দাম কমছে যেসব পণ্যের
সকল জল্পনা-কল্পনা শেষে নতুন মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন, ২০১২ আগামী ১ জুলাই থেকে বাস্তবায়ন হচ্ছে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে তিনি এ ঘোষণা দেন। আমদানি ও স্থানীয় পর্যায়ে উৎপাদিত প্রায় তিন হাজারের অধিক পণ্য ও সেবা ভ্যাটের আওতামুক্ত রাখা হয়েছে। এতে দাম কমবে ওইসব পণ্যের।
এছাড়াও অর্থমন্ত্রী ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বেশ কিছু পণ্যের ওপর শুল্ক, মূল্য সংযোজন কর (মূসক) ও সম্পূরক শুল্ক কমানো বা প্রত্যাহারের প্রস্তাব করেছেন। অর্থমন্ত্রীর এ সব প্রস্তাব অনুমোদন পেলেই ওই সব পণ্যের দাম কমবে। বাজেটে যেসব পণ্যের দাম কমতে পারে সেগুলো হলো—
জীবন্ত ঘোড়া, গাধা, খচ্চর ও ঘোটক। জীবন্ত গবাদি পশুসমূহ, জীবন্ত ভেড়া এবং ছাগল; জীবন্ত পশু-পাখিসমূহ। আড়াই কেজি পর্যন্ত গবাদি পশুর মাংস, শুকরের মাংস, ভেড়া বা ছাগলের মাংস, ঘোড়া, গাধা, খচ্চরের মাংস, হাঁস মুরগির মাংস (টিনজাত ব্যতীত)। জীবন্ত মাছ, আড়াই কেজি পর্যন্ত তাজা, টিনজাত অথবা হিমায়িত মাছ। আড়াই কেজি পর্যন্ত মোড়ক বা টিনজাত ব্যতীত কাঁটা ছাড়ানো মাছ ও মাছের মাংস, শুকনা, লবণাক্ত মাছ। খোলসযুক্ত বা খোলস ছাড়ানো শামুক জাতীয় প্রাণী।
প্যাকেটকৃত তরল দুধ, পনির, মাঠা; পাখির ডিম, মধু, আলু, টমেটো, পেঁয়াজ, শ্যালট, রসুন, লিকস এবং অন্যান্য এ জাতীয় শাকসবজি; বাঁধাকপি, ফুলকপি, মাথাযুক্ত ব্রকলি, কোহিলাভি, কেইল; লেটুস, চিকোরি, গাজর, শালগম, সালাদ বিটমুল, স্যালসিফাই, সেলেরিয়াক, মুলা, শিম্বারকার শাকসবজি, সকল ধরণের শাকসবজি, নারিকেল, কাজু বাদাম, সুপারিসহ ৫৪৯টি পণ্য।
সকল প্রকার কলা, খেজুর, ডুমুর, আনারস, পেয়ারা, আম, গাব, লেবুজাত ফল, আঙ্গুর, তরমুজ, আপেল, নাশপাতিসহ যেকোন ফল; গোল মরিচ, ভ্যানিলা, দারুচিনি, লবঙ্গ, জায়ফল, জৈত্রী, এলাচী, মৌরী, ফেনেল, ধনিয়া, জিরা, আদা, জাফনার, হলুদ, তেজপাতা, কারি, মসলা, গম, মেসলিন; রাই, বার্লি, জই, ভুট্টা, ধান, সকল প্রকার চাউল, মুড়ি, সোরঘাম শস্য, বাজরা, ক্যানারাই বীজ।
ময়দা, আটা, চাল, গম, ভুট্টার তৈরি সুজি, সয়াবিন। চীনা বাদাম, তিসি, স্বর্ষপ, সূর্যমুখী ফুলের বীজ, অন্যান্য তেল, লেকোস্ট সীম, সামুদ্রিক আগাছা এবং অন্যান্য সমুদ্র শৈবাল, আখ, চালের কুড়ার তেল, চিনি ও আঁখের গুড়, চোলাইন, সব ধরণের লবন ইত্যাদি। এর ফলে সাধারণ মানুষের জীবনকে নতুন মূসক কোন ভাবেই প্রভাবিত করবে না।
দেশের অভ্যন্তরে সকল অস্থায়ী হোটেল, রেস্তোঁরায় খাদ্য দ্রব্য সরবরাহে মূসক অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে। সাধারণ মানুষ যেসব হোটেল, রেস্তোঁরায় খাওয়া দাওয়া করে তাতেও মূসক দিতে হবে না। ফলে এসব হোটেলে খেলে খরচ বাড়বে না।
জীবন রক্ষাকারী ওষুধ ও চিকিৎসা উপকরণের মধ্যে রয়েছে- Ciplatin BP, Pxaliplatin BP, Carboplatin BP, 5-Fluorouracil BP, Methotrexate BP, Capecitabine USP, Temozolomide INN, Anastrozole USP, Erlotinib HCI INN, Gemcitabine HCI USP, Iphosphamide BP, Cyclophosphamide BP, Insulin and its salts, Desogestrel ethinyloestradiol and lynestrenal, Etoposide BP, Vincristine Sulfate USP, Doxorubicin HCL USP, Paclitex USP, Docetaxel USP, Sineprevir sodium, Lepipasvir, Sofobuvir, Ombitasvir, Partiaprevir, Ritonavir, Dasabuvir.
প্রোভিটামিনস ও ভিটামিন, সকল প্রকার জন্ম নিরোধক, ভ্যাকসিন ফর হিউম্যান মেডিসিন, লিভার সিরোসিস, হেপাটাইটিস সি নিরাময়কারী, হোমিওপ্যাথিক, আয়ুবের্দিক, ইউনানী ও ভেষজ ওষুধ সামগ্রী, কিডনী ডায়ালাইসিস, ক্যান্সার নিরোধক ওষুধ, ম্যালেরিয়া নিরোধক ও কুষ্ঠরোধ নিরোধক ওষুধ, থেলাসেমিয়া, প্রাথমিক চিকিৎসার জিনিস। ২০-৩০ ধরণের মেডিকেল ইক্যুপমেন্ট, হাসপাতাল শয্যা।
দেশের মধ্যে (সরবরাহ) অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যানবাহনের মাধ্যমে পরিবহন সেবা, ভাড়াকৃত পরিবহন ছাড়া ট্যাক্সি, বাস, মিনিবাস, লঞ্চ, স্টিমার, ফেরির মাধ্যমে পরিবহন সেবা। এয়ারলাইন্স (চার্টার্ড বিমান ও হেলিকপ্টার ভাড়া প্রদানকারী সংস্থা ব্যতীত), খাদ্য শস্য পরিবহনকারী পরিবহন সেবা।
সমাজকল্যাণমূলক কার্যক্রমকে মূসকের আওতার বাইরে রাখা হয়েছে। যেমন জনস্বাস্থ্য ও চিকিৎসা বা স্বাস্থ্যসেবা, ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল ব্যতীত সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সকল প্রশিক্ষণ (আগের আইনে শুধু সরকারি প্রশিক্ষণ মূসক অব্যাহতি ছিল), শিশু পালন কার্যক্রম, বয়স্ক, অক্ষম, দরিদ্র বা অক্ষম লোকদের আবাসিক সেবা (আগের আইনে অব্যাহতি ছিল না)। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা কার্যক্রমের জন্য পাঠ্যপুস্তক সরবরাহ কার্যক্রমে (আগের আইনে ৫% ভ্যাট ছিল)।
কৃষি কাজে ব্যবহৃত সকল উপকরণ যেমন বীজ, সকল প্রকার সেচ সেবা, বীজ সংরক্ষণ সেবা, মৎস্য, জলজপ্রাণী ও জলজ সম্পদ আহরণ ও সংরক্ষণ সংক্রান্ত সেবা, সকল প্রকার সার, কীটনাশক, যন্ত্রপাতি ইত্যাদিতে মূসক অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে। ডেইরি, ফাউন্ড্রি, পাটশিল্পের কাজে ব্যবহৃত সকল যন্ত্রপাতিতে মূসক অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।
খালি জমি বিক্রয়, হাইটেক পার্ক ও অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানে পণ্য উৎপাদন পর্যায়ে মূসক অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। সরকারের ফাস্ট ট্রেক তালিকাভূক্ত সকল প্রকল্পে সরবরাহ, নির্মাণ, ইন্টারনেট ইত্যাদি সেবাকে মূসক অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।
পিপিপি এর আওতাভুক্ত সকল প্রকল্প, বিদ্যুৎ উৎপাদনে কিছু প্রকল্পে মূসক অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। সকল প্রকার ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড, রেডিও ও টেলিভিশনে সম্প্রচার, শিল্পকর্ম, সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড, অপেশাদারী খেলাধুলা, ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, লাইব্রেরি, সকল প্রকার জাদুঘর, আর্টগ্যালারী, চিড়িয়াখানা, বোটানিক্যাল গার্ডেনে প্রবেশ মূল্য, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজনকারী প্রতিষ্ঠান, শ্যুটিং ক্লাব, সকল প্রকার সামাজিক সাংস্কৃতিক ও খেলাধুলা, কৃষি পণ্য, উদ্যান বা পশু-পাখির মেলায় প্রবেশ মূল্য, ব্যাংকিং ও বীমা খাতের কমিশন ব্যতীত সকল বিষয় (ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে আমানত, সঞ্চয়), জীবন বীমা ও অগ্নি বীমা, স্টক মার্কেট ও তার সকল কাজ, কম্পিউটার ও কম্পিউটার যন্ত্রাংশে মূসক অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।
দেশে উৎপাদিত এলপিজি সিলিন্ডার, ফ্রিজ, টিভি, এসি ও মোটরসাইকেলে ২০১৯ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত অব্যাহতি দেয়া আছে, তা বলবৎ থাকবে। দেশিয় সফটওয়্যার উৎপাদন ও সরবরাহে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন