‘দুঃসময়ে ভারতীয় কূটনীতি’
ভারতের বন্ধু দেশের অভাব নেই। মিত্রদেশগুলো যে যথেষ্ট শক্তিশালী, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু তাতে করে তো আর প্রতিবেশি রাষ্ট্রের গুরুত্ব কমে যায় না। প্রতিবেশি দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্কটা শান্তিপূর্ণ হওয়াই কাম্য।
ভারত কি এই সহজ-সরল সত্যটাকে যথাযথভাবে উপলব্ধি করতে সক্ষম নয়? দোকলাম সংকট ঘিরে দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনৈতিক ছবিটা যতো বদলে যাচ্ছে, তত বেশি করে উঠে আসছে এই প্রশ্ন।
ভারতকে ঘিরে মাঝারি, ক্ষুদ্র বা অতি ক্ষুদ্র যেসব রাষ্ট্রের অবস্থান; তাদের প্রত্যেককে নিজের শিবিরে টানার চেষ্টা শুরু করেছে চীন। চীনের উদ্দেশ্য একেবারে স্পষ্ট; দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতকে একা করে দেয়া।
চীন-ভারত বিবাদে বিশ্বের বৃহত্তম শক্তি যুক্তরাষ্ট্রকে যে বেইজিং পাশে পাবে না, তা শি জিনপিং ভাল করেই জানেন। এশিয়া এবং ইউরোপ জুড়ে ছড়িয়ে থাকা যেসব দেশ যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সহযোগী, তাদেরকেও যে পাশে পাওয়া যাবে না; বেইজিং সে কথাও জানে।
ভারতের সঙ্গে এই সব দেশের ক্রমবর্ধমান মৈত্রী, সমন্বয় ও সহযোগিতার ছবিটা আজ গোটা বিশ্বের সামনে স্পষ্ট। কিন্তু কূটনৈতিক যুদ্ধ তথা স্নায়ুর লড়াই যে এর পরেও বাকি থাকে; চীন সেটা দেখাচ্ছে।
ডকলাম ভুটানের, নাকি চীনের? সংকটের উৎসস্থল মূলত এই প্রশ্নটিই। এই প্রশ্নের সর্বসম্মত উত্তর না খুঁজেই ডকলামের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়ার চেষ্টা শুরু করেছিল বেইজিং।
সেকারণে ভারত সেনা পাঠিয়েছে। প্রতিবেশি দেশ ভুটানের সার্বভৌমত্ব রক্ষার দায়বদ্ধতা ভারতের এই পদক্ষেপের অন্যতম প্রধান কারণ।
কিন্তু সেই ভুটানই ধীরে ধীরে চীনের প্রতি নরম হয়ে পড়েছে। চীনা দূতাবাস ভুটানে নেই, চীনেও নেই ভুটানের কোনো দূত। তা সত্ত্বেও কূটনৈতিক স্তরে ভুটানের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করেছে বেইজিং। চীনের তরফ থেকে বার্তা দেয়া হয়েছে যে, ভুটান এখন ভারতীয় প্রভাব থেকে নিজেদের কিছুটা হলেও মুক্ত করার চেষ্টা করছে।
ভুটানেই কিন্তু শেষ হচ্ছে না উদ্বেগ। নেপালের সঙ্গেও যোগাযোগ বাড়িয়ে দিয়েছে চীন। ডকলাম বিতর্কে চীনের অবস্থান কী, তা নেপালের কাছে বিশদে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। দফায় দফায় বৈঠক করা হয়েছে, আরও অনেক বৈঠকের পথ সুগম রয়েছে।
পাকিস্তান দশকের পর দশক ধরেই চীনের ঘনিষ্ঠ মিত্র। বিপুল চীনা বিনিয়োগ এখন শ্রীলঙ্কাকেও বেশ কিছুটা বেইজিংমুখী করে তুলেছে। নয়াদিল্লিকে উদ্বিগ্ন হতেই হচ্ছে সেকারণে।
ভারতকে বেকায়দায় ফেলতেই হয়তো প্রতিবেশিদের প্রতি হঠাৎ যত্নবান চীন। হয়তো দেশটির এই কৌশল দীর্ঘমেয়াদী নয়। কিন্তু এই কৌশলের মোকাবিলার পথ ভারতকে খুঁজতেই হবে। নিজেদের সঙ্কট, অপারগতার দিকও খুঁজে বের করতে হবে।
ধীরে ধীরে প্রায় সব পড়শি ভারতকে আর সেভাবে মূল্যায়ন করছে না। এমন অবস্থা ভারতের জন্য উদ্বেগজনক এবং ভারতীয় কূটনীতির জন্য অত্যন্ত দুঃসময় এটা। সুদিন ফেরানোর চেষ্টা ভারতকেই করতে হবে।
সেজন্য পদক্ষেপটা এ বার সুচিন্তিত হওয়া খুবই জরুরি। এজন্য ভারতের উচিত প্রতিবেশিদের দিকটা গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা।
পশ্চিমবঙ্গের বাংলা দৈনিক আনন্দবাজারে লেখা অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের নিবন্ধ। সামান্য সংশোধিত।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন