দিনাজপুরের বীরগঞ্জে বৈষম্যের শিকার, হরিজনরা কি সামাজিক মর্যাদা পাবে না

হরিজন সম্প্রদায় জন্মই যাদের এক অভিশপ্ত নাম দিয়ে শুরু, কি অদ্ভুদ এই সমাজ ব্যবস্থা হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খিস্ট্রান সবার শরীরে একই রঙের রক্ত প্রবাহিত একই স্রষ্টার সৃষ্টি হলেও দুঃখের বিষয় সামাজিক বৈষম্যের বেড়াজালে আজও তারা জর্জরিত। তাদের কাছে সেবা নেওয়া যাবে কিন্তু তাদের স্পর্শ করা যাবে না। কি অদ্ভুৎ এই সমাজব্যবস্থা নিপীড়িত ও অনগ্রসর জাতি রুপে আজও তারা জর্জরিত।

সত্যাগ্রহ আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা মহাত্মা গান্ধী দলিতদের মেথর বা সুইপার না বলে হরিজন বলার অমক বাণী দিয়ে গেছেন, এর মাধ্যমে মহাত্মা গান্ধী সমাজের অবহেলিত সম্প্রদায়কে একটি সম্মানজনক অবস্থানে নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন কিন্তু দুঃখের বিষয় সুশীল সমাজ আজও তার স্বীকৃতি দেয়নি।

দিনাজপুরের বীরগঞ্জ পৌরসভার ৪ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা শিবকুমার (৪৫) নিজের ক্ষোভ আর হতাশা উজাড় করে বলেন, মেথরের ঘরে জন্ম নেওয়াই যেন পাপ, তাদের ঘরে জন্ম নেওয়া নিঃস্পাপ শিশুরাও এই বৈষম্য থেকে রেহাই পায়না, প্রতিনিয়ত তাদের সন্তানদের মেথরের ছেলেমেয়ে বলে তুচ্ছতাচ্ছিল্য আর অবহেলার স্বীকার হতে হয়।

হোটেল কিংবা রেস্টুরেন্টে ঢুকতে দেওয়া তো দূরের কথা এক গ্যাস পানি পর্যন্ত পান করতে দেওয়া হয়না কারণ তাদের চুমুক দেওয়া পাএে নাকি জাত চলে যাবে ঘৃনায় কেউ খেতে চায়না। বলতে গেলে সমাজ থেকে তারা একবারেই বিচ্যুত জাতি। অভাব অনটন আর অবহেলায় তাদের সম্প্রদায়ের অধিকাংশ মানুষ ময়লা ,আবর্জনা ও পয়োনিস্কাশনের কাজে লেগেজ যায়। শিবানী (১০) জানান ,স্কুলে গেলে সহপাঠীরা একসাথে বসতে চায়না ,কথা বলতে চায়না এমনকি ঘৃনা করে।

১৯৯১ সালে আদমশুমারিতে ক্ষুদ্র নৃতাত্বিক গোষ্ঠীর তালিকায় প্রথম হরিজন নামটি পাওয়া যায়। ব্রিটিশ শাসন আমলে জঙ্গল পরিষ্কারের জন্য ভারতের কয়েকটি তেলেগু পরিবারকে ঢাকায় আনা হয় কালের বিবর্তনে তারা একসময় এ দেশের নাগরিক হয়ে যায়। সেই সময়ে তারা দেশের ৬৪ জেলা, উপজেলায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসবাস করছে।

হরিজনদের বড় একটি অংশ বাংলাদেশ রেলওয়েতে চাকরি করে তাদের অধিকাংশ সময় মাস্টার রোলে নিয়োগ দেওয়া হয় মেডিকেল ভাতা মাতৃত্বকালীন ছুটি উৎসব ভাতা সহ অন্যান্য সদস্যবিদ্যা তারা তেমন সুযোগ সুবিধা পায়না, বর্তমানে হরিজন সম্প্রদায়ের পেশায় ভিন্ন পেশার লোকজন প্রবেশ করায় তাদের কর্মসংস্থান সংকুচিত হয়ে আসছে। হাসপাতাল, পৌরসভা, স্কুল, কলেজ, সরকারি অফিস আদালত সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ঝাডুদার, পয়োনিস্কাশন, ক্লিনার হরিজনদের বদলে ভিন্ন সম্প্রদায়ের লোকদের চাকরি দেওয়াও কাম্য নয়।

ইউনিসেফের তথ্যমতে বাংলাদেশে ১৮ বছরের আগে বিয়ে হয় ৬৬ শতাংশ মেয়ের হরিজনদের মধ্যে বাল্যবিবাহ ও জোরপূর্বক বিয়ের সংখ্যা অনেক বেশি অধিকাংশ ক্ষেত্রে ১০ থেকে ১২ বছরের মধ্যে মেয়েদেরও বিয়ে দেওয়া হয়। হরিজনরা সাাধারনত সরকারি খাস জমিতে বসবাস করে থাকে।

উপজেলা সমাজসেবা অফিসার মোঃ তরিকুল ইসলাম জানান, উপজেলার অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জন্য ৫০ উর্ধ্ব ২৯ জনকে মাসিক ৫০০ টাকা হারে ২৯ জনকে ভাতা প্রদান করা হয়। শিশুদের শিক্ষার জন্য ভাতা আসলে দেওয়া হবে।

সমাজের দৃষ্টিতে সবচাইতে নিচু জাত। বিভিন্ন মৌলিক ও মানবিক অধিকার থেকে তারা আজও বঞ্চিত এই সম্প্রদায়ের জীবন মান উন্নয়নে এখনই পদক্ষেপ নেওয়া জরুরী। তাদের জন্য তৈরি করে দিতে হবে অন্য সাধারণ মানুষের মতো জীবন যাপন করার সুযোগ।

আসুন হরিজনদেরকে ভালবাসি, সামাজিক মর্যাদায় শামিল করি। অন্য সব সাধারণ মানুষের মতো ভালো আচরণ করি তারাও মানুষ আমাদের সমাজের একটি অংশ।”

oppo_0