দারিদ্র্য বিমোচনে সঠিক পথেই চলছে বাংলাদেশ
দারিদ্র্য বিমোচনে সঠিক পথেই চলছে বাংলাদেশ। আর এভাবে চললে লক্ষ্যমাত্রার আগেই দারিদ্র্য দূরীকরণ সম্ভব বলে মনে করছে পরিকল্পনা কমিশন। এই দাবির সাথে একমত বিশ্বব্যাংকসহ বিভিন্ন গবেষণা সংস্থা। তবে দারিদ্র্যের দুষ্টচক্র থেকে বেরিয়ে আসার পথে শক্তিশালী কর্মসংস্থানের অভাব আর বড় ধরনের আয় বৈষম্যকে বাধা হিসেবে দেখছেন তারা। সেই সঙ্গে আঞ্চলিক দারিদ্র্য দূরীকরণে বিশেষ নজর দেয়ার পরামর্শ তাদের।
লালমনিরহাটের রফিকুল ইসলাম বেশ কয়েক বছর ধরেই তার বসবাস ঢাকায়। ইট ভেঙেই গড়ছেন তার ৫ সদস্যের সংসার। রফিকুল বলেন, ‘সকাল ১১টায় আসি এবং রাত আটটায় যায়। দৈনিক ৪-৫’শ টাকা পায়। আমার ছেলেও এই পেশায় রয়েছে।’
ঢাকার আরেক বাসিন্দা নেত্রকোনার আবু বকর সিদ্দিক। ৬ বছর বয়স থেকেই রিক্সা মেরামতের কাজ করেন রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায়। আয়-ব্যয়ের হিসাবে আজ অবধি মেলেনি তার অভাব থেকে মুক্তি। আবু বকর বলেন, ‘সংসারে লোক ৬ জন। আমি তিন’শ টাকা আয় করি। যেদিন কাজে যায় পয়সা আছে। আর কাজে না গেলে পয়সা নেই। দুই রুমের ভাড়া দিয়ে কিছুই থাকে না।’
প্রাপ্ত হিসাবে তাদের দুই পরিবারের মোট ১১ জনের প্রতিদিনের মাথাপিছু আয় ১ দশমিক ৯ ডলার অর্থাৎ ১৬০ টাকার কম। এসডিজি অর্জনের পথে তাদের অবস্থান তাই দারিদ্রসীমার নিচে।
পরিসংখ্যান বলছে, দেশে তাদের মতো হত দরিদ্র মানুষ রয়েছে প্রায় ২ কোটি আর দারিদ্রসীমার নিচে বাস করেন সাড়ে ৩ কোটি। কমে আসছে দারিদ্র বিমোচনের হার। তবে সরকারের নেয়া নানা প্রকল্পে এসডিজির প্রথম লক্ষ্যমাত্রা দারিদ্র দূরীকরণে খুব একটা বেগ পেতে হবে না বলে দাবি পরিকল্পনা কমিশনের।
পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য ড. শামসুল আলম বলেন, ‘ক্রমান্বয়ে দারিদ্যের হার হয়ত কমে যাবে। ১.০২ শতাংশ হারে বছরে কমছে। আমাদের হাতে ২০৩০ সাল পর্যন্ত অর্থাৎ ১২ বছর রয়েছে। ১ শতাংশ হারে কমলেও আমাদের ১১ বছরের মধ্যে হতদারিদ্র্য থাকার কথা নয়। সেটা হবে।’
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, দারিদ্র বিমোচনের পর দারিদ্রের ঝুঁকিমুক্ত করাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। এজন্য সৃষ্টি করতে হবে শক্তিশালী কর্মসংস্থানের সুযোগ; যেন হঠাৎ করেই বন্ধ না হয় আয়ের পথ।
বিআইডিএস’র জ্যেষ্ঠ গবেষক ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, ‘আমাদের হয়তো দারিদ্র্যের হার কিছু ওপরে উঠবে। কিন্তু এই একটু যথেষ্ঠ নয়। এ জন্য দারিদ্র্য সীমার ওপরে উঠার পরে যাতে আরো দ্রুত এগিয়ে যেতে পারি সেই জায়গায় দৃষ্টি দিতে হবে।’
বিশ্ব ব্যাংকের ঢাকা অফিসের প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, ‘প্রবৃদ্ধির গতি অনেক বেড়ে গেছে কিন্তু সেই সঙ্গে কর্মসংস্থান বাড়ে নি। শ্রম আয় খুব একটি উল্লেখ্যযোগ্য নয়। দেখা যাচ্ছে প্রথম ১০ শতাংশ আয়ের বৃদ্ধি অনেক বেশি হয়েছে।’
ক্ষুধা আর দারিদ্র দূর করতে না পারলে হয়তো অধরাই থেকে যাবে শিক্ষা-স্বাস্থ্য-আর দক্ষতা উন্নয়নের মাধ্যমে টেকসই অর্থনীতির উন্নত বাংলাদেশ। তাই, শুধু দারিদ্র বিমোচনই নয়, টেকসই করতে হবে এই বিমোচন যেন আর কখনই দারিদ্রের ঝুঁকিতে না পরে দেশের কোন অঞ্চলের মানুষ।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন