দিনাজপুরের বীরগঞ্জ প্রসুতির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ক্লিনিক ঘেরাও ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন

দিনাজপুরের বীরগঞ্জে একটি বেসরকারী ক্লিনিকে অস্ত্রপাচারের মাধ্যমে সন্তান প্রসবের পর আশা রানী রায় (১৮) নামে এক প্রসুতির মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় ক্লিনিক কর্তৃপক্ষকে দায়ী করে প্রতিষ্ঠানটি ঘেরাও করে মৃতের স্বজন এবং এলাকাবাসী। ঘটনার পর পর ক্লিনিকের মালিক ও কর্মচারী পালিয়ে যায়।

সংবাদ পেয়ে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে পুলিশ ক্লিনিকে অবস্থান নেয়। ক্লিনিকটির অনুমোদন নবায়ন নেই এবং এ ঘটনায় ৩সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। তবে এখন পর্যন্ত প্রসব হওয়া কন্যা সন্তানটি সুস্থ্য আছে বলে জানান মৃত আশা রানী রায়ের পরিবার।

মৃত আশার রানী রায় উপজেলার সুজালপুর ইউনিয়নের জগদল গ্রামের হৃদয় রায়ের স্ত্রী।

শুক্রবার রাত ৮টায় বীরগঞ্জ পৌর শহরের একতা ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে এ ঘটনা ঘটে।

জানা যায়, শুক্রবার দুপুরে প্রসব জনিত কারণে বীরগঞ্জ পৌর শহরের বলাকা মোড়ের চা দোকানদার অতুল রায়ের ছেলে হৃদয় রায়ের স্ত্রী আশা রানী রায়কে একতা ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ভর্তি করেন। বিকেলে দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক ডাঃ ইয়াসমিনের নেতৃত্বে অস্ত্রপাচারের পর একটি কন্যা সন্তান প্রসব করে।

প্রসবের পর কন্যা সন্তান সুস্থ থাকলেও প্রসুতি আশা রানীকে দ্রæত দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ। এরপর রোগীর মৃত্যুর বিষয়টি ছড়িয়ে পড়লে রাত ৮টায় ক্লিনিক কর্তৃপক্ষকে দায়ী করে প্রতিষ্ঠানটি ঘেরাও করে মৃতের স্বজন এবং এলাকাবাসী। ঘটনার পর ক্লিনিকের মালিক ও কর্মচারীরা পালিয়ে যায়।

ক্লিনিকে মারা গেছে এমন দাবী করে আশা রানী রায়ের শ^াশুড়ী অনিমা রায় বলেন, প্রসুতিকে ক্লিনিক হতে বের করে নিয়ে যাওয়ার সময় তার নিথর দেহ মৃত প্রায় মনে হয়েছে। আমরা জানতে চাইলে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ রোগী অবস্থা ভালো বলে একটি গাড়ীকে আমাকে সহ জোড় করে দিনাজপুর পাঠিয়ে দেয়।

রোগী নিথর দেহ দেখে পথে অনেকবার বলেছি রোগী তো জীবিত নেই। কিন্তু তারা আমার কোন কথা না শুনে দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে পালিয়ে যায়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রোগী মৃত্যু বিষয়টি আমাদের জানায়। পরে রাত ১১টায় মৃতদেহ নিয়ে আবার ক্লিনিকে ফিরে আসি।

ক্লিনিক মালিক মোঃ রেজাউল করিম রিপন পলাতক থাকায় তার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
তবে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বীরগঞ্জ থানার ওসি মোঃ আব্দুল গফুর জানান, সংবাদ পেয়ে তাৎক্ষণিক ভাবে ঘটনাস্থলে পুলিশ প্রেরন করা হয়েছে। লিখিত অভিযোগে ভিত্তিত্বে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসার ডাঃ আফরোজ সুলতানা জানান, নিউ একতা ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার নামে ২০২২-২৩অর্থ বছরে জন্য সরকারী ভাবে অনুমোদন পায় প্রতিষ্ঠানটি। এরপর প্রতিষ্ঠানে অবকাটামো ও প্রয়োজনীয় জনবল না থাকায় প্রতিষ্ঠানটি অনুমোদন নবায়ন হয়নি।

আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর উপজেলার প্রতিটি ক্লিনিক পরিদর্শন করে ৩মাসের মধ্যে সরকারী অনুমোদনের কাগজপত্র জমা দানের নির্দেশ প্রদান করি। কিন্তু এখন পর্যন্ত অনেক প্রতিষ্ঠান কাগজপত্র জমা প্রদান করেননি। তাদের মধ্যে এই প্রতিষ্ঠানটি রয়েছে।

ঘটনায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ মোঃ আসাদ শেখকে প্রধান করে ৩সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে তিনি আরও জানান।

জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার তানভীর আহমেদ বলেন, এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।