দুই মাস থেকে বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত সহকারী শিক্ষক, প্রধান শিক্ষক আসেন মাঝে মধ্যে

দুই মাস থেকে স্কুলে আসেন না সহকারী শিক্ষক।শুধু সহকারী শিক্ষক নয় রাজনীতি নিয়ে ব্যস্ত থাকায় প্রধান শিক্ষকও প্রায় সময় থাকেন বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত। এতে ভেঙে পড়েছে ঐতিহ্যবাহী এ বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম।
কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুর উপজেলার হাতিয়া ইউনিয়নের হাতিয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের চিত্র এটি। নিয়মের যেন কোন বালাই নেই এই প্রতিষ্ঠানে। কর্তৃপক্ষের দুর্বল তদারকিকেও দায়ী করছেন স্থানীয়রা।
এলাকাবাসী ও শিক্ষকদের অভিযোগে জানা যায়, উলিপুর উপজেলার হাতিয়া ইউনিয়নে হাতিয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক প্রায় সময় বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকেন। মাঝে মধ্যে আসেন, এবং স্বাক্ষর করে চলে যান। বিদ্যালয়ের অন্য এক সরকারি শিক্ষক মো. নুর আলম ২ মাস ধরে বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত আছেন।
এই নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়টিতে রয়েছে শিক্ষক সংকট। তারপরে সহকারী শিক্ষক অনুপস্থিত থাকায় বাড়তি চাপ পড়েছে অন্য শিক্ষকদের কাঁধে। কিন্তু শিক্ষক নুর আলম কেন বিদ্যালয় অনুপস্থিত এ বিষয়ে কিছুই জানেন না অন্য সহকারী শিক্ষকগণ। প্রধান শিক্ষক প্রাক্তন চেয়ারম্যান এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে সখ্যতা থাকার কারণে ভয়ে অন্য শিক্ষক কিছু বলতে সাহস পান না।
সরেজমিনে বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) দুপুর ১টায় হাতিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, সহকারী শিক্ষক (কৃষি) চলতি বছরের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে একদিনও উপস্থিত হয়নি। হাজিরা খাতায় শুধু নাম লেখা থাকলেও একদিনও বিদ্যালয়ে আসেননি এবং স্বাক্ষর করেনি।
ঈদের ছুটির পরে গত ৯ এপ্রিল বিদ্যালয় খুললেও সেদিনও ছিলেন সেই সহকারী শিক্ষক অনুপস্থিত।১০ এপ্রিল তার স্বাক্ষর থাকলেও তাকে বিদ্যালয়ে পাওয়া যায়নি। শুধু তাই নয়, প্রধান শিক্ষক মো. আবুল হোসেনেরও স্বাক্ষর নেই। জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারী মাসেও বেশ কিছুদিন স্বাক্ষর নেই এই প্রধান শিক্ষকেরও । প্রমান স্বরূপ হাজিরা খাতার ছবি রয়েছে প্রতিবেদকের হাতে।
বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মিজানুর রহমান, (ভৌত বিজ্ঞান) বলেন, ‘আমাদের কৃষি শিক্ষক স্কুলে কেন আসে না আমরা জানি না। স্কুলে প্রায় ৩ শত শিক্ষার্থী, শিক্ষক কম। তার মধ্যে ওনার অনুপস্থিতিতে অনেক কষ্টে তার ক্লাসগুলো মেকাপ করছি।’
সিনিয়র সহকারী শিক্ষক পল্লবী সাহা
(হিন্দু ধর্ম শিক্ষক) বলেন, ‘নুর আলম স্যার স্কুলে আসে না কেন আমরা জানি না, আমাদের প্রধান শিক্ষক জানে।’
এলাকাবাসী আফজাল হোসেন বলেন,’ সহকারী শিক্ষক নুর আলম দুই মাস থেকে স্কুলে আসেন না। প্রধান শিক্ষক কোন ব্যবস্থা নেয় না। দুর্নীতিতে ভরা আমাদের এই বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়। শিক্ষা কর্মকর্তারা ঘাস কাটে। কোন তদারকি নাই।’
দুই মাস থেকে বিদ্যালয়ে অনুপুস্থির বিষয়টি জানতে মুঠোফোনে কল দিলে সহকারী শিক্ষক মো. নুর আলম (কৃষি) বলেন, ‘আমি শারিরিকভাবে অসুস্থ। আপনি কি ছুটিতে আছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, আমি আপনার সাথে আগামীকাল সাক্ষাতে দেখা করে বিস্তারিত বলবো।’।
হাতিয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আবুল হোসেন বলেন, ‘সহকারী শিক্ষক নুর আলম হার্টের রোগী। এছাড়া সে ঋণগ্রস্ত হয়েছে।সেকারণে তর হার্টের রোগ বেড়ে গেছে। তাই তিনি জানুয়ারি মাস থেকে স্কুলে আসে না। আমি ইতিমধ্যে তাকে দুটি শোকজ দিয়েছি, সে এখনো জবাব দেয়নি। শিক্ষকদের বেতন যেহেতু এখন ইএফটিতে হয় তাই হেডমাস্টারদের এক্ষেত্রে করনীয় কি সে বিষয়টি আমার জানা নেই।’
আপনার নিজেরও মাঝে মাঝে স্বাক্ষর করা নেই, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা হেডমাস্টার মানুষ, ওইভাবে সব সময় স্বাক্ষর করা হয় না,।
জেলা শিক্ষা অফিসার মো. শামছুল আলম বলেন,
‘এটা শাস্তি যোগ্য অপরাধ, এটা প্রমানিত হলে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন