দিনমজুর থেকে শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী জোনাব আলী
মাত্র ৫ বছরে দিনমজুর থেকে শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী বনে যাওয়া জোনাব আলী চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার উথলী গ্রামের সন্যাসীতলা মাঠে গত ২১ মে রাতে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন। জোনাব আলীর বিরুদ্ধে জীবননগর থানায় ৯টি মাদক মামলা ছিল বলে জানিয়েছে পুলিশ।
পুলিশের দেয়া তথ্য মতে, জোনাব আলীর বিরুদ্ধে প্রথম মামলাটি হয় ২০১৪ সালের ১৬ এপ্রিল। এরপর একই বছরের ১৪ নভেম্বর, ২০১৫ সালের ৭ এপ্রিল, ৮ জুন, ৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সালের ১ মার্চ, ২৮ জুলাই, ২২ আগস্ট ও সর্বশেষ মামলাটি হয় ২০১৬ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পুলিশ সুপারের কাছে পাঠানো জেলার মাদক ব্যবসায়ীদের নামের তালিকায় জোনাব আলীর নাম না থাকলেও জেলার বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সমন্বয়ে পুলিশ সুপার যে ১২১ জন মাদক ব্যবসায়ীর তালিকা প্রস্তুত করেন ওই তালিকায় জোনাব আলীর নাম রয়েছে ৭ নম্বরে, তার বাবা জামাত আলীর নাম ১০৪ নম্বর ও রহমান আলীর নাম রয়েছে ১০৩ নম্বরে। জোনাব আলী বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ার আগে অন্তত ৫ বার গ্রেফতার হয়ে জেলহাজতে যান।
জোনাব আলীর নিজগ্রাম উথলীর একাধিক বাসিন্দার সঙ্গে (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুন) কথা বলে জানা যায়, জোনাব আলী ১০ বছর আগেও দিনমজুরের কাজ করতেন। ২০০৯ সালের জুলাইতে পার্শ্ববর্তী উপজেলার আকুন্দবাড়ীয়া আবাসন প্রকল্পে বসবাসকারী সেলিনা খাতুন নামের এক নারীকে দ্বিতীয় বিয়ে করার পর জোনাব আলী ওই আবাসনেই বসবাস শুরু করেন। ওই সময় আবাসনের কিছু মাদক ব্যবসায়ীর সঙ্গে তার সখ্যতা গড়ে ওঠে এবং ওইসব মাদক ব্যবসায়ীদের মাদক গন্তব্যে পৌঁছে দিতে জোনাব আলী তাদের কামলা দিতেন।
এক পর্যায়ে ২০১৩ সালে জোনাব আলী কৃষ্ণা নামের আরেক নারীকে তৃতীয় বিয়ে করেন। সেসময় তিনি আবাসন ছেড়ে নিজ গ্রাম উথলীতে বসবাস শুরু করেন। ওই সময় তিনি এলাকার কিছু মাদকের খুচরা বিক্রেতাদের নিয়ে একটি শক্তিশালী মাদক সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন। জোনাব আলীর নের্তৃত্বে ওই সিন্ডিকেট আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে প্রতিদিন ভারত থেকে বস্তা বস্তা ফেনসিডিল, গাঁজা এবং ইয়াবা নিয়ে এসে দেশের বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ শুরু করে এবং প্রতিদিন বিকেল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত নিজ বাড়িতে মাদক বিক্রির আসর বসাতে থাকে।
সবকিছু জেনেও জোনাব আলীর ভয়ে প্রতিবেশীরা কেউ মুখ খুলতে পারেননি। এক পর্যায়ে উথলীর পার্শ্ববর্তী গ্রাম এতকারপুর, আকুন্দবাড়ীয়া, সেনেরহুদা, মৃগমারী, রাংগিয়ারপোতা, বেগমপুর ও সিংনগর গ্রামের মাদক ব্যবসা নিজ কবজায় নিয়ে নেন। দিনমজুর থেকে দিনে দিনে হয়ে ওঠেন শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী।
এছাড়া অভিযোগ রয়েছে, জোনাব আলী বাইরে থেকে তরুণীদের নিয়ে এসে নিজ বাড়িতে দেহ ব্যবসাও করাতেন। একদিকে মাদক ব্যবসা অন্যদিকে দেহ ব্যবসা সব মিলিয়ে মাত্র ৫ বছরেই জোনাব আলী ফুলে-ফেপে ওঠেন। কিন্তু শেষমেষ সেটা আর স্থায়ী হয়নি। সর্বশেষ ২১ মে রাতে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন জোনাব আলী। তার নিহতের খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে প্রকাশ্যে কেউ উল্লাশ করতে না পারলেও এলাকাবাসীর মধ্যে স্বস্তির বাতাস বইতে শুরু করেছে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন