দিনাজপুরের বীরগঞ্জে প্লাস্টিক বোতলে পানি সংরক্ষণ ও পান, স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়লেও নেই সচেতনতা

দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলায় পুরোনো প্লাস্টিক বোতলে পানি সংরক্ষণ ও পান করার প্রবণতা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে। অনেকেই দিনের পর দিন একই বোতল ব্যবহার করছেন, যা মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। অথচ এ বিষয়ে যথাযথ সচেতনতার অভাব রয়েছে।

বীরগঞ্জের হাট-বাজার ঘুরে দেখা গেছে, দোকানদার ও কর্মচারীরা পুরোনো প্লাস্টিক বোতলেই পানি সংরক্ষণ ও পান করছেন। বেশিরভাগ বোতলই টাইপ-১ প্লাস্টিকের, যা মাত্র একবার ব্যবহারের জন্য তৈরি। কিন্তু সচেতনতার অভাবে অনেকেই দীর্ঘদিন ধরে একই বোতল বারবার ব্যবহার করছেন।

এতে বোতলের ভেতরে শ্যাওলা জমছে, জং ধরছে এবং ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া জন্ম নিচ্ছে। যা শরীরের জন্য মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি সৃষ্টি করছে।

পৌর বাজারের মুদি দোকানদার আব্দুল মালেক বলেন, “অনেকদিন ধরে এই বোতলে পানি খাচ্ছি, কোনো সমস্যা হয়নি। নতুন বোতল কিনতে খরচ বেশি পড়ে, তাই এটা ব্যবহার করি।” একই বাজারের দোকান কর্মচারী সাইফুল ইসলাম বলেন, “স্বাস্থ্যঝুঁকি সম্পর্কে কোনো ধারণা নেই।

সবাই তো এই বোতলে পানি খাচ্ছে, সমস্যা হলে কি আর এতদিন টিকে থাকতাম?” আর এক দোকানদার শ্রী রতন (রবি দাস) বলেন, “তিন-চার মাস ধরে একই বোতল ব্যবহার করছি। আপনি বলার পর বুঝতে পারছি যে বদলানো উচিত, কিন্তু আলসেমি করে আর বদলানো হচ্ছে না।”

বীরগঞ্জ উপজেলা স্যানিটারি ইন্সপেক্টর ফরিদ বিন ইসলাম বলেন, “বারবার প্লাস্টিক বোতল ব্যবহারের ফলে এতে ব্যাকটেরিয়া তৈরি হয়, যা বিভিন্ন পানিবাহিত রোগের কারণ হতে পারে। শ্যাওলা ও জং ধরা বোতল আরও বেশি ক্ষতিকর। দোকানিদের সচেতন করতে নিয়মিত বাজার তদারকি করা হচ্ছে এবং কার্যক্রম আরও জোরদার করা হবে।

“উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ আফরোজ সুলতানা জানান, “বাজারে ব্যবহৃত প্লাস্টিক বোতলগুলোর বেশিরভাগই একবার ব্যবহারযোগ্য। এসব প্লাস্টিকের বোতলে থাকা বিসফেনল-এ, এবং অন্যান্য রাসায়নিক উপাদান মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। দীর্ঘদিন এসব বোতলে পানি পান করলে বিষাক্ত পদার্থ শরীরে জমতে থাকে, যা রক্তস্বল্পতা, কিডনি সমস্যা ও লিভারের জটিলতা তৈরি করতে পারে।”

তিনি আরও বলেন, “বিশেষ করে যদি এসব বোতলে গরম পানি রাখা হয়, তাহলে ঝুঁকি আরও বেড়ে যায়। পুরোনো বোতলে জং ধরলে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের সম্ভাবনা থাকে, যা ডায়রিয়া, টাইফয়েডসহ বিভিন্ন পানিবাহিত রোগের কারণ হতে পারে। এছাড়া, প্লাস্টিক থেকে নির্গত ক্ষতিকর রাসায়নিক ক্যান্সারের ঝুঁকিও বাড়িয়ে দেয়।”

স্বাস্থ্যঝুঁকির বিষয়টি জানা থাকা সত্তেও শুধুমাত্র খরচ বাঁচানোর জন্য বা অবহেলার কারণে পুরোনো বোতল ব্যবহার করা একেবারেই অনুচিত। নিরাপদ পানি নিশ্চিত করতে ব্যক্তিগত সচেতনতার পাশাপাশি সামাজিক উদ্যোগও জরুরি।

উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ বাজার তদারকির পাশাপাশি জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। তবে ব্যক্তি পর্যায়ে নিজ দায়িত্বে সকলকে সতর্ক হতে হবে এবং বিশুদ্ধ পানি পান নিশ্চিত করতে হবে।
সচেতন হোন, নিরাপদ পানি পান করুন, সুস্থ থাকুন। নিজে বাঁচুন, পরিবারকে সুস্থ রাখুন।

oppo_32