দু’টি কদম ফুলে দু’জনার গল্প

‘কদম ফ্লাওয়ার’
ভুল হইলো নাকি, কদমের ইংরেজি কি? না আমার মাথায় এই ফুলের ইংরেজি নেই।
‘কাডাম ফ্লাওয়ার?’
‘ইয়াহ। আমরা এই প্রথম এই ফুল দেখলাম। এই ফুল বিস্ময়কর সুন্দর। শুধুই তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করছে। ‘

ঢাকা ক্যান্ট স্টেশনে নীলসাগর এক্সপ্রেস ঢুকে পড়ে। অস্ট্রেলিয়ান জুলিয়ান ও ব্রিটিশ তরুণী সারা ট্রেনে উঠে পড়ে। দুইজনেই একটা বিদেশি সংস্থায় কর্মরত। বারিধারায় অফিস। যাবেন পার্বতীপুরে। পার্বতীপুরে একটা মিশনারি হাসপাতাল আছে। ল্যাম্ব হাসপাতাল। আমার কিছু ক্রিশ্চিয়ান বন্ধুদের কল্যাণে হাসপাতালের পুরো নাম উদ্ধার করতে পেরেছিলাম। লুথারান এইড মেডিসিন অব বাংলাদেশ। স্বাধীনতা যুদ্ধের আগে ছিল ‘ল্যাম্প’। লুথারান এইড মেডিসিন অব পাকিস্তান। তাদের কি যেন কাজ সেখানে। হয়তো চ্যারিটেবল। গন্তব্য যেহেতু এক সেহেতু ভাব জমে উঠতে সময় লাগলো না। আমার ‘ঘ’ বগি ছেড়ে যখন তাদের কামরায় আসলাম, ট্রেন দ্রুতবেগে ছুটে চলেছে। জুলিয়ান ও সারা দরজায় দাঁড়িয়ে আছে। ঘুরে ফিরে তারা একজোড়া কদমফুলের ছবি তুলছে। ভাঙাচোরা ইংরেজিতে
বললাম
‘রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাম শুনেছ তোমরা?’
‘হ্যাঁ, তিনি নোবেল পেয়েছেন। ‘
‘রবী ঠাকুর এই কদমফুল আর বৃষ্টি নিয়ে প্রচুর লিখেছেন..’
‘ওহ, তাই নাকি অথচ এতসুন্দর একটা ফুল আমরা পৃথিবীর আর কোথাও দেখি নি…’
‘কদমফুলের ব্যাপারে তোমরা আরো কিছু জানতে চাও?’
‘হ্যাঁ অবশ্যই, তুমি বলতে থাকো আমরা খুবই আনন্দিত হচ্ছি। ‘
‘আমাদের দেশে বর্ষাকাল বলতে একটা সিজন আছে, জানো?’
‘না, জানা নাই। ‘
‘বাংলা আষাঢ় ও শ্রাবণ মাস এই দুই মাস মিলে বর্ষাকাল। যেটা এখন চলছে.. -ওহ, তাই দারুণ’
জুলিয়ান ও সারা’র চোখেমুখে বিস্ময়।
‘বর্ষাকালে আমাদের দেশে প্রচুর কদমফুল হয়। ‘
‘দারুণ, সত্যিই চমৎকার..’
‘বর্ষার প্রথম বৃষ্টির দিন, মাথায় প্রচুর বৃষ্টি নিয়ে এই কদমফুল প্রেমিকেরা কষ্ট করে সংগ্রহ করে, এরপর তারা একগুচ্ছ কদমফুল তাদের প্রেমিকার হাতে তুলে দেয়’
‘সত্যিই, সত্যি বলছ?’
‘হ্যাঁ সত্যিই…’
‘ওহ, রিয়েলি ফ্যান্টাস্টিক, এডভেঞ্চেরাস, চার্মিং… কান’ট বিলিভ ইট…..’

বিশেষণ হারিয়ে ফেলে জুলিয়ান। এরপরে জুলিয়ান কদমজোড়া সারা’র দিকে একটু হাঁটু গেড়ে বাড়িয়ে দেয়… তখন প্রচণ্ড বৃষ্টিতে সবুজ মফস্বলের সবুজের বুক চিড়ে ছুটে চলেছে ‘নীলসাগর এক্সপ্রেস…’

লেখা ও ছবি মাহতাব হোসেন