দুর্নীতি কী, কত প্রকার আ. লীগের আমলে দেখতে পারি : ফখরুল
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘দুর্নীতি কী, কত প্রকার এবং কাকে বলে সেটা আওয়ামী লীগের আমলে আমরা দেখতে পারি। ১০ টাকার কেজির চাল, সব আওয়ামী লীগের লোকজন খেয়ে ফেলেছে। তারা কানাডাতে, মালয়েশিয়াতে সেকেন্ড হোম তৈরি করা নিয়ে ব্যস্ত রয়েছে।’
বৃহস্পতিবার বিকেলে লালমনিরহাট জেলা পরিষদ অডিটরিয়াম চত্বরে জেলা বিএনপিসহ দলটির তিনটি সহযোগী সংগঠনের দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন মির্জা ফখরুল।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘দেশের অবস্থা একদম ভালো না। আওয়ামী লীগ এই কয়েক বছরে দেশকে একটা ভয়াবহ কারাগারে পরিণত করেছে। মানুষকে বোকা বানাচ্ছে। প্রতারণা করছে। মিথ্যা তথ্য দিচ্ছে, ডেটা দিচ্ছে যে ভয়ঙ্কর উন্নয়ন হচ্ছে দেশে, ভয়াবহ। অতীতে কখনো নাকি এত উন্নতি হয় নাই। অথচ এখন সবচেয়ে খারাপ সময় চলছে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই সরকার গণতন্ত্রের একটা মুখোশ পরে আছে। যারা দেশ শাসন করছে একটা মুখোশ পরে তারা প্রকৃতপক্ষে একদলীয় শাসনব্যবস্থা চালু করেছে। শুধু একদলীয় শাসনব্যবস্থা বললে ভুল হবে এক ব্যক্তির শাসনব্যবস্থা। এখানে মানবাধিকার বলতে কিছু নেই। আওয়ামী লীগ নির্বাচিত হয়ে দেশ চালাচ্ছে না। তারা বন্দুকের জোরে ক্ষমতায় টিকে আছে। তাই প্রশাসনে যাঁরা আছেন তাঁরা সাবধান হয়ে যান, কারণ এ দেশের মানুষ কখনো কোনো চাটুকারকে প্রশ্রয় দেয়নি। চাটুকারিতা করবেন না। জনগণের সঙ্গে থাকুন।’
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘এই সরকার ইলিয়াস আলীসহ আমাদের হাজার হাজার নেতাকর্মীকে গুম করেছে। তাঁদের মা-বোন, সন্তানরা এখনো অপেক্ষায় বসে আছেন। দরজায় কেউ টোকা দিলেই মনে করেন- এই বুঝি তাঁদের সন্তান ফিরে এলো, এই বুঝি তাঁর স্বামী ফিরে এলো। আসে না বন্ধুরা। এই যে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে আওয়ামী লীগ সরকার। আজকে আওয়ামী লীগের সেদিকে কোনো খেয়াল নাই। তারা কীভাবে ক্ষমতায় টিকে থাকবে, একটার পর একটা বাড়ি বানাবে, তারা কী করে দামি দামি গাড়িতে চড়বে, আর ওই কানাডাতে, মালয়েশিয়াতে তারা সেকেন্ড হোম তৈরি করবে এই অবস্থায় তারা এখন ব্যস্ত রয়েছে।’
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, যে দেশে প্রধান বিচারপতি বলেন দেশে আইনের শাসন নেই, তাহলে আর বলার অপেক্ষা থাকে না দেশের অবস্থা আজ কোথায় চলে গেছে। গোটা দেশ আজ কারাগারে পরিণত হয়েছে।
তিস্তার পানিচুক্তি না হওয়া প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এবার সবাই আশা করেছিল তিস্তায় পানি আসবে কিন্তু নতজানু সরকার কিছুই করতে পারেনি। তিস্তার মতো একই অবস্থা অভিন্ন আরো ৫৪টি নদীর।
লালমনিরহাট জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক উপমন্ত্রী অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে মির্জা ফখরুল আরো বলেন, বিএনপিও নির্বাচন চায়। তবে তা হতে হবে একটি নিরপেক্ষ সরকার এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে।
আওয়ামী লীগকে স্বৈরাচারী ও ফ্যাসিস্ট উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘তারা আমাদের বুকের ওপর জগদ্দল পাথরের মতো বসে আছে। আমরা আন্দোলনের মাধ্যমেই তাদের হটাতে চাই। আমাদের পদ-পদবির জন্য নয়, বাংলাদেশের স্বাধীনতা রক্ষা করার জন্য, গণতন্ত্রের অধিকার ফিরিয়ে আনার জন্য, মা-বোনদের সম্মানের জন্য আওয়ামী লীগ সরকারকে সরিয়ে জনগণের সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।’
মির্জা ফখরুল ইসলাম দাবি করেন, ‘গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার জন্য যে লড়াই আমরা শুরু করেছি, যে সংগ্রাম আমরা শুরু করেছি, বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিকে বদলে দেওয়ার জন্য যে নতুন ধারার সূচনা করেছি, তা সমূলে নির্মূল করে দেওয়ার জন্য কাজ করে যাচ্ছে সরকার।’
সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান মিনু, বিএনপির কেন্দ্রীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলম, মহিলা দলের সভানেত্রী আফরোজা আব্বাস, তাঁতী দলের সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, মহিলা দলের সম্পাদিকা সুলতানা আহম্মদ, মহিলা দলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক হেলেন জেরিন খান, জিয়া পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ডা. মওদুদ হোসেন আলমগীর পাভেল, কেন্দ্রীয় বিএনপির কুটির শিল্পবিষয়ক সম্পাদক মোজাফফর হোসেন, কেন্দ্রীয় সদস্য ব্যারিস্টার হাসান রাজীব প্রধান ও লালমনিরহাট জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হাফিজুর রহমান বাবলা।
বক্তরা বলেন, সম্প্রতি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক কার্যালয়ে তল্লাশির নামে যে আক্রমণ করা হলো সেটা কার্যালয়ের ওপর আক্রমণ নয়, এটা গণতন্ত্রের ওপর আক্রমণ। এটা গণতন্ত্রের জন্য অশনিসংকেত।
সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পুনরায় লালমনিরহাট জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে যথাক্রমে অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলু ও হাফিজুর রহমান বাবলা নির্বাচিত হন।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন