দুর্নীতি কমালে রাজস্বে সমস্যা হবে না
নতুন প্রস্তাবিত আইনে সকল পণ্যে ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করার কথা ছিল। কিন্তু সরকার শেষ মূহুর্তে তা স্থগিত করে। ফলে সরকারের রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ বিষয়ে ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, যদি দুর্নীতি ও ব্যবসায়ীদের হয়রানি কমানো যায়, তাহলে রাজস্ব আদায় সমস্যা হবে না। এসময়ে ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, নতুন বাজেটকে স্বতন্ত্র কোনো সংস্থা দিয়ে পর্যালোচনা করার জন্য।
শনিবার(১ জুলাই) নতুন অর্থবছরের প্রথম দিনে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) পক্ষ থেকে বাজেট নিয়ে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে আরো ৯টি ব্যবসায়িক সংগঠনের নেতারাও অংশ নেন।
২০১৭-১৮ অর্থবছর থেকেই ‘মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন, ২০১২’ কার্যকর হওয়ার কথা ছিল। গত বছর থেকে কার্যকর হওয়ার কথা থাকলেও ব্যবসায়ীদের আপত্তিতে তা হয়নি। এবার প্রস্তাব করা হলেও, শেষ মূহুর্তে তা আরো দুই বছরের জন্য স্থগিত করেন প্রধানমন্ত্রী। বিশ্লেষকরা বলছেন, সামনে নির্বাচন হওয়ায় এ মূহুর্তে সরকার জনগণের বিরুদ্ধে গিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে চাইছে না। নতুন আইনে সব জিনিসের দাম বৃদ্ধি হতো। তাই প্রধানমন্ত্রী এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে ব্যবসায়ীরা বলেন, ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপের চিন্তা করে সরকার রাজস্ব আয়ের পরিকল্পনা করেছিল। কিন্তু আইন বাস্তবায়ন স্থগিত হওয়ায় রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। কিন্তু সরকার যদি দুর্নীতি ও ব্যবসায়ীদের হয়রানি কমাতে পারে, তাহলে রাজস্ব আয়ে সমস্যা হবে না।
শফিউল আলম বলেন, ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন নিয়ে ব্যবসায়ীদের মনে কোনো শঙ্কা নেই। আমরাও চাই আইন বাস্তবায়ন হোক, কিন্তু ব্যবসায়ীদের হয়রানি বন্ধ করতে হবে। সরকারের পক্ষ থেকে ভ্যাট আইন প্রয়োগের নামে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে ব্যবসায়ীদের হয়রানি করা হয়। আমরা আইন প্রয়োগের বিরুদ্ধে নই, তবে হয়রানি চাই না। রাজস্ব আদায় করতে হবে আইনসম্মতভাবে, এক্ষেত্রে আইনের অপপ্রয়োগ যেন না হয়, সে বিষয়টি খেয়াল রেখে গঠিত ওয়ার্কিং কমিটি প্রতি মাসে কেস টু কেস ভিত্তিতে সমস্যার সমাধান করবে। এর ফলে সরকার যেমন রাজস্ব পাবে, তেমনি ব্যবসায়ীরা ব্যবসাবান্ধব পরিবেশের মধ্যে দিয়ে সঠিকভাবে ব্যবসা পরিচালনা করবেন।
এসময় ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে তৈরি হাওয়াই চপ্পল ও প্লাস্টিকের পাদুকা, হাতে তৈরি পাউরুটি ও বিস্কুটের ওপর আরোপিত ভ্যাট প্রত্যাহারের প্রস্তাব করা হয়। তৈরি পোশাক, চামড়া, হিমায়িত ও খাদ্যসহ সব ধরনের রপ্তানি আয়ে উৎসে কর কর্তনের হার ১ শতাংশ থেকে কমিয়ে দশমিক ৫০ শতাংশ করলে এ খাতের ব্যবসায়ীরা লাভবান হবেন।
প্রসঙ্গত, ২০১২ সালের এই আইন গত বছরের ১ জুলাই থেকে কার্যকরের কথা থাকলেও তখনও ব্যবসায়ীদের প্রবল বিরোধিতায় একবছর পেছানো হয়। নতুন অর্থবছরের বাজেটে প্রস্তাব করা হয়েছিল, যে কোনো সময় ব্যাংক হিসাবে এক লাখ টাকার বেশি স্থিতি থাকলে আবগারি শুল্ক বিদ্যমান ৫০০ টাকার পরিবর্তে ৮০০ টাকা কেটে নেবে সরকার। ১০ লাখ থেকে ১ কোটি টাকা পর্যন্ত স্থিতির ক্ষেত্রে ১ হাজার ৫০০ টাকার বদলে ২ হাজার ৫০০ টাকা, ১ কোটি থেকে ৫ কোটি টাকা পর্যন্ত স্থিতির ক্ষেত্রে ৭ হাজার ৫০০ টাকার বদলে ১২ হাজার টাকা এবং ৫ কোটি টাকার বেশি স্থিতিতে ১৫ হাজার টাকার বদলে ২৫ হাজার টাকা আবগারি শুল্ক আদায়ের প্রস্তাবও করেছিলেন মুহিত।
কিন্তু ব্যাপক সমালোচনার মুখে তুলনামূলক স্বল্প ব্যাংক আমানতে আবগারি শুল্কহার বাড়ানোর পরিকল্পনা থেকে সরে আসে সরকার। এক লাখ টাকা পর্যন্ত আমানতে কোনো আবগারি শুল্ক না রাখতেই বলেন প্রধানমন্ত্রী। এসময় তিনি ১ লাখ থেকে ১ কোটি টাকা পর্যন্ত তিনটি স্তর প্রস্তাব করেন। শেখ হাসিনা ১ লাখ ১ টাকা থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত আমানতে ১৫০ টাকা এবং ৫ লাখ ১ টাকা থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত আমানতে ৫০০ টাকা আবগারি শুল্ক কাটার প্রস্তাব করেন। পরবর্তীতে তা অনুমোদন করেই অর্থবছরের বাজেট পাশ করা হয়।
এফবিসিসিআই আয়োজিত এ সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি একেএম সেলিম ওসমান, বিজিএমইএর সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান এবং বিসিআই, সিসিসিআই, এমসিসিআই, বিটিএমএ, বিপিজিএমইএর নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন