টির সঙ্গে ওই বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে। এছাড়া ডিমলা উপজেলায় বজ্রপাতে পাঁচটি গাভীর মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়।
নিহতেরা হলেন- উপজেলার কাঁঠালী ইউনিয়নের উত্তর দেশীবাই গ্রামের মৃত সফর উদ্দিনের ছেলে কৃষক নূর আমিন (৪৫) এবং বালাগ্রাম ইউনিয়নের শালন গ্রামের মৃত ইসলাম হোসেনের স্ত্রী আসমা বেগম (৫০)।
কাঁঠালী ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেন তুহিন জানান, বুধবার সকালে ঝড়ো হাওয়া ও বৃষ্টি শুরু হলে উঠানে থাকা ধান বৃষ্টি থেকে রক্ষার জন্য তা পলিথিনে ঢাকাতে যান কৃষক নূর আমিন। ওই সময় বজ্রপাত হলে ঘটনাস্থলে তার মৃত্যু হয়।
শালনগ্রামের বাসিন্দা মীর মোনায়েম হোসেন (৪০) বলেন, সকাল আটটার দিকে ঝড়ো হাওয়া ও শিলাবৃষ্টি হচ্ছিল। এ সময় শালন গ্রামের আসমা বেগম তার বাড়ির বারান্দায় দাঁড়িয়ে ছিল। এ সময় বজ্রপাতের ঘটনায় ঘটনাস্থলে নিহত হন তিনি। আসমা বেগম ভূমিহীন এবং দিনমজুরী করে জীবিকা নির্বাহ করতেন।
জলঢাকা থানার ওসি মো. মোস্তাফিজার রহমান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
অপরদিকে একই সময়ে ডিমলা উপজেলার পুর্বছাতনাই ইউনিয়নের ঝাড়শিংহেরশ্বর গ্রামে বজ্রপাতের ঘটনায় পাঁচটি গাভীর মৃত্যু হয়েছে।
পুর্ব ছাতনাই ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান প্রভাষক আব্দুল লতিফ খান বলেন, বৃষ্টির সময় গ্রামের সোনা উল্লার ৩টি এবং ছোট ভাই বাদশা মিয়ার ২টি গাভী রাস্তার ওপর একটি চালার মধ্যে বাধা ছিল। এ সময় বজ্রপাতের ঘটনায় ওই পাঁচটি গাভী ঘটনাস্থলে মারা যায়।
কিশোরগঞ্জ: জেলার নিকলী ও পাকুন্দিয়া উপজেলায় বজ্রপাতে ২ জনের মৃত্যু হয়েছে।
এরা হলেন- নিকলী উপজেলার ছাতিরচর ইউনিয়নের পরিষদপাড়া গ্রামের শাহ জালাল (২৪) ও পাকুন্দিয়া উপজেলার সুখিয়া ইউনিয়ন পরিষদের আশুতিয়া গ্রামে দিপালী রানী বর্মণ (৩৫)
ছাতিরচর ইউপি চেয়ারম্যান মো. জামাল উদ্দিন জানান, শাহ জালাল হাওরের জমি থেকে ইঞ্জিন চালিত ট্রলি দিয়ে ধান আনার সময় বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই মারা যায়।
অপরদিকে সুখিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মো. আব্দুল হামিদ জানান, বাড়ির উঠানে কাজ করার সময় বজ্রপাতে গুরুতর আহত হন দিপালী। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে কিশোরগঞ্জ সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
মানিকগঞ্জ: জেলার দৌলতপুর উপজেলায় বজ্রপাতে ইয়াকুব আলী (৫০) নামে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। বুধবার (৯ মে) সকালে উপজেলার বাচামারা ইউনিয়নের বাচামারা গ্রামে বজ্রপাতের ঘটনায় মারা যান গ্রামের
দৌলতপুর থানার ওসি সুনীল কুমার কর্মকার জানান, সকালে ইয়াকুব আলী বাড়ির কাছে ধানক্ষেতে আগাছা পরিষ্কার করছিলেন। এ সময় গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি মধ্যে বজ্রপাত হলে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।
সিরাজগঞ্জ: জেলার কাজিপুর বজ্রপাতে সমতুল্লাহ (৫০) নামে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় শাকিল মিয়া (১৫) নামে এক স্কুল ছাত্র আহত হয়েছে।
বুধবার (৯ মে) দুপুর ১২টার দিকে উপজেলার নাটুয়ারপাড়া ইউনিয়নের পানাগাড়ি চরে এ ঘটনা ঘটে। সমতুল্লাহ ওই ইউনিয়নের পানাগাড়ি গ্রামের বাসিন্দা। আহত শাকিল মিয়া (১৫) খাস রাজবাড়ি গ্রামের হাবিবুর রহমানের ছেলে।
কাজিপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. শফিকুল ইসলাম জানান, পানাগাড়ি চরে কৃষক সমতুল্লাহ নিজের ক্ষেতে কাজ করছিলেন। এ সময় বৃষ্টির সঙ্গে বজ্রপাত হলে ঘটনাস্থলেই সমতুল্লাহ নিহত হন।
অপরদিকে বেলা ১১টার দিকে খাসরাজবাড়ি স্কুলে যাবার পথে বজ্রপাতে স্কুলছাত্র শাকিল ঝলসে যায়। তাকে উদ্ধার করে কাজিপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
গাইবান্ধা: জেলার ফুলছড়ি উপজেলায় বজ্রপাতে মহর আলী (৩৫) নামে এক কৃষি শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে।
বুধবার (৯ মে) সকালে উদাখালি ইউনিয়নের পশ্চিম ছালুয়া গ্রামের চরে এ ঘটনা ঘটে।
মহর আলী উপজেলার উড়িয়া ইউনিয়নের চর কাবিলপুর গ্রামের আব্দুর রশিদের ছেলে।
উদাখালি ইউপি চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন বলেন, বুধবার ১২ জন কৃষি শ্রমিক ওই চরে আব্দুর রউফ মিয়ার জমির বোরো ধান কাটতে যায়। সাড়ে ৯টার দিকে বৃষ্টি শুরু হলে তারা নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে কাজ ফেলে কাছের এক বাড়িতে আশ্রয় নেয়। কিন্তু মহর আলী দৌড়াতে গিয়ে উল্টে পড়ে যায় এবং সে সময় বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।
জামালপুর: জেলার দেওয়ানগঞ্জ উপজেলায় বজ্রপাতে মো. হাবিবুর রহমান (৪৭) নামে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে।
বুধবার (৯ মে) উপজেলার চর আমখাওয়া ইউনিয়নের মৌলভীর চরে এ ঘটনা ঘটে। হাবিবুর রহমান মৌলভীর চরের মৃত আব্দুল মজিদের ছেলে।
ওই ইউপির ৮ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার জয়নাল আবেদীন বলেন, হাবিবুর কৃষিশ্রমিকদের সঙ্গে বাড়ির কাছেই ধান কাটতে যান। হঠাৎ বজ্রবৃষ্টি শুরু হলে তিনি ধানকাটা বাদ দিয়ে বাড়ির দিকে রওনা হন। পথে বজ্রপাত হলে তিনি সংজ্ঞা হারান। স্থানীয়রা তাকে প্রথমে সানন্দবাড়ি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে এবং পরে পার্শ্ববর্তী কুড়িগ্রাম জেলার রাজিবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
ময়মনসিংহ: জেলার সদর উপজেলায় বজ্রপাতে আলাল উদ্দিন (৬০) নামে একজন নিহত হয়েছে। এ সময় মুক্তাগাছায় ৮জন আহত হয়েছে।
বুধবার (৯ মে) দুপুরে উপজেলার চর নীলক্ষীয়ায় বজ্রপাতে মারা যান ।
ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি মাহমুদুল ইসলাম বলেন, বাড়ি থেকে বের হয়ে আলাল উদ্দিন গরু আনতে যাচ্ছিলেন। এসময় বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।
মুক্তাগাছা থানার ওসি আলী আহম্মেদ মোল্লা জানান, উপজেলার নতুন বাজার গরুর হাটে বজ্রপাতে আটন আহত হয়। আহতদেরকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন