দিনাজপুরের বীরগঞ্জে লাল কলা চাষে সাফল্য, কৃষিতে নতুন সম্ভাবনার দ্বার

শখের বসে শুরু, এখন বাণিজ্যিক চাষের স্বপ্ন। দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার সুজালপুর ইউনিয়নের কুমোরপুর গ্রামের ক্ষুদ্র ফল ব্যবসায়ী সুশীল কুমার রায় (৫৫) লাল কলা চাষে এনেছেন নতুন মাত্রা। মাত্র একটি চারা গাছ সংগ্রহ করে গড়ে তুলেছেন সম্ভাবনাময় একটি লাল কলার বাগান। তার এই ব্যতিক্রমী উদ্যোগ স্থানীয় কৃষিতে খুলে দিচ্ছে সম্ভাবনার নতুন দুয়ার।
চার বছর আগে সিলেট ভ্রমণে গিয়ে গাঢ় লাল রঙের একটি বিশেষ জাতের কলা প্রথম নজরে আসে সুশীলের। আকর্ষণীয় রং ও ভিন্ন স্বাদের কারণে কৌতূহলবশত একটি চারা সংগ্রহ করেন তিনি। এখন সেই এক চারা থেকেই গড়ে তুলেছেন প্রায় ১২টি গাছের একটি ছোট বাগান।
সুশীল কুমার জানান, একটি গাছে চারা রোপণের ১১ মাস পর কলা ধরে এবং ১২ মাসের মধ্যে তা বাজারজাতের উপযোগী হয়। প্রথমবার পৌর শহরের ৭নং ওয়ার্ডের বলাকামোড়ে তার দোকানে এই কলা বিক্রি করে ব্যাপক সাড়া পান। এরপর থেকেই প্রতি বছর গাছ ও ফলনের পরিমাণ বাড়ছে। গত বছর ৮টি গাছে কলা ধরেছিল, এবার ১২টির মধ্যে ৩টিতে কলা এসেছে। এর মধ্যে ২টি গাছের কলা ইতিমধ্যে বিক্রি করেছেন, আরেকটি বিক্রির প্রস্তুতি চলছে।
এই কলা চাষে কীটনাশক বা অতিরিক্ত সার প্রয়োগের প্রয়োজন হয় না বলে জানান তিনি। গড়ে প্রতি গাছে ২৫-২৮টি ‘হালা’ (গুচ্ছ) কলা ধরে, প্রতিটি হালায় থাকে চারটি করে কলা। বাজারে প্রতি হালা বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকায়। তিনি নিজেই তার দোকানে এসব কলা বিক্রি করেন।
সুশীল কুমার বলেন, খরচ কম, লাভ বেশি তাই ভবিষ্যতে আরও বড় পরিসরে চাষের পরিকল্পনা করছি। আশপাশের অনেকেই এখন এই কলা চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন।
বিশেষ এই জাতের কলাটি ‘অগ্নিসাগর’ বা ‘রেড ব্যানানা’ নামে পরিচিত, যা সাধারণত বান্দরবান, কাউখালীসহ পাহাড়ি অঞ্চলে বেশি চাষ হয়। তবে সমতল ভূমিতেও এর সফল চাষ সম্ভব, তার বাস্তব উদাহরণ এখন বীরগঞ্জ।
স্থানীয় কলা ক্রেতা খোরশেদ আলম বলেন, এরকম লাল কলা আগে দেখিনি। খেয়ে দেখলাম, এটি খুবই সুস্বাদু এবং একেবারে আলাদা স্বাদের। আরেক ক্রেতা সাদেকুল ইসলাম জানান, ৪০ টাকায় এক হালি কলা কিনলাম, পরিবারের সবাই মিলে খাবো।
বীরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আফরোজা সুলতানা জানান, “লাল কলা শরীরের শক্তি বাড়ায়, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা জোরদার করে, দৃষ্টিশক্তি ও হজম শক্তি উন্নত করে।
বীরগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. শরিকুল ইসলাম বলেন, “অগ্নিসাগর জাতের এই লাল কলা বীরগঞ্জে কৃষির নতুন সম্ভাবনা। এটি শুধু স্বাদে অনন্য নয়, পুষ্টিগুণেও সমৃদ্ধ। এতে রয়েছে শর্করা, ক্যালসিয়াম, লৌহ, ভিটামিন সি ও বি-৬, বিটা ক্যারোটিন, ফাইবার এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট—যা রোগ প্রতিরোধ ও হজমে সহায়ক।
একটি চারা, সাহস ও নিষ্ঠা এই তিনে বদলে যেতে পারে জীবন। তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ সুশীল কুমার। তার এই উদ্যোগ শুধু কৃষির সম্ভাবনাই নয়, বরং নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য অনুপ্রেরণার এক অনন্য দৃষ্টান্ত।

এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন